Samakal:
2025-06-20@00:18:05 GMT

যোগ-বিয়োগের মেলবন্ধন

Published: 19th, June 2025 GMT

যোগ-বিয়োগের মেলবন্ধন

বিশালাকৃতির কালো ঘরের দেয়ালে চক দিয়ে লেখা ও তার নিচেই যান্ত্রিক নগরীর সিঁড়ি, দেয়াল, জানালার ছবি। আরেকটি টেবিলে রয়েছে একটি দালান তৈরি কাঠামোর পূর্ণ নকশা চিত্র। অন্য দেয়ালে কাগজে, কালিতে আঁকা অবস্ট্র্যাক চিত্র। চারদিকে তাকালে ইট, পাথরের তৈরি দালানের শৈল্পিক স্থাপত্য রূপ ও সেই সঙ্গে শিল্পের মিশেল– দুটোই মিলে একাকার দেখা যায়।
গত ৩১ মে থেকে লালমাটিয়া কলাকেন্দ্রে স্থপতি আব্দুল্লাহ মোতালেব এবং শিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী ‘যোগ-বিয়োগ’ শুরু হয়েছে। প্রদর্শনীটি ব্যতিক্রম এ কারণে, দর্শক শুধু এটি দেখবেই না। একই সঙ্গে স্থপতি ও শিল্পীর বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সরাসরি জানতে পারবেন। প্রদর্শনী চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। ব্যতিক্রমী পুরো প্রদর্শনী নিয়ে দু’জন শিল্পীর অভিমত নিচে তুলে ধরা হলো– 
ওয়াকিলুর রহমান: এটা দু’জন শিল্পীর যৌথ প্রদর্শনী। আমি এবং স্থপতি আব্দুল্লাহ মোতালেবের। তাঁর বেড়ে ওঠা, শিক্ষাজীবন ও প্র্যাকটিস জার্মানির বার্লিনে। আমি জার্মানির একটি শহরে ছিলাম। সে সূত্র থেকে আমাদের মধ্যে প্রায় ৩০ বছরের একটা সম্পর্ক রয়েছে। তিনি দেশে এসে এক বছরের মতো থাকলেন।
এ প্রদর্শনীতে স্থাপত্যকলার এক ধরনের উপস্থাপনা তিনি তুলে ধরেছেন। এটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে স্থাপত্যকলাও একটি শিল্প। সেই জায়গা থেকে প্রদর্শনীতে তাঁর বিভিন্ন প্রজেক্ট, প্রজেক্ট প্রসেস, কিছু ম্যাটারিয়াল এবং ছয়টা লেকচার তিনি তুলে ধরবেন। আমাদের দেশে বর্তমানে স্থাপত্যকলা নতুনভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবস্থান করছে। মূলত এটার প্র্যাকটিস জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেই জায়গায় তাঁর যে অভিজ্ঞতা, সেটি বাংলাদেশের স্থপতিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন লেকচারের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব এবং আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে একটা স্থাপত্য বিভাগে পড়াই ১০ থেকে ১২ বছর ধরে। আমার কাজে আমি মনে করি, অনেক কিছুই স্থাপত্যকলা থেকে অনুপ্রেরণা প্রাপ্ত। আমি যে কাজ করি সে কাজগুলো ও আব্দুল্লাহ মোতালেব তাঁর আর্কিটেকচারাল প্রসেস এবং সেই প্রসেসের সঙ্গে আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং, আর্কিটেকচারাল কমিউনিকেশনের জন্য যে ম্যাটারিয়ালগুলো লাগে একটা তালিকা করার জন্য সেগুলোকে তিনি বই আকারে, কখনও আলোকচিত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন। আর তিনি লেকচার দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে চারটা লেকচার হয়ে গেছে। আগামী শুক্রবার আরেকটা লেকচার হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী হচ্ছে। শহরে তো কিছু নিয়মকানুন আছে স্থাপত্যকলা প্র্যাকটিসের। যেগুলাকে ভালো করে করতে হয়। কিন্তু এসব প্র্যাকটিসের পাশাপাশিও এটি একটা খুব বড় ধরনের শিল্প। এটাকে শিল্প হিসেবেও দেখা, সেটাকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও এ প্রদর্শনী। এটা আমার মনে হয় যে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এটা সম্পর্কে একটা গুরুত্বপূর্ণ ও এর নান্দনিক অবস্থান নিয়ে কথা বলার মতো ব্যাপার আছে। আরেকটি বিষয় হলো, তরুণ স্থপতি অতিথি আমরা পাচ্ছি প্রতিনিয়ত এবং যারা অধ্যয়নরত অবস্থায় আছে। বাংলাদেশে তো প্রায় ২৪টির মতো আর্কিটেকচার ফ্যাকালটি আছে। তারা আব্দুল্লাহ মোতালেবের যে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। 
প্রদর্শিত সব কাজই কাগজের কাজ। আমার কাজগুলো তো অবস্ট্রাক্ট। আর্কিটেকচার কাজও সম্পূর্ণ প্র্যাকটিসের বিষয়। ওরা স্পেস, ফর্ম, ভলিউম, প্রপোরশন এগুলো নিয়ে মূলত কাজ করে। যেমন– একটা জায়গা পেল, সেই জায়গার মধ্যে কিছু রেফারেন্স থাকে। সেগুলোকে মাথায় রেখে তারা একটা ফর্ম তৈরি করে। শূন্যস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ ক্ষেত্রে। আমার কাজগুলোও আসলে সেই একই মূল এলিমেন্ট নিয়ে করা। কিন্তু আমি যে কারণে কাজগুলো দিয়েছি বা আর্কিটেক্টদের সঙ্গে এক ধরনের কমিউনিকেশন হচ্ছে, সেটা হচ্ছে– যে প্রসেসে কাজটা করা সেটা আর্কিটেকচারাল এক্সপেরিয়েন্স থেকে নেওয়া। কিন্তু অবশ্যই শিল্পী হিসেবে আমার কাজগুলো এখানে অর্গানিক ফর্মে এবং জিওমেট্রিক্যাল ফর্মের সমন্বয়ের। এগুলো সবই কাগজের। তার মধ্যে প্রিন্ট আছে, অয়েলের কাজ আছে, সেগুলোকেও আবার কোলাজ করেছি। এভাবে কম্পোজিশন তৈরি করা। আমি বলব, আমার আর্কিটেকচারাল প্র্যাকটিসের এই ভিজুয়াল আর্ট নিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা, তারই এক ধরনের উপস্থাপনা হলো এ কাজগুলো। প্রদর্শনীর নামের ক্ষেত্রে গাণিতিক যোগ-বিয়োগ চিহ্নের মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি সংযোগ ও বিভাজন করা– এর মধ্যে দিয়েই শুদ্ধতা তৈরি হয়।
চারুকলায় যখন আমরা স্থাপত্যকলার ইতিহাস পড়ি, তারপরও আমি বলব, স্থাপত্যও চিত্রকলার মতোই একটা প্রাচীনতম মাধ্যম। কিন্তু সেটারও একটা ইতিহাসের ধারাবাহিকতা আছে। বর্তমানে আমাদের যেহেতু জীবনযাপন অভ্যাস পাল্টে যাচ্ছে সুতরাং স্থপতির কাছে গিয়ে নকশা নিয়ে আলোচনা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আমাদের এ প্রদর্শনী নিয়ে পরিকল্পনা ছিল আগে থেকেই যে, উপস্থাপনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া কাজগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য গ্যালারিকে পুরো কালো গ্যালারি ও স্পেসলেস করা– এ বিষয়গুলো প্রদর্শনীর আগে বোঝা সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া তাঁর যেহেতু ছয়টা লেকচার আছে, সেগুলো সম্বলিত একটি ক্যাটালগ পরে বের করব আমরা।
আবদুল্লাহ মোতালেব: আধুনিক শিল্প প্রদর্শনীতে গ্যালারির বাতাস যেন এক অনিশ্চিত রূপকথা– কে কোনটি এঁকেছেন, কোথায় স্থাপত্য শুরু আর শেষ, তার সুস্পষ্ট মানচিত্র নেই। দেয়ালের একেকটি কাজ প্রথম দেখায় মনে হতে পারে সাইট-প্ল্যান, ফিগার-গ্রাউন্ড অথবা নিছকই বিমূর্ত কম্পোজিশন; আবার পর মুহূর্তে চোখে ভাসে স্থাপত্যের অবয়ব।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যেন রেস্তোরাঁয় ঢুকে একটি ডিশ অর্ডার করলেন, কিন্তু ওয়েটার ফিরিয়ে দিল শুধু উপকরণগুলো– রেসিপি নিয়ে আপনি যা খুশি তাই করেন। দর্শক এখানে ঠিক সেই শেফ; শিল্পীর হাতে তুলে দেওয়া ‘উপকরণ’ থেকে তিনি নিজস্ব অর্থ বের করে নেন।
প্রতিটি প্রকল্পের পেছনে আছে আলাদা গল্প, আর প্রতিটি দর্শকও তৈরি করে যান নিজস্ব বয়ান। কোনোটিকে আলাদা করে বলা কঠিন; সবই খুব ব্যক্তিগত, খুব বিশেষ।
তবে এসব ‘গল্প’ তৈরি করতে সময় লাগে– স্থাপত্য যে বিষয়ে কাজ, সেখানে একেকটি প্রজেক্ট শেষ হতে লেগে যায় দুই-তিন বছর। সে জন্যই এমন বিস্তৃত প্রদর্শনী ঘন ঘন আয়োজন করা যায় না। আমরা বড় আয়োজনটি শেষ করেছি ঠিক ২০ বছর আগে। আরেকটি একই ধরনের প্রদর্শনী দাঁড় করাতে কতটা দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে আবারও।
চিত্রশিল্পী-স্থপতিরা অবশ্য টিকে আছেন অবিরাম পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। মাধ্যম বদলালেও তাদের উদ্দেশ্য এক– স্থাপনাকে ভাঙা, পুনর্গঠন করা, আবার কখনও তাকে দুই-মাত্রিক ফ্রেমে বন্দি করা। তাই দর্শক যখন এ গ্যালারিতে পা রাখেন, একটি ত্রিমাত্রিক অনিশ্চয়তা ঘুরপাক খায় তাঁর চারপাশে; কোথাও স্থাপত্য আর চিত্রকর্ম হাত ধরাধরি করে হাঁটে, কোথাও তারা একে অন্যের সীমা মুছে দেয়।
শেষ পর্যন্ত প্রদর্শনীটি যেন শিল্প-সম্ভারের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে এক ‘প্রক্রিয়া’তে– শিল্পী, কিউরেটর ও দর্শকের মিলিত এক উপাদেয় রান্না, যার স্বাদ ঠিক করেন সবাই মিলে। শিল্প-রন্ধনের এ রেসিপি খোলা আছে যে কারও হাতে, যে সাহস করে ঢুকে পড়বে এই অচেনা রান্নাঘরে। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গল প আর ক ট ক আম র ক জ প রদর শ র জন য প রস স আম দ র ধরন র স থপত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা: চেরনোবিলের মতো বিপর্যয় হবে না

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ হলেও চেরনোবিল-ফুকুশিমার মতো বিপর্যয় ডেকে আনবে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, এগুলো মূলত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এ ধরনের স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা চেরনোবিল বা ফুকুশিমার মতো ভয়াবহ ‘পারমাণবিক দুর্ঘটনা’ ঘটানোর ঝুঁকি তৈরি করে না। এর কারণ হলো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে কোনো পারমাণবিক বিক্রিয়া (নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকশন) ঘটে না। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরে ইউরেনিয়ামের পরমাণু বিভাজিত হয়ে ফিশন প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন করে এবং তাতে তৈরি হয় অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য।

অন্যদিকে, সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো শুধু ইউরেনিয়ামকে জ্বালানি হিসেবে প্রস্তুত করে, সেখানে শক্তি উৎপাদনের কোনো প্রক্রিয়া চলে না। 

ব্যাঙ্গোর বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক উপাদান বিশেষজ্ঞ সায়মন মিডলবার্গ  বলেন, যদি কোনো সমৃদ্ধকরণ স্থাপনায় বোমা মারা হয়, তাহলে ভেতরের ইউরেনিয়াম পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এতে কোনো পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা নেই। কাজেই এ ক্ষতি হবে স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ এবং একমাত্র আশপাশের একটি ছোট এলাকা ছাড়া কোনো বিস্তৃত তেজস্ক্রিয় ঝুঁকি তৈরি হবে না।

রয়টার্স জানায়, ইরানের ভূগর্ভে নির্মিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর আঘাত হানতে সক্ষম একমাত্র প্রচলিত অস্ত্র হচ্ছে মার্কিন ‘বাঙ্কার-ব্লাস্টার’ বোমা। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়লে সংঘাত পরিস্থিতিতে অনেকের মনেই প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আসলেই ইরানের সন্দেহভাজন পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনায় শক্তিশালী বাঙ্কার-ব্লাস্টার বোমা ফেলে, তাহলে এর পরিণতি কী হবে? 

বিকিরণ ঝুঁকি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই বোমা মাটির নিচের বাঙ্কার ধ্বংস করে ফেললেও এর ব্যাপক বিকিরণ দূষণের আশঙ্কা কম।

ইরানের ‘ফোরডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্লান্ট’ নামের এই রহস্যময় স্থাপনা পাহাড়ের গুহায় নির্মিত এবং এখানে ইউরেনিয়াম আইসোটোপ প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এতে এখানে ইউরেনিয়াম সাধারণত ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড নামক গ্যাস আকারে থাকে।

এ গ্যাস অণু তুলনামূলক বড় ও ভারী হওয়ায় এটি অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম বলে জানান আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য পদার্থবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ এমিলি ক্যাফ্রি। তিনি আরও বলেন, হামলার ফলে বিকিরণ বা দূষণ ওই স্থানেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ