২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীতে। গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এই বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থেকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টির এই রেকর্ডের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে ২৪ ঘণ্টার এই বৃষ্টিতে ডুবে গেছে জেলা শহর মাইজদীর অধিকাংশ সড়ক। আজ সকালে সরেজমিনে জেলা শহর মাইজদীর নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়ক, সেন্ট্রাল রোড, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি এলাকা, জেলা জজ আদালত সড়ক এবং মাইজদী স্টেশন রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি সড়কই বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। সড়কগুলোর পাশের নালা দিয়ে পানি সরছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ কারণে যত বৃষ্টি হচ্ছে, পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে।

লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিল পানি মাড়িয়ে বাজার করে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই শহর নিয়ে, নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসলে কেউ ভাবে না। ড্রেনগুলোর বেশির ভাগই সরু ও অপরিকল্পিত। সরকারি অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। আবার যেসব ড্রেন আছে, সেগুলোও ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। এ কারণে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি ওঠে। ঘর থেকে বের হলেই পানি মাড়াতে হয়।

রাস্তাঘাট ছাড়াও জলমগ্ন হয়েছে শহরের অনেক বাড়িঘর। সীমাহীন দুর্ভোগ নেমে এসেছে শহরের বাসিন্দাদের জীবনে। শহরের অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এই দুর্ভোগের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। অপর দিকে অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও। বৃষ্টির পানি জমে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা শহর মাইজদীতে তাঁরা ১৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় এটি দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। বর্ষা মৌসুম চলছে, এখন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে।

শহর ঘুরে দেখা যায়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের নিচতলায় বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে, সামনেও প্রায় এক ফুট পানি। পানি মাড়িয়ে সেবাপ্রার্থীরা কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করছেন। একই চিত্র দেখা যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আশপাশেও। চারপাশেই পানি থই থই করছে। বৃষ্টির পানিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শহরের সরকারি আবাসিক এলাকার সড়ক (ফ্ল্যাট রোড) ও প্রধান সড়কের পাশের অনেক ব্যবসায়ী। পানি ঢুকে পড়েছে সড়কসংলগ্ন দোকানগুলোতে। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

শহরের ফ্ল্যাট রোডের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, তাঁর দোকানের সামনের এই সড়ক দিয়ে সরকারি আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতায়াত করেন প্রতিনিয়ত। তাঁরা যাতায়াতের এই সড়কের দিকেও নজর দেন না। সড়কের পাশে ড্রেন করা হয়েছে সড়ক থেকে উঁচু করে। পানি ড্রেনে না গিয়ে সড়কে জমে। এর ফলে ক্রেতারা দোকানে আসতে চান না।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নোয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি-এলজিইডি) জালাল উদ্দীন বলেন, ড্রেনেজ সমস্যা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। শহরের চারপাশ খানিক উঁচু হওয়ায় পানি সরতে সময় লাগে। এতে ভোগান্তি বাড়ে। পরিস্থিতির উন্নয়নে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেও সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শহর র সরক র ম ইজদ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মাদক কারবারিদের গুলিতে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে হাসপাতালে আইজিপি

রাজধানীর ফকিরাপুলে মাদক কারবারিদের গুলিতে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগের এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) আতিক হাসান ও কনস্টেবল মো. সুজনের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিবি পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার মধ্যরাতে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের বিপরীতে ফকিরাপুল মোড়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ইয়াবা বেচাকেনার মধ্যস্থতাকারী আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ডিবির ভাষ্য, একটি পক্ষ ব্যাগে করে ইয়াবা এনে প্রাইভেট কারে আসা আরেক পক্ষের কাছে হস্তান্তর করছিল। ওই মুহূর্তে অভিযান চালিয়ে ব্যাগটি জব্দ করে পুলিশ।

ডিবি সূত্র জানায়, ইয়াবা হস্তান্তরের সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি প্রাইভেট কার জব্দের চেষ্টা করা হলে চালক দ্রুতগতিতে গাড়িটি প্রায় ৬০০ গজ দূরে নিয়ে যান। পরে সেটি থামিয়ে চাবি জব্দ করেন ডিবি সদস্যরা। এ সময় প্রাইভেট কারের আরোহী ও ইয়াবা বহনকারীরা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা ডিবি সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে ডিবির সহকারী কমিশনার এনায়েত কবিরের ডান হাতের আঙুলে গুলি লাগে। এ ছাড়া আহত হন এএসআই আতিক হাসান ও কনস্টেবল মো. সুজন।

গুলিবিদ্ধ ও আহত অবস্থায় ডিবি সদস্যরা অটোরিকশাটিকে ধাওয়া করেন। কিছু দূর যাওয়ার পর সেটি উল্টে গেলে ডিবি সদস্যরা মাদক কারবারি আবদুল আজিজ (৩৮) ও হৃদয় সরকার ওরফে আশিককে (৩৫) আটক করেন। তবে তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও দুজন পালিয়ে যান।

গুলিবিদ্ধ কর্মকর্তা এনায়েত কবিরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ