যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা কমে আসছে দুই দেশেরই
Published: 18th, June 2025 GMT
যতই দিন যাচ্ছে ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা ততই কমে আসছে। এই ক’দিনে পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা ও হামলা প্রতিহত করার চিত্র থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ইতোমধ্যে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতিতে পড়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য কমে গেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, গত শুক্রবার ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান এ পর্যন্ত যত হামলা করেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তার পাঁচগুণ বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর গতকাল বুধবার জানায়, তেহরান এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের দিকে ৪০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও কয়েকশ ড্রোন ছোড়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী সমরাস্ত্রের মজুত কমছে ইসরায়েলের
ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে ইসরায়েলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ‘অ্যারো’র ক্ষেপণাস্ত্রের (ইন্টারসেপ্টর) মজুত শেষ হয়ে আসছে। এই তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, ইসরায়েল লক্ষ্য করে গত কয়েক দিনে ১১ দফা ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের বেশির ভাগই আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। এছাড়া ইসরায়েল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘অ্যারো-থ্রি’ কাজে লাগাচ্ছে। এ ব্যবস্থাটি আকাশে ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে।
গত কয়েক দিনে অ্যারোর ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত কমে এসেছে। ফলে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা নিয়ে ইসরায়েলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের এ সংকটের বিষয়ে অবগত আছে ও বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে পেন্টাগন ইসরায়েলকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠিয়েছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র স্থল, সমুদ্র ও আকাশে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদারে কাজ করছে। এখন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র নির্দিষ্ট প্রয়োজনে তাদের এ মজুত ব্যবহার করছে।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্টের পরিচালক টম কারাকো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কেউই সারাদিন বসে থেকে ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারবে না। ইসরায়েলি ও তাদের মিত্রদের দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, বসে বসে গুলি চালানোর খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করতে অ্যারোর পাশাপাশি ডেভিডস স্লিং ও বিখ্যাত আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এ কাজে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে। ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করার কাজে ইসরায়েলকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্রের থাড ও প্যাট্রিয়ট প্যাক-২ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা।
কমে গেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রজেক্ট ও ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (সিটিপি-আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ইসরায়েলের হামলায় দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার ধ্বংস হওয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইরান সবচেয়ে বড় হামলাটি করে মঙ্গলবার ভোরের দিকে। ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তারা। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, অধিকাংশই ধ্বংস করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ইরানের শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে ইরানিরা এখন তাদের ইচ্ছামতো বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারবে না।
তেল আবিবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার রাতে ইরান চারটি বড় হামলা চালায়। তেহরানের দাবি, সর্বশেষ হামলায় ইসরায়েলের দিকে ফাতাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের দাবি, গত শনিবারের পর থেকে ইরানের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা কমেছে। শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত দুই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল ইরান। রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত ৬৫টি এবং সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে দেশটি। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সক্ষমতা ক্রমেই কমছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র ধ ব স কর ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানি পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে ইসরায়েলি হামলা
ইরানের রাজধানী তেহরানে দেশটির পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের পুলিশ বিভাগের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এই হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
হামলার নিন্দা জানিয়ে ওই বিবৃতিতে ইরানের পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, হামলায় তাদের কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এতে পুলিশের কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।