জড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, প্রস্তুত ইরানও
Published: 19th, June 2025 GMT
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত স্তিমিত না হয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে। তেহরানের নজিরবিহীন হামলার মুখে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইলে দেশটি তাতে সাড়া দিতে পারে বলে আভাস মিলছে। এতে তেহরানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের সরাসরি যুদ্ধে নামার শঙ্কা বাড়ছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেছেন। এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’র মুখে পড়বে।
নির্বাচনী প্রচারণায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কোনো ঘাঁটি আক্রান্ত না হলে তারা যুদ্ধে জড়াবেন না। এবার তিনি ভিন্ন কথা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সব সময় অস্ত্র সহায়তা দিলেও সরাসরি হামলায় অংশ নেয়নি।
যদি ওয়াশিংটন চলমান সংঘাতে অংশ নেয়, তাহলে তা নতুন মোড় নেবে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ইয়েমেন, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে ইরান সমর্থিত যেসব সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে, তারা সেসব অঞ্চলে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের ঘাঁটি রয়েছে। এক পর্যায়ে ওই দেশগুলো যুদ্ধে জড়াতে পারে। এর ফলে ইরানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাসক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।
গতকাল বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়টি বিবেচনা করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মাটির অনেক গভীরে থাকা বস্তুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম– এ রকম বোমা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই আছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা। ভূগর্ভের এ স্থাপনা অন্তত ৩০০ ফুট গভীরে পর্বতের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে। এ স্থাপনায় ইসরায়েল এরই মধ্যে হামলা চালালেও তাতে ভূপৃষ্ঠে কিছু অংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানায়, কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে মঙ্গলবার দেশে ফিরে ট্রাম্প তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন ট্রাম্প; যদিও আগে তিনি উত্তেজনা নিরসন ও কূটনৈতিক সমাধানের কথা বলেছিলেন। এর আগে গত সোমবার ইসরায়েলের দৈনিক হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমবারের মতো যুদ্ধে ওয়াশিংটনের সরাসরি অংশগ্রহণ চেয়েছে তেল আবিব। পরে গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, গত শুক্রবার থেকে ছয় দিনের সংঘাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় ৫৮৫ জন নিহত ও ১ হাজার ৩২৬ জন আহত হয়েছেন। ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত ও ৮০০ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের সামরিক ও কৌশলগত বিভিন্ন স্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, চার শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।
ট্রাম্পের হুমকি
গত দু’দিনে একাধিকবার ইরানকে হুমকি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে তিনি কোথায় আছেন। তাদের জন্য তিনি সহজ লক্ষ্য। তবে এক্ষুনি তারা হামলা চালাবেন না। তারা চান, ইরান যাতে বেসামরিক মানুষের ওপর আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ না করে। তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। পরে আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেন– ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’। অর্থাৎ তিনি ইরানের কাছে আত্মসমর্পণ দাবি করেন।
পরে হোয়াইট হাউসের নর্থ লনে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেন, আবার নাও পারেন। তিনি বলেন, তিনি নিশ্চিত নন যে সংঘাত কতটা দীর্ঘ হবে। কারণ, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি আবারও বলেন, দুটি খুব সাধারণ শব্দ– ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’।
খামেনির জবাব
ট্রাম্পের হুমকির কড়া জবাব দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বার্তা সংস্থা তাসনিম জানায়, গতকাল বুধবার সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি ট্রাম্পের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, তাঁর দেশ ট্রাম্পের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান মেনে নেবে না। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ওপর শান্তি বা যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
গত শুক্রবারের পর প্রথম বক্তব্য দিলেন খামেনি। তিনি বলেন, ‘ইরান, ইরানি জাতি ও এর ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা কখনোই এ জাতির সঙ্গে হুমকির ভাষায় কথা বলবে না। কারণ, ইরানিরা আত্মসমর্পণ করে না। মার্কিনিদের জানা উচিত, তাদের সামরিক হস্তক্ষেপ নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’ বার্তা সংস্থা মেহের জানিয়েছে, খামেনি বলেছেন, ইসরায়েলকে তার ‘ভুল’-এর সাজা ভোগ করতে হবে।
এ অবস্থায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইরান যা করছে, তা আত্মরক্ষা। ইসরায়েল চালাচ্ছে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’। ইরানের জবাব স্বাভাবিক, বৈধ ও আইনসম্মত। আলজাজিরা জানায়, বুধবার পার্লামেন্টে নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন। চলমান উত্তেজনা নিরসনে আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে জার্মানি।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইসরায়েলের যে কোনো হামলার জবাব দেবে ইরান। রয়টার্স জানায়, বুধবার জেনেভায় তিনি বলেন, হামলার ‘কঠোর’ ও ‘কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা’ ছাড়া জবাব দেওয়া হবে।
ইরানের হামলা
গতকাল বুধবার রাতে ইসরায়েলের উদ্দেশে সাজিল-২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। এর আগে ইসরায়েলের উদ্দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন ছোড়ে ইরান। এসব ড্রোন গোলাম হাইটসে ঠেকানোর দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইরানও ইসরায়েলের বেশ কিছু ড্রোন ভূপাতিত করে। সিএনএন এসব ড্রোনের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে। প্রেস টিভি জানায়, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ‘ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে। আইআরজিসি অভিযানের সর্বশেষ পর্যায়কে ‘একটি টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, প্রথম প্রজন্মের ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন ইসরায়েলের ‘কাল্পনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমাপ্তির সূচনা।
২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় ইরান প্রথম এই ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। চলমান সংঘাতে এটাই এ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যবহার। প্রথম ২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রটি উন্মোচিত হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এর নামকরণ করেন।
যুক্তরাজ্য তেল আবিব থেকে তাদের দূতাবাস কর্মীদের সাময়িকভাবে সরিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় সংঘাতে তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেছেন।
ইসরায়েলের হামলা
গতকাল ইরানের ‘৪০ স্থানে’ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ও অস্ত্র তৈরির কারখানা। তেহরান থেকে আলজাজিরার তৌহিদ আসাদি জানান, কারাজে পেয়াম বিমানবন্দরের কাছে তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এ ছাড়া তেহরানের পূর্বাঞ্চলেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সামাজিক মাধ্যম এক্স পোস্টে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তেহরানে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সাইবার হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ইউরোপের তিন ঘাঁটিতে ৩০টি যুদ্ধবিমান পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে মার্কিন ঘাঁটিতে উড়ে গেছে ৩০টি যুদ্ধবিমান। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ফ্লাইটরাডার-২৪ এর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, কেসি-১৩৫ নামের বিমানগুলো নামে ‘যুদ্ধবিমান’ হলেও ব্যবহার হয় ভিন্ন কাজে। এগুলো মূলত ট্যাঙ্কার বিমান। অর্থাৎ অপারেশনে ব্যবহৃত যুদ্ধ ও বোমাবাহী বিমানগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা কেসি-১৩৫ বিমানের কাজ। স্পেন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে থাকা মার্কিন ঘাঁটির উদ্দেশে এসব বিমান উড়ে যায়।
এদিকে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের চতুর্থ দিনে দক্ষিণ চীন সাগরে যাত্রাপথ পরিবর্তন করে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে রওনা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী ইএসএস নিমিৎজ। এটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও সমরাস্ত্র সজ্জিত রণতরী।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের (রুসি) গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাতের যে অবস্থা, তাতে ইতোমধ্যে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে তা আরও ব্যাপক আকার নেবে। সংঘাত ঘনীভূত হলে যে কোনো সময় তাতে ঢুকে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তিন দিনের মধ্যে ৩৯টি ট্যাঙ্কার বিমানের ইউরোপে ওড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেন, ট্রাম্প এখন এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানোর ব্যাপারে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলার প্রস্তুতি ইরানের
সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নিলে বসে থাকবে না ইরান। এ জন্য দেশটি এখন থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরানের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ইরান প্রথমে ইরাকে থাকা মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে। এর পর অন্যান্য আরব দেশে থাকা ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যে পরিণত করবে।
তেহরানের কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, প্রয়োজনে ইরান হরমুজ প্রণালিতে মাইন পেতে দিতে পারে। এ প্রণালি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। এ ছাড়া ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করবে। সিএনএন জানায়, যুক্তরাষ্ট্র হামলায় যোগ দিলে ইরান ‘প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে’ বলে জানিয়েছেন দেশটি উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তখত-রাভাঞ্চি।
প্রতিবেশী আরবরা যুক্তরাষ্ট্রকে সুযোগ দেবে না– আশা ইরানের
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, তাদের প্রত্যাশা, প্রতিবেশী আরব দেশগুলো তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ওপর হামলা করতে দেবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এক গণহত্যাকারীর দ্বারা আক্রান্ত। আত্মরক্ষার জন্য আমরা ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে সর্বশক্তি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছি। ইসরায়েল আমাদের ওপর হামলা করছে। আমরা নিজেদের রক্ষা করছি। আমাদের প্রতিক্রিয়া খুব হিসাব করে ও দায়িত্বের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। আমরা শুধু ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করছি।’
আলজাজিরা জানায়, এর পরই তিনি বলেন, প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তারা জানে, ইসরায়েল চায়– এ যুদ্ধে অন্য দেশগুলোও জড়িয়ে পড়ুক। আমরা বিশ্বাস করি, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের মাটি ব্যবহার করতে দেবে না।
আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বার্তা সংস্থা তাস জানায়, গতকাল বুধবার ফোনালাপে দুই নেতা সংঘাত নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন। ফোনালাপে পুতিন সংকটে মধ্যস্থতা করার আগ্রহের কথা জানান। তিনি অন্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন বলেও জানান।
একই দিনে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিয়াবকভ বলেন, ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়া হবে মধ্যপ্রাচ্যের পুরো পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলা। তিনি জানান, মস্কো ইসরায়েল ও ইরান– উভয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
বিশ্ব ‘বিপর্যয় থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে’
বিশ্ব এখন বিপর্যয়ের কিনারায় বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। গতকাল বুধবার তিনি মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে মারিয়া জাখারোভা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোয় ইসরায়েলের প্রতিদিনের হামলার কারণে বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয় থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে রয়েছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র স ব যবহ র বল ছ ন র ইসর র ওপর প রথম চলম ন ন ইসর
এছাড়াও পড়ুন:
দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।
খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।
এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।
এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?