চার দশক ধরে কলা বেচে চলে হরিচরণের সংসার
Published: 20th, June 2025 GMT
দুপুরের কড়া রোদ আর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। এমন অবস্থার মধ্যেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকসংলগ্ন সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হরিচরণ দাস (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ। তাঁর মাথায় রংচটা একটি ছাতা, যা সামনের ঠেলাগাড়ির এক পাশে বাঁধা। আর গাড়ির প্রায় পুরোটায় সাজানো আছে কলা। জানতে চাইলে মুচকি হাসি দিয়ে বলেন, ‘কষ্ট কইরা কলা বেইচ্যা সংসার চালাইয়া আইরাম।’
সম্প্রতি এক দুপুরে হরিচরণের সঙ্গে কথা হয়। হরিচরণ বলেন, চার দশক ধরে তিনি কলা বিক্রি করেন। যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার।
আলাপে আলাপে হরিচরণ জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রায়পাড়ায়। প্রথম দিকে টুকরিতে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কলা বিক্রি করতেন। পরে আসেন সুনামগঞ্জ শহরে। সেখানে ফেরি করে কলা বিক্রি করেছেন। প্রায় ১২ বছর আগে একখানা লোহার ঠেলাগাড়ি জোগাড় করেন। তখন থেকেই এই গাড়িতে করে কলা বিক্রি করছেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় হরিচরণ পাড়ি জমান সিলেটে। পরিচিত এক দোকানদারের পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের পাশে ঠেলাগাড়িতে কলা বিক্রি শুরু করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
হরিচরণ বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তাঁর বেশ ভালো সম্পর্ক। তাঁরা দরদাম বেশি করেন না। যার যা ইচ্ছা দেন, অনেক সময় কম দিলেও কিছু বলেন না তিনি।
হরিচরণের প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার কলা বিক্রি হয়। বিক্রির টাকা থেকে ৮-৯ দিনের জন্য একবারে ২০-২৫ হাজার টাকার কলা কেনেন। সেগুলো ঠেলাগাড়িতে সাজিয়ে বিক্রি করেন প্রতিদিন। এই আয় থেকে সংসার চালানো, ওষুধপত্র কেনাসহ প্রায় সবটাই করেন তিনি।
হরিচরণের এক ছেলে ও তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। ছেলে প্রায়ই তাঁকে কাজ করতে মানা করেন। তবে সেই বারণ শোনেন না তিনি। এ বিষয়ে হরিচরণের ভাষ্য, ‘ছেলে কইব, তুমার অখন কাজ করন লাগত না। কিন্তুক আমি তো জানি, আমার কাম ছাড়া সংসার চলত না। এই ঠেলাগাড়িটাই আমার জীবন। যত দিন বাঁইচ্যা আছি ব্যবসা চালাইয়া যাইমু।’
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন হরিচরণ। এই বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়মিত কলা কেনেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আঙ্কেল (হরিচরণ) আন্তরিক। কখনো দাম নিয়ে ঝামেলা করেন না। বরং আমরা বেশি টাকা দিলে হাসিমুখে বলেন, “থাক, থাক, ঠিক আছে।”’
হরিচরণের প্রশংসা করেন পাশের দোকানদারেরাও। তাঁদের মধ্যে ইমন হোসেন নামের একজন বলেন, হরিচরণ খুব পরিশ্রমী মানুষ। তাঁর কারও সঙ্গে কখনো ঝামেলা হয় না। নিজের মতো করে ঠেলাগাড়িতে করে কলা বিক্রি করেন। তিনি সবার সঙ্গেই আন্তরিক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’