মাধ্যমিক তথা এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে বাল্যবিবাহের যে চিত্র উন্মোচিত হইয়াছে, উহাতে বিস্মিত হইবার অবকাশ সামান্যই। ইতোপূর্বে বিবিধ সমীক্ষায় উঠিয়া আসিয়াছে, দেশের অধিকাংশ কন্যার শৈশবেই বিবাহ সম্পন্ন হয়। বাল্যবিবাহের প্রথম কুপ্রভাব হইতেছে, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা হইতে ঝরিয়া পড়া। তবে এই বৎসর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড যেইভাবে এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ লইয়াছে, উহা সাধুবাদযোগ্য। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যদিও শিক্ষা বোর্ডের নিকট অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণ উপস্থিত হয় নাই, তদুপরি যাহাদের তথ্য জানা গিয়াছে, তাহাতে দেখা যাইতেছে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিবাহের পিঁড়িতে বসিয়াছে। যাগা উদ্বেগজনক, বিবাহিত এই সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫১ শতাংশ ঘোষণা করিয়াছে– তাহারা আর অধ্যয়নকার্য চালাইবে না।  

মাধ্যমিক পরীক্ষাটি শিক্ষার প্রথম আনুষ্ঠানিক পরীক্ষারূপে যথেষ্ট গুরুত্ব পাইয়া থাকে এবং নবম শ্রেণিতেই এই পরীক্ষার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। দশম শ্রেণির পর এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয় বলিয়া এই সময়ে শিক্ষার্থীরা ষোড়শ বৎসরে উপনীত হয়। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘের জনসংখ্যা-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর ২০২৫ সালের বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, দেশে এখন ১৮ বৎসর পূর্ণ হইবার পূর্বেই ৫১ শতাংশ কন্যার বিবাহ হইয়া যায় এবং ১৫ হইতে ১৯ বৎসর বয়সী কিশোরীরা ইতোমধ্যে সন্তান জন্মদান করিয়া থাকে। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, ২১ শিক্ষার্থী গর্ভধারণ হেতু পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। 

ইতোপূর্বে এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বারংবার বাল্যবিবাহ লইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছি। আমরা মনে করি, অল্প বয়সী কন্যাদের বিবাহের মাধ্যমে কেবল তাহাদের শৈশবই কাড়িয়া লওয়া হইতেছে না; তৎসহিত তাহাদের শিক্ষার অধিকার হইতেও বঞ্চিত করা হইতেছে। এতদ্ব্যতীত অল্প বয়সে গর্ভধারণের কারণে তাহাদের জীবনকে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ করিয়া তোলা হয়, যাহা শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের জটিলতা এবং মৃত্যুঝুঁকিকে বৃদ্ধি করে। এমনকি এই সকল শিশু অল্প বয়সে শ্বশুরালয়ে গমনের কারণে পরিবার ও সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাহাদের মানসিক সংকট বৃদ্ধি পায়, যাহা অভিভাবকদের অবজ্ঞা করিবার অবকাশ নাই। তজ্জন্য কন্যাদের শিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ অত্যাবশ্যক। শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখিতে উল্লিখিত বিবাহিতদের বিদ্যায়তনে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি উপেক্ষা করা চলিবে না। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিবেদনে বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই পরিস্ফুট, যথায় অনুপস্থিত বিবাহিতদের ৪৯ শতাংশ পরবর্তী বৎসরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করিয়াছে। আমরা বিশ্বাস করি, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ উদ্যোগী হইয়া এই সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষাজীবনে প্রত্যাবর্তনে উদ্যোগী হইবে।

প্রতিবেদনে ইহাও আসিয়াছে, পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ পারিবারিক অসচ্ছলতায় কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হইবার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে পারে নাই। ১০ বৎসর অধ্যয়নের পর ফরম পূরণ করিয়াও আর্থিক সংকটে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে ব্যর্থ হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বলা বাহুল্য, এই আর্থিক অসচ্ছলতাও কন্যাদের বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ। তজ্জন্য এই ক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্রের কার্যকর সহযোগিতা জরুরি। অনেক সময় শিক্ষার্থীর অধ্যয়নের অভিপ্রায় সত্ত্বেও পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে রূঢ় বাস্তবতাকে গ্রহণ করিতে হয়। তাহাদের চিত্রও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গুরুত্বের সহিত উঠিয়া আসা জরুরি। 
বাল্যবিবাহ যে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এই প্রতিবেদন উহাই প্রমাণ করিয়াছে। আমরা প্রত্যাশা করি, এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে যেই কার্যক্রম সূচিত হইয়াছে, উহা অব্যাহত থাকিবে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড এই ব্যাপারে উদ্যোগী হইবে। বাল্যবিবাহের সমস্যা সঠিকভাবে জনসমক্ষে আসিলে উহার টেকসই সমাধানের পথও সহজ হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় অ পর ক ষ র কর য় ছ আস য় ছ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

বেরোবির স্নাতকে ভর্তি শুরু রবিবার

‎গুচ্ছভুক্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম রবিবার (৩ আগস্ট) থেকে শুরু হবে। চলবে ৭ আগস্ট পর্যন্ত।

‎শুক্রবার (১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

‎বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট লিংকে গিয়ে নিবন্ধন ও সাইন আপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করবেন। এরপর নির্ধারিত ভর্তি ফি নগদ বা বিকাশের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। চূড়ান্ত ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যারা

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ করায় ছাত্রদল সভাপতিকে ‘মিথ্যাবাদী’ বললেন উপাচার্য

‎বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার পঞ্চম মাইগ্রেশনের পর যারা বেরোবিতে ভর্তি হতে চায়, তাদের এসএসসি ও এইচএসসির মূল সনদ, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের তিনকপি ফটোকপি, পূরণকৃত ভর্তি ফরমের তিনকপি, প্রাথমিক ভর্তি ফি ও কেন্দ্রীয় ভর্তি ফি জমাদানের রশিদের তিনটি করে ফটোকপি, এসএসসি ও এইচএসসি ট্রান্সক্রিপ্টের তিনটি করে ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের তিনকপি রঙিন ছবি নিজ নিজ বিভাগে জমা দিতে হবে।

‎এছাড়া, গুচ্ছভুক্ত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে ভর্তি হয়ে যারা মূল নম্বরপত্র বেরোবিতে জমা দিয়েছেন, তাদেরকে ২ থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে নিজ দায়িত্বে সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে।

ঢাকা/‎সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল শাবিপ্রবি প্রশাসন
  • এসএসসি পরীক্ষার প্রয়োজন ও কার্যকারিতা কতটুকু
  • বেরোবির স্নাতকে ভর্তি শুরু রবিবার