Prothomalo:
2025-08-01@20:29:29 GMT

নবী ইবরাহিম (আ.) ও চারটি পাখি

Published: 17th, June 2025 GMT

অনেক সময় এমন হয়, আমরা একটা বিষয় বিশ্বাস করি, তারপর সেই বিশ্বাসকে পাকাপোক্ত করতে অনেক পড়াশোনা করি, নিজ চোখে দেখার চেষ্টা করি, ক্ষেত্রবিশেষ পরীক্ষা–নিরীক্ষাও করে থাকি।

বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে আমরা যত বেশি আলোচনা করি, বিশ্বাস তত শক্তিশালী হয়। এ কারণেই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তুমি আলোচনা করতে থাকো, কারণ এ আলোচনা ইমানদারদের উপকারে আসবে।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৫)

বিজ্ঞানীরা অনেক সময় পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত কোনো বিষয়কে সত্য প্রমাণ করেন। মুসলমান হিসেবে তো আমরা বিজ্ঞানীদের প্রমাণ ছাড়া পবিত্র কোরআনের প্রতিটি হরফ বিশ্বাস করি, তবু তাঁদের তত্ত্ব আমাদের মনকে প্রশান্ত করে, বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

এ কারণে আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করা ভালো, এতে এলেম বৃদ্ধি পায় এবং ইমানে নতুনত্ব আসে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার এমন একটি ঘটনা এনেছেন:

একদিন ইবরাহিম (আ.

) আল্লাহর কাছে আরজ করেন, ‘হে আমার রব, আপনি কীভাবে মৃতদের জীবিত করেন?’ আল্লাহ বললেন, ‘তুমি কি বিশ্বাস করোনি?’আরও পড়ুনএক বৃদ্ধ নবী যেভাবে বাবা হলেন০৪ জুন ২০২৫

একদিন হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে আরজ করেন, ‘হে আমার রব, আপনি কীভাবে মৃতদের জীবিত করেন?’

আল্লাহ বললেন, ‘তুমি কি বিশ্বাস করোনি?’

হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, ‘অবশ্যই বিশ্বাস করি। কিন্তু আমার মনের প্রশান্তির জন্য দেখতে চাই।’

আল্লাহ বললেন, ‘তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে পোষ মানাও। এরপর (পাখিগুলো জবাই করে অনেকগুলো টুকরা বানিয়ে) প্রতিটি পাহাড়ে তার টুকরা রেখে আসো। তারপর সেগুলোকে ডাক দাও, সেগুলো তোমার কাছে দৌড়ে আসবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬০)

ইবরাহিম (আ.) ঠিক তা–ই করলেন এবং তিনি স্বচক্ষে মৃতকে জীবিত হতে দেখলেন।

বলো, এটাই আমার পথ। আমি জেনে–বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে, তারাও।সুরা ইউসুফ, আয়াত: ১০৮

পবিত্র কোরআনের এ কাহিনি থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই:

১. পবিত্র কোরআন আমাদের ‘অন্ধের মতো বিশ্বাস’ করতে বলে না। হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর ক্ষমতায় পূর্ণ বিশ্বাস রাখার পরেও প্রশ্ন করেছেন, স্বচক্ষে দেখতে চেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর বিশ্বাস ‘চাক্ষুষ’ হয়ে উঠেছে।

পবিত্র কোরআনের আরেক জায়গায় হজরত ইউসুফ (আ.)–এর কাহিনি বলতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,‘ বলো, এটাই আমার পথ। আমি জেনে–বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে, তারাও (একইভাবে দাওয়াত দেয়)। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ১০৮)

আরও পড়ুননবী প্রেমের প্রতিদান কী২৭ এপ্রিল ২০২৫

২. বিশ্বাস করাটাই শেষ কথা নয়; বরং বিশ্বাসকে পাকাপোক্তকরণে সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে লোক সব, আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যার মধ্যে তোমাদেরই কথা আছে, তারপরও কি তোমরা বুদ্ধির প্রয়োগ করবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০)

এরই সূত্র ধরে আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘ধর্ম চায়, তাৎক্ষণিক বিশ্বাস। আর দর্শন চায়, সত্যকে উপলব্ধির জন্য তাকে আলাদা আলাদা ভাগ করে ধীরে–সুস্থে পর্যবেক্ষণ করতে। দুটি বিষয়ই প্রতিনিয়ত নতুন শক্তির প্রয়োজনে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।’ (ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন, আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল, প্রকাশনী: প্রথমা, পৃ. ২২)

এর মানে জাগতিক জ্ঞান অর্থাৎ দর্শন, শিল্পসাহিত্য ও বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমেও আমরা আমাদের ইমান মজবুত করতে পারি।

ধর্ম চায়, তাৎক্ষণিক বিশ্বাস। আর দর্শন চায়, সত্যকে উপলব্ধির জন্য তাকে আলাদা আলাদা ভাগ করে ধীরে–সুস্থে পর্যবেক্ষণ করতে। দুটি বিষয়ই প্রতিনিয়ত নতুন শক্তির প্রয়োজনে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।আল্লামা ইকবাল, ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন

৩. ইমান হলো বিশ্বাস, কিন্তু হৃদয়ের প্রশান্তি এর চেয়ে আলাদা। ইমান যদি হৃদয়ে প্রশান্তি না আনে, তবে তা দোদুল্যমান থাকে, মজবুত হয় না। তাই ইমানদার ব্যক্তির উচিত তার বিশ্বাস কীভাবে প্রশান্তিদায়ক হয়, তা নিয়ে চিন্তা–ফিকির করা।

এর মানে, পবিত্র কোরআনের প্রতিটি বাণী নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, গবেষণা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি কোরআন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে না?’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৮২)

৪. শিক্ষার জন্য সময় লাগে, ধাপে ধাপে সামনে এগোতে হয়। হজরত ইবরাহিম (আ.)–কে আল্লাহ প্রথমে পাখিকে পোষ মানাতে বলেন, বন্ধুত্ব করতে বলেন, এরপর জবাই করে টুকরা টুকরা করে বিভিন্ন পাহাড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আসতে বলেন।

প্রতিটি কাজই পরিশ্রম ও সময়সাপেক্ষ। ইবরাহিম (আ.) এত সব মেহনত করার পর যখন পাখিদের ডাক দেন, তখন তাঁর কাঙ্ক্ষিত ফল পান।

আরও পড়ুননবী সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া১৪ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হজরত ইবর হ ম ব শ ব স কর ত ইবর হ ম র জন য আম দ র বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

দোয়ার ফজিলত ও আদব

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)

‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)

নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)

দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দোয়ার ফজিলত ও আদব