জামালপুর শহরের দাপুনিয়া এলাকায় সাতটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এলাকার কোনো দোকানদার পণ্য বিক্রি করলে কিংবা কোনো প্রতিবেশী কথা বললে গুনতে হবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। মাইকিং করে এমন ঘোষণা দিয়ে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল পরিবারগুলোকে একঘরে করে রেখেছে। একঘরে হওয়া একটি পরিবার প্রতিকার চেয়ে গতকাল শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।

লিখিত অভিযোগ ও পরিবারগুলো সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার শহরের দাপুনিয়া এলাকার বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দেওয়ার বিষয় নিয়ে মো.

মন্টু ও ইলেকট্রিশিয়ান মো. মুনছুরের মধ্যে প্রথমে ঝগড়া হয়। এরপর শুক্রবার এলাকার মসজিদে দুজনে নামাজ পড়তে যান। নামাজের পর আবারও মন্টু ও মুনছুরের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ সময় মুনছুরের ছেলে মন্টুকে ঘুষি মারেন। এ ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতেই এলাকায় সালিস বসে। সালিসে স্থানীয় শামীম আহমেদ, আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন মুনছুরকে জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মুনছুরদের সাতটি পরিবারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই রাতেই এলাকায় মাইকিং করে সাতটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সাত পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে প্রতিবেশী কেউ ওঠবস করলে তাঁদেরও একঘরে করে রাখার হুমকি দেওয়া হয়। ওই সাত পরিবারের কাউকে মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখা গেলে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।

সাত পরিবারের মধ্যে এক পরিবারের মো. ইসমাইল থানায় ওই লিখিত অভিযোগ দেন। তাঁর ছেলে মৌকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাতটি পরিবার আমরা একই গোষ্ঠীর। মুনছুর আমার বাবার চাচাতো ভাই। তাঁর (মুনছুর) সঙ্গে মন্টুর সামান্য ঝগড়া হয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের সাত পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধু একই গোষ্ঠীর হওয়ার কারণে আমাদের একঘরে করা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, একঘরে করার রাতে লোকজন একত্র হয়ে বাড়িতে ঢিল ছুড়ে মারেন। কোনো দোকানদার তাদের কাছে কিছু বিক্রি করছেন না।

সালিসে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন শামীম আহমেদ। তিনি দাবি বলেন, একঘরে করার সিদ্ধান্তের সময় তিনি ছিলেন না। এটা সবাই জানেন। তারপরও থানায় অভিযোগ দেওয়ার সময় তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি পরিবারগুলো সম্পর্কে বলেন, সমাজের মানুষের সঙ্গে তাঁদের ওঠা–বসা ভালো না। সমাজের সবার বক্তব্য, তাঁরা খারাপ লোক। তাঁদের সঙ্গে এলাকার মানুষের বনাবনি নেই। তাঁরা দু-এক দিন পরপর ঘটনা ঘটায়। সেটার প্রশ্রয় না দেওয়ায় সমাজের মানুষ এখন তাঁদের কাছে খারাপ। মন্টু ও মুনছুরের বিষয় নিয়ে সমাজে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ বিচার করেছে। কিন্তু থানার অভিযোগে শুধু তাঁর পরিবারের পাঁচজনের নাম দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী মমিন শেখ অভিযোগ করেন, ‘আমাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। আমরা বাড়ির বাহিরে গেলেই ওরা লাঠি নিয়ে আসে। প্রতিটি দোকানে বলেছে, আমাদের কাছে কিছু যাতে বিক্রি না করে। আমাদের শিশুরা দোকানে গিয়েছিল। কিন্তু দোকান থেকে কোনো পণ্য বিক্রি করেনি। আমরা বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আনিসুর আশেকীন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। পরে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। উভয় পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। আজ তাঁদের বসে বিষয়টি সমাধান করার কথা আছে। বিষয়টির সমাধান না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ত পর ব র র আম দ র এল ক য় এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে সাত পরিবারকে ‘একঘরে’, মাইকিং করে পণ্য না বেচতে হুঁশিয়ারি

জামালপুর শহরের দাপুনিয়া এলাকায় সাতটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এলাকার কোনো দোকানদার পণ্য বিক্রি করলে কিংবা কোনো প্রতিবেশী কথা বললে গুনতে হবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। মাইকিং করে এমন ঘোষণা দিয়ে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল পরিবারগুলোকে একঘরে করে রেখেছে। একঘরে হওয়া একটি পরিবার প্রতিকার চেয়ে গতকাল শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।

লিখিত অভিযোগ ও পরিবারগুলো সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার শহরের দাপুনিয়া এলাকার বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দেওয়ার বিষয় নিয়ে মো. মন্টু ও ইলেকট্রিশিয়ান মো. মুনছুরের মধ্যে প্রথমে ঝগড়া হয়। এরপর শুক্রবার এলাকার মসজিদে দুজনে নামাজ পড়তে যান। নামাজের পর আবারও মন্টু ও মুনছুরের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ সময় মুনছুরের ছেলে মন্টুকে ঘুষি মারেন। এ ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতেই এলাকায় সালিস বসে। সালিসে স্থানীয় শামীম আহমেদ, আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন মুনছুরকে জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মুনছুরদের সাতটি পরিবারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই রাতেই এলাকায় মাইকিং করে সাতটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সাত পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে প্রতিবেশী কেউ ওঠবস করলে তাঁদেরও একঘরে করে রাখার হুমকি দেওয়া হয়। ওই সাত পরিবারের কাউকে মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখা গেলে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।

সাত পরিবারের মধ্যে এক পরিবারের মো. ইসমাইল থানায় ওই লিখিত অভিযোগ দেন। তাঁর ছেলে মৌকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাতটি পরিবার আমরা একই গোষ্ঠীর। মুনছুর আমার বাবার চাচাতো ভাই। তাঁর (মুনছুর) সঙ্গে মন্টুর সামান্য ঝগড়া হয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের সাত পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধু একই গোষ্ঠীর হওয়ার কারণে আমাদের একঘরে করা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, একঘরে করার রাতে লোকজন একত্র হয়ে বাড়িতে ঢিল ছুড়ে মারেন। কোনো দোকানদার তাদের কাছে কিছু বিক্রি করছেন না।

সালিসে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন শামীম আহমেদ। তিনি দাবি বলেন, একঘরে করার সিদ্ধান্তের সময় তিনি ছিলেন না। এটা সবাই জানেন। তারপরও থানায় অভিযোগ দেওয়ার সময় তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি পরিবারগুলো সম্পর্কে বলেন, সমাজের মানুষের সঙ্গে তাঁদের ওঠা–বসা ভালো না। সমাজের সবার বক্তব্য, তাঁরা খারাপ লোক। তাঁদের সঙ্গে এলাকার মানুষের বনাবনি নেই। তাঁরা দু-এক দিন পরপর ঘটনা ঘটায়। সেটার প্রশ্রয় না দেওয়ায় সমাজের মানুষ এখন তাঁদের কাছে খারাপ। মন্টু ও মুনছুরের বিষয় নিয়ে সমাজে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ বিচার করেছে। কিন্তু থানার অভিযোগে শুধু তাঁর পরিবারের পাঁচজনের নাম দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী মমিন শেখ অভিযোগ করেন, ‘আমাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। আমরা বাড়ির বাহিরে গেলেই ওরা লাঠি নিয়ে আসে। প্রতিটি দোকানে বলেছে, আমাদের কাছে কিছু যাতে বিক্রি না করে। আমাদের শিশুরা দোকানে গিয়েছিল। কিন্তু দোকান থেকে কোনো পণ্য বিক্রি করেনি। আমরা বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আনিসুর আশেকীন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। পরে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। উভয় পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। আজ তাঁদের বসে বিষয়টি সমাধান করার কথা আছে। বিষয়টির সমাধান না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ