জাতিসংঘের পারমাণবিক শক্তি পর্যবেক্ষণ সংস্থার (আইএইএ) প্রধান বলেছেন, ইসরায়েলের বিমান হামলার পর নাতাঞ্জে ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক– উভয় দূষণের শঙ্কা রয়েছে। রাফায়েল গ্রোসি বলেন, প্রধান উদ্বেগ হলো ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড নামক গ্যাস, যা সমৃদ্ধকরণের সময় ফ্লোরিন মিশ্রিত হয়ে সৃষ্টি হয়। এটি উদ্বায়ী। দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ত্বক পুড়িয়ে ফেলতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এ গ্যাস শরীরের ভেতরে গেলে তা হতে পারে বড় ক্ষতির কারণ।
গতকাল সোমবার আলজাজিরা এ খবর জানায়। আইএইএর প্রধান ওই স্থাপনা পরিদর্শনের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এমন এক সময়ে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করলেন, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা জোরালো হচ্ছে। একে অন্যে সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যে পরিণত করছে।
ইসরায়েলের ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান। রোববার রাতে এক দফা হামলা হয়। সোমবার ভোরে আরেক দফা হামলা ছিল এ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তেল আবিব, জেরুজালেম ও বন্দরনগরী হাইফার দিকে ছুটে যায়। এতে কমপক্ষে আটজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। অনেক আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, তাদের হামলায় ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের গোয়েন্দা শাখার প্রধানসহ চার জেনারেল নিহত হয়েছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় তেহরানে একাধিক বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পশ্চিম তেহরানে সামরিক বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। সরাসরি সম্প্রচারের সময় হামলার শিকার হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবন। হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। টেলিভিশন ভবনের বাইরে থেকে এক সাংবাদিক বলেন, তিনি জানেন না ভেতরে তাঁর কতজন সহকর্মী অবস্থান করছেন। তেহরানে
আইআরআইবি ভবনে হামলাকে ‘নোংরা যুদ্ধাপরাধ’ বলে বর্ণনা করেছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলকে ‘সত্যের সবচেয়ে বড় শত্রু’ বলেও সম্বোধন করা হয়।
এর আগে রোববার রাত ও সোমবার ভোরে ইরানের হামলা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের জরুরি সেবা দপ্তর জানায়, হাইফায় নিখোঁজদের সন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। সেখানে অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। বন্দরের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ভিডিও ফুটেজে তেল আবিবের আকাশে বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে জেরুজালেমেও। গতকাল ইসরায়েলে হামলা প্রসঙ্গে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, তাঁর হামলা ছিল সমানুপাতিক ও প্রতিরক্ষামূলক। ইরানের গণমাধ্যমের দাবি, বিমানবাহিনী তাবরিজে ইসরায়েলের আরেকটি এফ-৩৬ ভূপাতিত করেছে।
তেল আবিবের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মার্কিন দূতাবাসের কাছাকাছি একটি হোটেল ও বাড়িঘরের কাচ ভেঙে পড়ে। ইসরায়েলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি জানান, তাদের দূতাবাস ভবনের একাংশ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হননি। দূতাবাস আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তেল আবিব বলছে, ইরান এ পর্যন্ত ৩৫০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উদ্দেশে ছুড়েছে। প্রতিবার ৩০টি থেকে ৬০টি করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
ইরানের হামলার জেরে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজনকে বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যেতে দেখা যায়। চারদিকে লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গণমাধ্যমে এক বাসিন্দার বর্ণনায় এ চিত্র ফুটে উঠেছে। স্থানীয় সময় ভোর ৪টায় সাইরেন বাজার আগ পর্যন্ত তেল আবিবের বাসিন্দা গাইদো টেলিবৌন নিজ বাসায়ই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সাইরেন বাজলে আমরা বের হয়ে সড়ক পেরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। যাওয়ার এক মিনিটের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের দরজা (বিস্ফোরণের জেরে) ভেঙে যায়। এটি খুব ভয়ানক পরিস্থিতি ছিল। এভাবে কি দীর্ঘদিন চলতে থাকবে? জানি না। তবে আশা করি, পরিস্থিতি বদলে যাক।’
তেল আবিবের কাছে একটি জনপ্রিয় বাজার শুক হা কারমেলের কাছে ভোরে ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের বহু ধাপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে হামলা চালাতে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। তবে কেমন সেই নতুন পদ্ধতি– তার ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। এ নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেনি ইসরায়েল। এ অবস্থায় ‘তেহরানের বাসিন্দাদের মূল্য দিতে হবে’ বলে সতর্ক করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
ইরানের গোয়েন্দাপ্রধানকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গতকাল সোমবার দাবি করে, তাদের হামলায় ইরানের চার জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোহাম্মাদ কাজেমি আছেন। পাশাপাশি ইরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করে ইসরায়েল বলেছে, তারা ভূমি থেকে ভূমিতে ছোড়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত রোববার রাত ও গতকাল সোমবার ভোরে ইসরায়েলের উদ্দেশে দুই দফায় শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব ও হাইফায় আঘাত হানে। চার দিনের লড়াইয়ে ইসরায়েলের ২৪ জন ও ইরানের ২২৮ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, রোববার রাতে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কারমানশাহ প্রদেশের ফারাবি হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, তারা তেহরানে কুদস ফোর্সের সদরদপ্তরে হামলা চালিয়েছে। হামলা হয়েছে ইরানের ফোর্দু পরমাণু কেন্দ্রেও। বিবিসি জানায়, হামলা হয়েছে কেরমানশাহ শহরের ফরাবি হাসপাতালেও। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
ঐক্যের ডাক পেজেশকিয়ানের
জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। সোমবার তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘যে কোনো বিভেদ এখন একপাশে রেখে গণহত্যামূলক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ থাকতে হবে।’
পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হচ্ছে ইরান
ইরান জানিয়েছে, তারা তাদের পার্লামেন্টে এমন একটি বিল তুলতে যাচ্ছে, যা তাদের নিউক্লিয়ার নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি) থেকে বের হয়ে আসার অনুমোদন দেবে। এটি এমন একটি চুক্তি, যা কোনো দেশকে পরমাণু অস্ত্র বানানো থেকে বিরত রাখে। তবে ইরান বলেছে, তারা কোনো পরমাণু অস্ত্র বানাবে না। বিলটি পাস হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। ধারণা করা হয়, ইসরায়েলের কাছে পরমাণু
অস্ত্র আছে, যদিও তারা এটা কখনও নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি। এনপিটি চুক্তিতে কখনও সই করেনি ইসরায়েল।
১৯৭৯ সালে ইসলামিক অভ্যুত্থানের পর গত সপ্তাহে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সংকটে পড়ে ইরান। গোয়েন্দা সহযোগিতায় ইরানে ব্যাপক হামলা চালিয়ে শীর্ষ জেনারেলদের হত্যা করে ইসরায়েল। পাশাপাশি তারা দেশটির পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এ পরিস্থিতিতে উত্তেজনা কমার কোনো আভাস যখন মিলছে না, তখন কানাডায় গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে জি৭ দেশগুলোর সম্মেলন। এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন। নির্বাচনী প্রচারণায় যুদ্ধ বন্ধের বার্তা দিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেও ট্রাম্পের মেয়াদে নতুন এ সংঘাতের সূত্রপাত হলো। সম্মেলনে যোগ দিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন প্রয়োজন।
সপরিবারে বাঙ্কারে আলি খামেনি
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সপরিবারে উত্তর তেহরানের লাভিজানে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল সোমবার ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানায়, তাঁর সঙ্গে ছেলে মোজতবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। সূত্র আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চালানো দুটি অভিযান– ‘ট্রু প্রমিজ-১’ ও ‘ট্রু প্রমিজ-২’ চলাকালেও খামেনির পরিবার সেখানে ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের দিকে মার্কিন রণতরী
চলমান উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ দক্ষিণ চীন সাগর ছেড়ে পশ্চিম দিকে রওনা করেছে। জাহাজের অবস্থান শনাক্তের ওয়েবসাইট ম্যারিন ট্র্যাফিকের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, গতকাল সোমবার রণতরীটিকে পশ্চিমমুখী হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগোতে দেখা গেছে। ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কিনা– এমন উদ্বেগের মধ্যে এ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
হামলার মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখ্যান ইরানের
ইসরায়েলের হামলার মধ্যে কোনো যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেবে না ইরান। দেশটির এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, কাতার ও ওমানের মধ্যস্থতাকারীদের ইতোমধ্যে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে তেহরান। দুই পক্ষ অনড় অবস্থানে থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরান কাতার ও ওমানের মধ্যস্থতাকারীদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ইসরায়েলের পূর্ববর্তী হামলার জবাব সম্পূর্ণ না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না।
মোসাদ এজেন্টের মৃত্যুদণ্ড, দু’জন গ্রেপ্তার
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক এজেন্টের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সকালে এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। প্রেস টিভি অনলাইন জানায়, এসমাইল ফেকরি নামের ওই এজেন্ট ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে আইআরজিসির এক কর্নেল হত্যায় গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের অভিযোগ ছিল। গতকাল আরও দু’জন মোসাদ এজেন্ট গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে ইরান। তাদের কাছে বিস্ফোরক পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।
ইসরায়েল বিজয় অর্জনের পথে, দাবি নেতানিয়াহুর
ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষে ইসরায়েল ‘বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে’ বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল সোমবার ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, ‘আমরা বিজয় অর্জনের পথে।’ এর আগে তেহরানের আকাশের ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন’ করার দাবি করেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কর্মকর্তারা। সেসঙ্গে তারা ইরানের মিসাইল লঞ্চার বা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্রের ‘এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংসের’ও দাবি করেন। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা দুটি লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি– পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূল করা।’
পরে নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে হত্যা করলে সংঘাতে সমাপ্তি ঘটবে। এবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি খামেনিকে লক্ষ্যে পরিণত করার কথাও উড়িয়ে দেননি।
ইরানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করল পাকিস্তান
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত থাকায় আপাতত ইরানের সঙ্গে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল সোমবার ইরানের সীমান্তঘেঁষা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাদির বখশ পিরকানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ইরানের সঙ্গে তাদের প্রদেশের পাঁচটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের সবগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ থাকবে।
‘আয়রন ডোমে’ ভরসা পাচ্ছেন না ইসরায়েলিরা
বিবিসি জানায়, ইসরায়েলি নাগরিকদের বড় অংশই নিজেদের অত্যাধুনিক ‘আয়রন ডোম’ বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এতদিন ‘দুর্ভেদ্য’ বলে মনে করতে। কিন্তু গত তিন দিনের ইরানি হামলায়, তাদের সেই অনুভূতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, হামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আগের মতো আস্থা রাখতে পারছেন না। যদিও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের বহুস্তরযুক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে ব্যবস্থাটি যে পুরোপুরি ‘নিখুঁত নয়’, সেটি স্বীকার করছেন কর্মকর্তারা।
ইরানের পাশে কেউ নেই, বললেন চ্যাথাম হাউস বিশ্লেষক
ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ইরান এককভাবেই লড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডনভিত্তিক চ্যাথাম হাউস থিঙ্কট্যাঙ্কের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক লিনা খাতিব। তিনি বলেন, ‘ইরান এখন একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পাশে কোনো আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক মিত্র নেই।’ আলজাজিরা জানায়, খাতিবের মতে, রাশিয়া ইরানকে সামরিকভাবে সাহায্য করবে না। গত বছর ইসরায়েল রাশিয়া-সরবরাহকৃত আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস করলেও মস্কো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সরানো হলেও রাশিয়া সক্রিয় ছিল না।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র স র ইসর য় ল র র বব র র ত ন ইসর য় ল ও ইসর য় ল কর মকর ত ত হয় ছ ন পর স থ ত ব যবস থ পর ব র র বর ত মন ত র ত বন ধ লক ষ য ন র পর ইসর য অবস থ পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য আছে: আমীর খসরু
রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে একটা জাতীয় ঐকমত্য আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবারই মতামত একটা। এই জায়গায় দ্বিমত কোথাও আছে বলে আমরা মনে করি না। এখানে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। বিভিন্ন কারণে আমরা এই জায়গাতে এসেছি এবং জাতিও এখানে ঐকমত্য পোষণ করছে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস বৈঠক করেছেন। বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এই বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর শেষ হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু বলেন, ‘দিনক্ষণ তো নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। এটা আর সরকার বলতে পারবে না, আমরাও বলতে পারবো না। আমরা সেটার অপেক্ষা করব। নিশ্চিয় কোনো একটা সময়ে আগামীদিনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে থেকে একটা দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। এটার জন্য তো আমাদের ধৈর্য থাকতে হবে। একদম অস্থিরতার মধ্যে সার্বক্ষণিক থাকলে তো চলবে না। জাতিকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে, একটু সহনশীল হতে হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে আস্থারও ব্যাপার আছে। আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, একটু ধৈর্য ধরুন। আমরা সঠিক পথেই যাব। জাতি অবশ্যই একটা গণতান্ত্রিক পথে চলছে। সেটা আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সমাধান করতে পারব। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। অতটুকু আস্থা আমাদের সবাইকে রাখতে হবে।’
লন্ডন বৈঠক প্রসঙ্গে জামায়াতের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো দলের মতামতের বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কিন্তু একটু আগে আমি যেটা বলেছি, সকলের মতামত দেওয়ার অধিকার থাকতে হবে। কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে মতৈক্য না হলেও, মতভেদ থাকলেও অপরের বক্তব্যের প্রতি আমাকে সম্মান থাকতে হবে।’
দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘তাদের মনোভাব হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার হলে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সুবিধা হবে। তারা সেটার অপেক্ষায় আছে।’
অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এ ব্যাপারে (নির্বাচন) সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কথা হবে। এটা তো খুব স্বাভাবিক। রুটিন ব্যাপার। আমরা একটু ধৈর্য ধরি। লন্ডনে যে বৈঠক হয়েছে, জাতির জন্য বড় ধরনের একটা ইতিবাচক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আমরা কোনো ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ করে সামনের দিকে চলের পথকে বিঘ্নিত করা ঠিক হবে না। সবকিছুর সমাধান আগামী দিনে হবে। সময মতো দেশে নির্বাচন হবে।’
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্কের মধ্যে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আগামীদিনে নির্বাচিত সরকার আসলে ব্রাজিলের সঙ্গে কী কী কাজ করার সম্ভাবনা আছে, এগুলো দীর্ঘ আলোচনা করেছি। এখানে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আমাদের কৃষি। আপনারা জানেন কৃষিতে ব্রাজিল অনেকটা এগিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি ইন্টারেস্টিং আলোচনা হয়েছে, সেটি হচ্ছে স্পোর্টস। ব্রাজিল ফুটবল, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রাজিলের সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তারা খুবই ইন্টারেস্টেড। বিভিন্ন বিষয়সহ স্পোর্টস নিয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়।’