রৌমারীতে অবসরকালীন ভাতার ভুল কাগজে স্বাক্ষর না দেওয়ায় উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইদুজ্জামানকে মারধর করা হয়েছে। রৌমারী সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের ভেতরে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার রাজা মিয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স রৌমারী সদর ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার আতোয়ারা খাতুনের স্বামী কাদের মোল্লা একজন জামায়াত নেতা। মঙ্গলবার দুপুরে জামায়াতের নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর স্ত্রীর অবসরকালীন ভাতার কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে যান। আলোচনার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইদুজ্জামানকে মারধর করেন তারা। এ সময় ওই কর্মকর্তাকে রক্ষা করতে গিয়ে মারধরের শিকার হন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার রাজা মিয়া।

ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হায়দার আলী, সাবেক আমির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, মাওলানা শহীদ মাসুদ, আনোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার রাজা মিয়া বলেন, ‘কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার শার্টের কলার ধরে মারধর করেন। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারধর করেন।’

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইদুজ্জামানের ভাষ্য, সিনিয়র স্টাফ নার্স আতোয়ারা খাতুনের অবসরের ইনক্রিমেন্টের বিলের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁর কিছু কাগজপত্রে ভুল থাকায় বিলে স্বাক্ষর করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘জানতে পারলাম যাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, তারা জামায়াতের নেতাকর্মী। বিলে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য চাপ দিলে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে মারধর শুরু করেন তারা।’
অভিযুক্ত রৌমারী সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা জামায়াতের আমির হায়দার আলী সাংবাদিকদের জানান, ওই নার্সের স্বামী তাদের দলের একজন কর্মী। তাঁর স্ত্রীকে বিল প্রদান না করে হয়রানি করছিলেন ওই কর্মকর্তা। এ জন্য দলের কয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে যান। এতে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়।

কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। তবে খোঁজখবর নিয়ে দেখব, কী ঘটনা ঘটেছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স র ন ত কর ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ