২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
Published: 16th, June 2025 GMT
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো.
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য র পদ প এল ক য় ক দল র এল ক র ব যবস গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িতদের ছাড় নয়: রিজভী
বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্মে জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, “সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। যদি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্মে করে তাদের কোন ছাড় নয়। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। একটি অসত্য সংবাদ রাষ্ট্র ও সমাজের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।”
শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রিজভী।
কোনো কিছু ঘটলেই বিএনপির ওপর দায় চাপানো যেন কারো কারো অভ্যাসে পরিনণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “সমাজবিরোধী কাজে যেই জড়িত হবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং সরকারের মাঝে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “রাউজানে কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। অথচ, কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হলো এই অস্ত্রধারীরা বিএনপির লোক! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো লেখা দুঃখজনক। এই রাউজানে নানান অভিযোগে অনেক সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
বিএনপি ১৫ বছরের অত্যাচার-অবিচার থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে। জুলাই-আগস্টে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। মানুষ হয়ত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু এখনও আত আতঙ্কমুক্ত নয় বলেও জানান রিজভী।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে কৃত্রিমভাবে সংকট সৃষ্টি করছে যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববাজারে যখন গমের দাম কমেছে তখন বাংলাদেশে এর দাম বেড়েছে। জনগণকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্র এতে ব্যর্থ হলে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে সামাজিক অস্থিরতা।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা