ইসরায়েল পারমাণবিক স্থাপনা ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর জবাবে ইরান দেশটিতে কয়েক শ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

ইসরায়েল কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারলেও বেশ কয়েকটি তার প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করে আঘাত হানে। যেসব স্থানে আঘাত হেনেছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজধানী তেল আবিবসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ইরানের ঠিক কতগুলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ ও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার।

এমন ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কাজ করে ও ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে এগুলো কীভাবেই-বা ব্যবহৃত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখেছে আল–জাজিরা:

আরও পড়ুনইরান ও ইসরায়েল: আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় কে এগিয়ে১৩ জুন ২০২৫

কীভাবে কাজ করে

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন দূরপাল্লার অস্ত্র, যা প্রচলিত বা পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে বক্র বা ধনুকের মতো পথে চলে এটি।

শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপণের পর এ ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর, এমনকি মহাকাশে প্রবেশ করে। ছুটে চলে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুতগতিতে। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এ ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বনির্ধারিত পথ ধরে আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপণের পর এ ক্ষেপণাস্ত্র বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর, এমনকি মহাকাশে প্রবেশ করে। ছুটে চলে অবিশ্বাস্যরকম দ্রুতগতিতে। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র পূর্বনির্ধারিত পথ ধরে আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে ১০ হাজার কিমি

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক শ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ১০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

আরও পড়ুনইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানের আর কী উপায় আছে১৪ ঘণ্টা আগে

পাল্লা অনুযায়ী এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়—

যুদ্ধক্ষেত্র পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (বিআরবিএম): ২০০ কিলোমিটারের কম (১২৪ মাইল)।

স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসআরবিএম): ১ হাজার কিলোমিটারের কম (৬২১ মাইল)।

মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এমআরবিএম/আইআরবিএম): ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (৬২১ থেকে ২ হাজার ১৭৫ মাইল)।

দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল (এলআরবিএম): ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার (২ হাজার ১৭৫ থেকে ৩ হাজার ৪১৮ মাইল)।

আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম): ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটারের বেশি (৩ হাজার ৪১৮ মাইল)।

একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোবাইল লঞ্চার থেকে সাগরের দিকে ছোড়া হচ্ছে। ২০২০ সালের ১৮ জুন, ইরানি সেনাবাহিনী এ ছবি সরবরাহ করে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র ৫০০ ইসর য় ল র পর এ

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন