মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। তবে দেশটিতে হামলার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।

গোপন এক গোয়েন্দা সূত্র সিবিএসকে জানিয়েছে, ট্রাম্প এখনই হামলা শুরু করতে চান না। তিনি চাইছেন, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করে দিক। তিনি ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনা ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলার বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

এরই মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের’ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর ধৈর্যের সীমা ফুরিয়ে গেছে।

ইরানে হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল বুধবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটা করতেও পারি, না–ও করতে পারি।’

আয়াতুল্লাহ খামেনি গতকাল তাঁর ধারণ করা এক ভাষণে ট্রাম্পের বক্তব্যের কড়া জবাব দেন। বলেন, ‘যেকোনো মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের খেসারত দিতে হবে। ইরানি জাতি কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না।’

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এই প্রত্যাখ্যানকে গুরুত্ব না দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুভকামনা রইল’। তবে তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি কী করব, সেটা কেউ জানে না।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, এর অর্থ হচ্ছে আমার ধৈর্য শেষ।’

ট্রাম্পের ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদনের খবর প্রথম প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

ইসরায়েল ইরানে নতুন করে হামলা করেছে, যার লক্ষ্য ছিল ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক স্থাপনা। জবাবে ইরান হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে জানায়। অবশ্য ইসরায়েল দাবি করেছে, এতে তাদের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

গত শুক্রবার ভোরে ইরানে ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর গতকাল খামেনি প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্য দেন।

জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধি এক্সে ট্রাম্পকে কটাক্ষ করে লেখেন, জোরাজুরি করলে ইরান কখনো আলোচনায় বসে না। জোর করে শান্তি আনা যায়—ইরান এমনটা বিশ্বাস করে না। আর আলোচনা অবশ্যই এমন এক ‘যুদ্ধবাজের’ সঙ্গে নয়, যিনি নিজের গুরুত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া।

ইরানের প্রতিনিধি আরও লেখেন, ইরানের কোনো কর্মকর্তা কখনো হোয়াইট হাউসের দরজায় গিয়ে মাথা নত করে অনুরোধ জানাননি।

এই প্রতিনিধি বলেন, ট্রাম্পের মিথ্যাচারের চেয়েও ঘৃণিত হচ্ছে তাঁর কাপুরুষোচিত হুমকি, যাতে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে ‘হত্যার’ কথা বলেন।

এই বাগ্‌যুদ্ধের মধ্যেই দেখা গেছে, লাখ লাখ ইরানি রাজধানী তেহরান ছেড়ে যেতে সড়কে বেরিয়ে পড়েছেন। এই শহরে প্রায় এক কোটি মানুষ বসবাস করেন।

ইসরায়েলের উগ্রবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন, তাঁর দেশের সেনাবাহিনী ‘ধাপে ধাপে’ ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি নির্মূল করার পথে এগোচ্ছে।

এই উগ্র ইহুদিবাদী নেতা দাবি করেন, ‘আমরা তেহরানের আকাশ নিয়ন্ত্রণ করছি। আমরা আয়াতুল্লাহদের শাসনের ওপর প্রবল শক্তি দিয়ে আঘাত হানছি। পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র, সদর দপ্তর ও শাসকের প্রতীকগুলোকে নিশানা করছি।’

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সিনেট কমিটিকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেকোনো সময় যেকোনো নির্দেশ দিলে প্রতিরক্ষা বাহিনী তা বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত।

হেগসেথের এই মন্তব্য এমন সময়ে এল, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি জড়ো হচ্ছে। ইউএসএস নিমিৎসের নেতৃত্বাধীন বিমানবাহী একটি রণতরি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উপসাগরীয় অঞ্চলে যাচ্ছে। সেখানে আগে থেকে মোতায়েন ইউএসএস কার্ল ভিনসনের সঙ্গে এই রণতরি যোগ দেবে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্যান্য সামরিক বিমান, জ্বালানি ট্যাংকারও ইউরোপ থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, যার মধ্যে এফ–২২ এবং এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আগামী বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠক করবেন। আলোচনার মূল বিষয় হবে ইরান।

বিবিসি জানতে পেরেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার জন্য ডিয়েগো গার্সিয়া বা সাইপ্রাসে যুক্তরাজ্যের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে চায়—এমন কোনো কিছু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যকে জানায়নি।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব ঘাঁটি থেকে হামলা চালাতে চায়, তবে আগেই তারা মিত্রদেশকে জানায়। যুক্তরাজ্যের একটি সূত্র জানিয়েছে, সব বিকল্প বিবেচনায় রয়েছে। তবে মার্কিন পরিকল্পনা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেম দূতাবাস সেখানে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। কতজন মার্কিন নাগরিক ইসরায়েল ছাড়তে চান, কিংবা মার্কিন সেনাবাহিনী তাঁদের সরিয়ে নিতে সাহায্য করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর জ য ইসর য় ল কর ছ ন মন ত র প রক শ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের

ভারতীয় যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানিয়েছে মাওবাদী ও নকশালবাদীরা। গত ৯ মাসে ২১০ জন সদস্যের মৃত্যুর পর ভারত সরকারের কাছে প্রথমবারের মতো শান্তির দাবি জানাল মাওবাদীরা। সশস্ত্র এই বামপন্থী সংগঠনটির পক্ষে এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে হাতিয়ার ছেড়ে বৈঠকে বসতে রাজি তারা।

মাও-কেন্দ্রীয় কমিটি জানিয়েছে, তারা আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগ করতে রাজি। যাতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষ সমাধানের পথে আসতে পারে। তবে সেই আলোচনার পথে সরকার যেন কোনোরকম চালাকি না করে।

আরো পড়ুন:

মাদক পাচারে অভিযুক্ত ১৬ হাজার বিদেশিকে বহিষ্কার করবে ভারত

অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী

জানা গেছে, গত ১৫ অগাস্ট সরকারকে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল মাওবাদীরা। 

১৫ অগাস্ট লেখা চিঠিতে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, একমাস ধরে এই সংঘর্ষবিরতি জারি রাখার আর্জি জানিয়েছিল মাওবাদীরা। তারপর নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাতে চায় তারা। মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক অভয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। তবে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে মাওবাদীদের এই চিঠির কোনো জবাব এখনও দেওয়া হয়নি বলেই খবর। 

মাওবাদী নেতা অভয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সংঘর্ষ যাতে থামে সেটা আমরাও চাই। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত বদল করেছি। তবে এই বিষয়ে আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো উচিত। যদি সরকার সত্যিই আলোচনা চায় তাহলে আমাদের এক মাসের সময় দেওয়া হোক। এই সময়ে জেলবন্দি শীর্ষ মাওবাদী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় তারা। তবে এই এক মাস যাতে কোনো অভিযান না চলে সেটাও জানানো হয়েছে মাওবাদীদের তরফে।

মাও সংগঠনের বার্তা, “এই সময়কালে তাদের উপর যেন নিরাপত্তবাহিনী কোনোরকম অভিযান না চালায়। সরকার যদি চায় তবে কাল থেকেই ভিডিও কলের মাধ্যমে আলোচনা চালাতে প্রস্তুত আমরা।”

প্রসঙ্গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত নকশাল বিরোধী অভিযানে কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকারগুলোর যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী উল্লেখ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৪৯৮ জন মাওবাদী নিকেশ হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬১৬ জনকে।

২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছত্তিশগড়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাওবিরোধী অভিযান আরো গতি পেয়েছে। এরমধ্যে ২০২৪ সালে বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদীর। পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করেন ১ হাজার ৬৬৬ জন। ২৪-এর পর ২০২৫ সালে অভিযানের ঝাঁজ আরো বেড়েছে। রিপোর্ট বলছে, গত ৯ মাসে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে ২১০ জন মাওবাদীর। এদের মধ্যে শুধুমাত্র ছত্তিশগড়ে ১৩ জন শীর্ষ মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়েছে। যাদের মাথার দাম ছিল ন্যূনতম ২০ লাখ থেকে এক কোটি রুপি পর্যন্ত। কেবলমাত্র ছত্তিশগড়েই ৬৫টি নতুন সুরক্ষা ক্যাম্প খোলা হয়েছে।

অনুমান করা হচ্ছে, একের পর এক শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর পর নকশালদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তারা এখন বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে। আশঙ্কার আবহও মাওবাদীদের মধ্যে। আর সে কারণেই তাদের পক্ষ থেকে বারবার সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানানো হচ্ছে। তবে সরকার মাওবাদীদের সে দাবি মানবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের