মাছ-মাংসের স্বাদ বাড়াতে চান? জেনে নিন ম্যারিনেট পদ্ধতি
Published: 18th, June 2025 GMT
একইভাবে রান্না করলে খাবার একঘেয়ে লাগতে পারে। এ কারণে মাঝে মধ্যে স্বাদ বদল করা জরুরি। রান্নার আগে ম্যারিনেট করলে মাছ-মাংসের স্বাদ অনেক গুণ বেড়ে যায়। তবে এজন্য সঠিক ম্যারিনেশন পদ্ধতি জানা জরুরি।
ম্যারিনেশনে লবণ ও লেবুর রসের আলাদা ভূমিকা
স্বাদ বৃদ্ধির জন্য লবণের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। মিশ্রণের পর জটিল পদ্ধতিতে লবণ মাংসের ভিতর থেকে আর্দ্রতা বার করে আনে। এ কারণে বলা হয়, লবণ মাখালে মাংস থেকে দ্রুত পানি ছাড়বে। তা ছাড়া পেশির তন্তুগুলিকে আলগা করে মাংসকে নরম করতে পারে লবণ। ভিনেগার, লেবুর রস, ইয়োগার্ট, বাটারমিল্কের মতো অ্যাসিডিক উপকরণগুলি মাংসে মাখিয়ে রাখলে তা মাংসের উপরিতলের প্রোটিনের গঠন পাল্টে দিতে পারে। অ্যাসিডের টক ভাব মাংসে স্বাদ এনে দেয়।
ম্যারিনেশনের সময় যা মাথায় রাখা জরুরি-
সবসময় তাজা এবং সুগন্ধ যুক্ত উপকরণ দিয়ে ম্যারিনেট করবেন।
দীর্ঘ সময় ধরে ম্যারিনেট করা মানেই মাংসের গভীরে উপকরণগুলি প্রবেশ করা নয়। কম সময়েও ভালো ম্যারিনেশন হতে পারে। তবে উপকরণগুলো হতে হবে যথাযথ অনুপাতে।
তেল বা টক দইয়ের মতো উপকরণ অ্যাসিডিক উপাদানগুলির মতোই কাজ করে। আপনি ঠিক কোন পদটি রান্না করতে চাইছেন, তার উপর এটা নির্ভর করে।
ফ্রিজ থেকে ম্যারিনেট করা মাংস বের করে সরাসরি রান্নায় দিয়ে দেবেন না। কিছুক্ষণ পর দিন। তা না হলে স্বাদে সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত ম্যারিনেশনে মাংস গলে যেতে পারে। খুব বেশি ক্ষণ ম্যারিনেট করে রাখলে অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় মাংসের গঠনে পরিবর্তন আসে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম য র ন ট কর
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের শিক্ষায় পরিবারের ব্যয় বেড়েই চলেছে
১২৮ পৃষ্ঠার একটি খাতার দাম এখন অন্তত ৫০ টাকা। মানভেদে এই খাতা সর্বোচ্চ ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ চার–পাঁচ বছর আগেও ৩০ টাকায় পাওয়া যেত। একইভাবে বেড়েছে ২০০ পৃষ্ঠার খাতার দাম ৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৮০-৯০ টাকা। ৩০০ পৃষ্ঠার খাতা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়; আগে ছিল ৮০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২০–২১ সালেও প্রতি দিস্তা কাগজের দাম ছিল ১৬ টাকা, এখন তা ৩৫ টাকা। কয়েক বছর ধরেই কাগজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বই, খাতা ও ব্যবহারিক খাতার মতো কাগজনির্ভর শিক্ষা উপকরণে। গত পাঁচ বছরে এসব শিক্ষা উপকরণের দাম গড়ে বেড়েছে প্রায় শতভাগ।
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার লাকি বুকস অ্যান্ড স্টেশনারির জ্যেষ্ঠ বিক্রয়কর্মী মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, খাতার জন্য সবচেয়ে বেশি চলে ‘৫৫ গ্রাম’ (কাগজের ধরন) কাগজ। ২০২০ সালে প্রতি রিম কাগজ ১ হাজার ২০ টাকায় কিনতেন। বর্তমানে এর দাম ২ হাজার ১০০ টাকার আশপাশে থাকে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বইয়ের দামও। ২০০ টাকা দামের স্কুলের বইয়ের মূল্য ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
মাঝে কলমের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। তবে পেনসিলের দাম কিছুটা বাড়তি।কচুক্ষেত, মিরপুর ১০ ও নীলক্ষেত এলাকার বেশ কিছু দোকান ঘুরে জানা গেল, বাজারে চীন থেকে আমদানি করা কলম, পেনসিল বক্স, প্লাস্টিকের ফাইল ইত্যাদি স্টেশনারি পণ্যের চাহিদা বেশি। তবে আমদানিকারকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় এগুলোর দাম সেভাবে বাড়েনি। মাঝে কলমের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন আবার আগের জায়গায় ফিরেছে। তবে পেনসিলের দাম কিছুটা বাড়তি।
শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি বেড়েছে স্কুলের বেতন (টিউশন ফি), প্রাইভেট পড়ানোর খরচও। অভিভাবকেরা বলছেন, এসব খরচ বাড়ার তুলনায় তাঁদের আয় সেভাবে বাড়েনি। তাই সন্তানের শিক্ষার খরচ মিটিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি নামকরা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে মেয়েটি। তার বেতন ১ হাজার ৩০০ টাকা, টিউশন শিক্ষক নেন ৫ হাজার টাকা। বছরে দুবার কিনতে হয় ১৪টি খাতার সেট। যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মাসে এই শিশুর জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই শিশুর অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্তানের মানসম্মত পড়ালেখা নিশ্চিতে কষ্ট হলেও ব্যয় করতেই হয়। উপায় তো নেই। ভালো স্কুলে খরচ এমনই। তবে শিক্ষা ব্যয় কমলে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে আর্থিক চাপ কিছুটা কমত।’ এই অভিভাবকের ছোট ছেলে নার্সারিতে পড়ে। দুই ভাই–বোনের পড়ালেখার খরচ মাসে ১৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
অথচ একই শহরের আরেক অভিভাবক মো. বাবুলের মাসিক আয় এর চেয়ে কম। মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় পিঠা বিক্রি করেন তিনি। তাঁর ১২-১৫ হাজার টাকা আয় হয় মাসে। এই টাকাতেই সংসার চালাতে হয়। বাসাভাড়া, খাবার, ওষুধ—সব খরচ মিটিয়ে সন্তানের পড়ালেখার জন্য আলাদা টাকা বের করা কঠিন। তাই সন্তানকে নামী স্কুলে পড়ানোর সক্ষমতা নেই এই বাবার।
প্রশ্ন ওঠে, মহানগরগুলোর নিম্ন আয়ের পরিবারের পক্ষে এই ফি দেওয়া সম্ভব কি না? বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে, এমন অভিযোগও আছে।বিশেষজ্ঞরা যা বলছেনবই-খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ, স্কুলের বেতন এবং নানা নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টাকা আদায়—সব খাতেই খরচ বাড়ার কথা জানালেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বেতন-ভাতা বেড়েছে সরকারি নির্দেশনায়। স্কুলগুলোর ইচ্ছেমতো ফি বাড়ানো ঠেকাতে সৎ উদ্দেশ্যেই সরকার হয়তো এটা করেছে। কিন্তু একাধিক সন্তান থাকলে নিম্ন আয়ের কতজন অভিভাবক এই খরচ মেটাতে পারবেন?’ তিনি বলেন, উপবৃত্তি, মিড ডে মিল ভালো উদ্যোগ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছে, সেই অনুপাতে উপবৃত্তি বাড়েনি।
উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিও স্কুল-কলেজের বেতন ছাড়া অন্য সব ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি নীতিমালা ২০২৪-এ বলা হয়েছে, মহানগরের (সিটি করপোরেশন এলাকা) এমপিওভুক্ত স্কুল ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বেতন ছাড়া অন্যান্য খাতে একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ২ হাজার ৪৬৫ টাকা আদায় করতে পারবে। জেলা সদর, পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের এমপিওভুক্ত স্কুলের ক্ষেত্রে ফি বাবদ দিতে হবে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। মফস্সলের স্কুলের ক্ষেত্রে তা হবে ১ হাজার ৪০৫ টাকা। নন-এমপিও স্কুলের ক্ষেত্রে এই খরচ আরও বেশি।
প্রশ্ন ওঠে, মহানগরগুলোর নিম্ন আয়ের পরিবারের পক্ষে এই ফি দেওয়া সম্ভব কি না? বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে, এমন অভিযোগও আছে।
বিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তদারকি তাঁর চোখে পড়েনি বলে জানালেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, শিক্ষার পেছনে পরিবারের এত বেশি ব্যয় সংগত নয়। শিক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
২০২৩ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২–এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করতে হয় পরিবারকে। এনজিও বিদ্যালয়ে ফি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিন গুণ বেশি। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এই ব্যয় ৯ গুণ বেশি। প্রাইভেট পড়ানোর খরচের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলোর প্রাইভেট পড়ানোর খরচ ২০০০ সালের ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১০ সালে হয়েছে ৫৪ শতাংশ। এই খরচ শহরাঞ্চলে ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ শতাংশ।