মেহেদী হাসান মিরাজ সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব পাওয়ার খুশি ভাগাভাগি করতে। জানাতে চেয়েছিলেন নিজের স্বপ্নপূরণ, দল পরিচালনায় ভবিষ্যতের কথা। অথচ তাঁকে সংবাদ সম্মেলনের বেশির ভাগ সময় উত্তর দিতে হয়, নাজমুল হোসেন শান্তর কাছ থেকে নেতৃত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়ার নৈতিকতা প্রসঙ্গে।
শান্তর কাছ থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে তাঁকে দেওয়ায় দোষ দেখেন না কেউই। প্রশ্ন উঠেছে শান্তকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে। পেশাদারিত্ব উপেক্ষা করে নেতৃত্বের হাতবদল দলে অস্বস্তি বাড়াবে কিনা জানতে চাওয়া হলে মিরাজ বলেন, তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি বরং আশাবাদী শান্তর কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে।
মিরাজের এই আত্মবিশ্বাসের কারণ– বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নেতৃত্ব বুঝে নেওয়ার আগে দুই বন্ধুর মুখোমুখি বসা। নাজমুল আবেদীন নিজের কার্যালয়ে শান্ত-মিরাজকে ডেকে নেতৃত্বে অনিবার্য পরিবর্তনে সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিসিবির সভাপতির ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে শান্ত নেতৃত্বের পরিবর্তনের বিষয়টি মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার ছিল না বলে জানান বোর্ডের এক কর্মকর্তা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজ চলাকালে বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে টেস্ট-ওয়ানডে নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয় শান্তর। বিসিবির পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয়েছিল দীর্ঘ মেয়াদে নেতৃত্ব দেওয়া হবে। ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকার ব্যাপারে আশ্বাস পেয়েছিলেন তিনি। বিসিবি সভাপতি বুলবুল চাওয়ায় ১০ দিনের ব্যবধানে সে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এসেছে বলে জানান জাতীয় দলসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের অনলাইন সভায় তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক করার পরিকল্পনার কথা জানান বোর্ড সভাপতি। প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে পরিচালকদের মতামত থাকলেও সভাপতি অনড় থাকেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে নাজমুল হাসান পাপনের সময়ে তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক নীতি ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরা, পঁচিশ বছর আগে বুলবুলের কাছ থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত থামাতে। তাতেও সভাপতির মন নরম হয়নি।
এ ব্যাপারে একজন কর্মকর্তার অভিমত হলো, ‘সভাপতি হয়তো কিছু একটি করে দেখাতে চাচ্ছেন। তাই পরিবর্তনটা এভাবে হলো।’ হোয়াটসঅ্যাপে সংযোগ না পাওয়ায় এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বুলবুলের মতামত জানা যায়নি।
নেতৃত্বের হাতবদল যেভাবেই হোক, মিরাজ তাতে খুশি। প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য ওয়ানডে দলের অধিনায়ক করা হয়েছে তাঁকে। এর প্রতিক্রিয়ায় মিরাজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি জানি না, তারা (বোর্ড) কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি যতটুকু জানি বোর্ড সভার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ফাহিম স্যার (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন) ডেকে নিয়ে বলেছেন, ‘তোমাকে আমরা এরকম দায়িত্ব দেওয়ার কথা চিন্তা করছি। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেহেতু সামনে খেলা আছে, ওয়ানডে দলটা ঠিক করতে হবে। আমরা সেভাবে পরিকল্পনা করছি। তখন তিনি আমাকে জানিয়েছেন (অধিনায়কত্বের কথা)।’
এই পরিবর্তনে ড্রেসিং রুমে প্রভাব পড়বে না বলে দাবি মিরাজের, ‘আমার মনে হয়, ড্রেসিং রুমে এরকম কোনো প্রভাব পড়বে না। দিন শেষে সবাই দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলি। শান্ত ও আমার মধ্যে এগুলো কখনোই কাজ করবে না। ও যখন অধিনায়কত্ব করেছে, আমি অনেক সাহায্য করেছি। আশা করি, সেও আমাকে করবে। ওর সঙ্গে আমার এই কথাই হয়েছে।’
শান্তর মতো মিরাজও দীর্ঘ মেয়াদে অধিনায়কত্ব চান, ‘লম্বা সময় (দায়িত্বে) পেলে ভিশন ভালো থাকে। সামনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে। যেহেতু দল হিসেবে আমরা এখন একটু সংগ্রাম করছি, তাই বোর্ড হয়তো ভেবেছে এক বছরে একটা জায়গায় দাঁড় করাই দলকে। এরপর হয়তো পরবর্তী ধাপ দেখে কন্টিনিউ করবে না কী করবে।’ ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ মাথায় রেখে নেতৃত্বে আনা হয়েছে মিরাজকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ন তর
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।