Samakal:
2025-11-03@06:22:40 GMT

কোরবানির চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য

Published: 14th, June 2025 GMT

কোরবানির চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য

২০১৮ সালে কোরবানির ঈদে চামড়া বিক্রি না হওয়ার পাশাপাশি কেনা দামের ধারে-কাছেও দাম না পাওয়ায় রাস্তায়, ডাস্টবিনে, এমনকি নালা-খালে চামড়া ফেলে রেখে গিয়েছিলেন মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারীরা। এরপর থেকে প্রতিবছর কোরবানি পশুর হাজার হাজার চামড়া রাস্তা-ঘাটে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। এবারের কোরবানির ঈদেও নগরীর রাস্তায় পাওয়া যায় ১০ টনের বেশি গরুর চামড়া। এভাবে টানা সাত বছর ধরে চামড়া নিয়ে তুঘলকি কাজ-কারবার চলে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকায় সবাই মনে করেছিলেন, এবার অন্তত চামড়া নিয়ে চলমান নৈরাজ্য কমবে। ফলে লাভের আশায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাদের সেই আশায় এবারও গুড়েবালি। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও শেষমেশ হাজার হাজার চামড়ার ঠাঁই হয় ময়লার ভাগাড়ে। সংগ্রহ করা কোরবানির চামড়া কেউ কেউ লোকসানে বিক্রি করলেও অনেকেই বেচতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে রাস্তায় ফেলে চলে যান। এতে পথে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর আতুরার ডিপো, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদের চৌমুহনী, অক্সিজেনের নয়াহাট এলাকার সড়কে হাজার হাজার চামড়া পড়েছিল। ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষোভে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে কিংবা ডাস্টবিনে রেখে যান চামড়াগুলো। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে ১০ টনেরও বেশি চামড়া। এসব চামড়া ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী তথ্য জানান।
বিভিন্ন পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও মনিটরিং না থাকায় ট্যানারি মালিকরা অলিখিতভাবে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেন আড়তদারদের। নিজেদের লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে আড়তদাররা মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহে নামমাত্র দাম নির্ধারণ করে দেন। কয়েক বছর ধরে এভাবে কোরবানির চামড়া নিয়ে নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে।
চামড়া সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর চামড়ার আকারভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় গরুর চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গড়ে তারা ৪০০ টাকা করে প্রতিটি চামড়া সংগ্রহ করেন। এর ওপর চামড়া পরিবহন ভাড়া, শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য খরচসহ প্রতিটি চামড়ার দাম পড়ে কমবেশি ৫০০ টাকা। কিন্তু আড়তদাররা গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি দাম দিতে রাজি হননি। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হয় মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারীদের। এ ছাড়া ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ। তিনি সমকালকে বলেন, ‘প্রতি পিস চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছি। এভাবে প্রায় ২০০ চামড়া সংগ্রহ করেছি। চামড়ার দামের সঙ্গে শ্রমিকদের বেতন ও পরিবহন ভাড়া যুক্ত করলে প্রতিটি চামড়ার দাম গড়ে ৬০০ টাকার ওপরে পড়েছে। কিন্তু আড়তে বেচতে গিয়ে দেখি ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি দাম মিলছে না। ফলে লাভ তো দূরের কথা বাধ্য হয়ে অর্ধেকেরও বেশি লোকসান দিয়ে আতুরার ডিপোতে একটি আড়তে চামড়া বেচে দিয়েছি।’ 
জেলার বোয়ালখালী থেকে ট্রাকে করে ১৮০টি পশুর চামড়া নিয়ে নগরীতে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ। তিনি জানিয়েছেন, এসব চামড়ার মধ্যে বড়গুলো কেনা দামের অর্ধেকে বিক্রি করতে পারলেও ছোট আকৃতির চামড়াগুলো বিক্রি করতে না পেরে প্রায় ১০০ চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছেন। এভাবে লোকসানে চামড়া বিক্রি এবং বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার মতো কষ্টের কথা সমকালের কাঠে তুলে ধরেন আরও কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো.

মুসলিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে যে পরিমাণে কোরবানি হয় সেই পরিমাণে চামড়া কেনার মতো আড়তদার নেই। তাছাড়া চামড়া সংগ্রহ করার পর লবণ দিতে হয়। তাহলে কিছুদিন রেখে বিক্রি করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তা না করে চামড়া নষ্ট করে ফেলেন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ক রব ন র আড়তদ র নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ

রাজধানীর গাবতলী–মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে বিজিবি মার্কেটে গড়ে ওঠা দ্বীপনগর মাছের আড়ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ জমজমাট থাকে। এই তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে এসব নানা জাতের দেশি-বিদেশি মাছ।

এ আড়তে গরিবের মাছখ্যাত পাঙাশ থেকে শুরু করে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়। নদীর পাশাপাশি সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়। ওমান, চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা মাছ সরাসরি এখানে আসে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রথমে বিজিবি মার্কেটে মাছ বিক্রি শুরু হয়। তবে ২০০৯ সালে এ বাজারে দ্বীপনগর আড়তের যাত্রা শুরু হলেও বাজার জমে ওঠে ২০১৫ সালের পর থেকে। পরে পাঁচটি হিমাগার ও একটি বরফকল নিয়ে এটি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ মৎস্য আড়তে পরিণত হয়, যেখানে ছোট–বড় প্রায় ৪০০ পাইকারি দোকান রয়েছে।

আড়তদার ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, দ্বীপনগর আড়তে জ্যান্ত মাছের পাইকারদের বিনা মূল্যে পানি সরবরাহ করায় তাঁদের প্রত্যেকের প্রায় ৫০০ টাকা করে সাশ্রয় হয়। তার ওপর যাতায়াতের সুবিধা ভালো, ওজনে কেউ মাছ কম দেয় না, চুরিও হয় না এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, এখানে চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশে বেচাকেনা করা যায়। এসব কারণে এটি এরই মধ্যে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় আড়তে পরিণত হয়েছে। ফলে এখানে দিন দিন পাইকার বাড়ছে এবং মোকামও আশপাশে বিস্তৃত হচ্ছে।

দ্বীপনগর আড়তের ‘অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মো. ইনসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার কেজি পাঙাশ বিক্রি হয়, যা কারওয়ান বাজারেও হয় না। সব ধরনের মাছ মিলিয়ে দৈনিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।’

* দ্বীপনগর আড়তে পাঙাশ, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কই, শিং, টাকি, মাগুর, পুঁটি, বাইম, চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি ও চাষের মাছ পাওয়া যায়।
* নদী ও সাগরের বাইলা, চাপিলা, সুরমা, পোয়া, রিঠা, লইট্টা, টুনা প্রভৃতি মাছও বিক্রি হয়।
* প্রতিবেশী ভারত থেকে শুরু করে ওমান, সুদান, জর্ডান, চীন ও জাপান থেকে আমদানি করা মাছ এখানে বিক্রি হয়।

আড়তদার ও পাইকারদের দাবি, এটি দেশে পাঙাশ মাছের সবচেয়ে বড় আড়ত। এখানে দিনে ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক পাঙাশ মাছ আসে। এসব ট্রাকে ৩০ থেকে ৪০টি করে পাঙাশের ড্রাম থাকে। এর একেকটিতে ৪০ কেজি মাছ থাকে। গড়ে ৩৫টি ট্রাকে ৩৫টি করে ড্রাম এবং প্রতি ড্রামে ৪০ কেজি ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, এখানে দৈনিক ৪৯ হাজার কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

বিশেষ করে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, গাবতলী, সাভার, উত্তরা এবং আবদুল্লাহপুর এলাকার পাইকারেরা দ্বীপনগর আড়তে মাছ কিনতে আসেন। অটুট বন্ধন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মনির হোসেন বলেন, কম দামে পাওয়া যায় বলে পাইকারেরা এখানে মাছ কিনতে আসেন। তাঁর নিজস্ব বরফকল রয়েছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বরফের পাটা বিক্রি করেন। তাই বাইরে থেকে বরফ আনতে হয় না।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা মাছ কিনতে দ্বীপনগর আড়তে চলে আসেন। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নিলামের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো আড়ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তাজা ও হিমায়িত মাছের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আনা মাছের বেচাবিক্রি শেষ হয়ে যায়। ৯টার পরপরই সব ব্যস্ততা শেষে ধোয়ামোছার কাজ শুরু হয়ে যায়।

সাভার নবীনগর থেকে আসা পাইকার ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এখান থেকে দৈনিক ১৫০–২০০ কেজি সাগরের মাছ নিয়ে এলাকার বাজারে বিক্রি করেন।

আড়তদারেরা জানান, দেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, টেকেরহাট, খুলনা, রাজশাহী, মোংলা, সাতক্ষীরাসহ সব অঞ্চল থেকেই মিঠাপানি এবং নদী ও সাগরের মাছ আসে দ্বীপনগর আড়তে। ওমান, সুদান, জর্ডান, জাপান, চীন এবং ভারত থেকেও সামুদ্রিক মাছ আনা হয়।

মেসার্স ঢাকা গাবতলী ফিশ আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দৈনিক ৫ টনের মতো মাছ বিক্রি হয়, যার দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো।’ তাঁদের হিমাগারে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২ মাস পর্যন্ত মাছ ঠিক থাকে। প্রয়োজনে তাপমাত্রা আরও কমানো যায় বলে জানান তিনি। তবে আড়তদারদের হিসাবে এসব হিমাগার থেকে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।

৫৫০ টাকা করে বাইম মাছ কেনার পর আদাবর বাজারের একজন পাইকার প্রথম আলোকে জানান, তিনি এই মাছ বিক্রি করবেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। পোয়া মাছ কিনেছেন ৩৩০ টাকা কেজি দরে, বেচবেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। ওই পাইকার আরও জানান, আগে কারওয়ান বাজার থেকে মাছ কিনলেও এখন সুবিধা থাকায় দ্বীপনগরে আসেন। প্রতিদিন পাঙাশ, তেলাপিয়া, রুই মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ থেকে ৭০ কেজি মাছ কেনেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামুদ্রিক মাছে ভরপুর আড়ত, দাম কেমন
  • মেঘনার পাড়ে ‘আড়াই ঘণ্টার হাট’, দৈনিক বেচাকেনা ২৫-২৬ লাখ টাকার টাটকা মাছ
  • দেশে পাঙাশের বৃহত্তম আড়ত দ্বীপনগর, পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি অনেক মাছ