টানা ছয় দিন ডেঙ্গুতে ভুগে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শারমিন (২১)। গতকাল রোববার তিনি ছাড়া পেয়েছেন। শারমিন জানান, স্যালাইন থেকে শুরু করে ওষুধ যা লেগেছে, তার প্রায় সবই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

বরগুনা সদর হাসপাতালে ৫০টি শয্যা ডেঙ্গুর জন্য বরাদ্দ। গতকাল এখানে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯২।

এ মাসে (জুন) প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন একজন।

চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ডেঙ্গু বেড়েছে তার আগের মাসের চেয়ে দ্বিগুণ হারে। চলতি জুন মাসের প্রথম ১৫ দিন যত রোগী মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তা আগের মাসের আক্রান্তের প্রায় সমান।

গত কয়েক মাসের দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি কি এটাই ইঙ্গিত করে যে এবারও ডেঙ্গু ব্যাপক হারে বাড়বে?

ঘন ঘন বৃষ্টি এবং বাতাসের আর্দ্রতার আধিক্য ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলছে। এবার লক্ষণীয় দিকটি হলো, রাজধানীর চেয়ে দেশের অন্যত্র ডেঙ্গু বিস্তারের পরিমাণ অনেক বেশি। রাজধানীতে মশা নিধনে কিছুটা হলেও একটা ব্যবস্থা আছে; কিন্তু ঢাকার বাইরে তা–ও নেই। আবার চিকিৎসা পরিকাঠামো নেই পর্যাপ্ত। আর এসবই এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে শঙ্কাজনক করে তুলেছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা.

মুশতাক হোসেন। তিনি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে এখনই জোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

দেশে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৮। মার্চ মাস থেকে ডেঙ্গু বাড়তে থাকে দেশে। ওই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৩৬ জন। পরের মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০১। মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা হয় ১ হাজার ৭৭৩। এ মাসে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বাড়ে সংখ্যা। চলতি জুন মাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৪৩।

ডেঙ্গু মশা

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ