নাজমুল শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে গল টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ৪৯৫ রানের শক্ত জবাব দিচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিনের শেষ বেলায় ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা পাথুম নিশাঙ্কাকে তুলে নিয়ে লাগামে টান দেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন সকালে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিস ফিরলেও কামিন্দু মেন্ডিসে লিডের পথে ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে তাদের আউট করে ১০ রানে লিড নিয়েছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কা ১২৪ ওভারে ৬ উইকেটে ৪৬৫ রান নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল। বাংলাদেশের চেয়ে ৩০ রানে পিছিয়ে ছিল। কামিন্দু মেন্ডিস ৮৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ওই মেন্ডিস ৮৭ রানে ফেরেন। শ্রীলঙ্কা ৪৮৫ রানে অলআউট হয়। অর্থাৎ লাঞ্চের পর ২০ রান যোগ করে ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা।
কামিন্দুর সেঞ্চুরি মিস, নাঈমের ফাইফার: চতুর্থ দিনের শুরুতে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিস আউট হওয়ায় হাতে খুলে খেলতে শুরু করে কামিন্দু মেন্ডিস। তিনি সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তবে ৮৭ রান করে আউট হন। বাংলাদেশের ডানহাতি অফ স্পিনার নাঈম হাসান ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন। লাঞ্চের পরে লঙ্কানদের হারানো ৪ উইকেটের তিনটিই নিয়েছেন তিনি।
কামিন্দু-ধনাঞ্জয়ার জুটি ভাঙলেন নাঈম: পাথুম নিশাঙ্কা আউট হওয়ার পর নির্ভার ব্যাটিং করে তৃতীয় দেন শেষ করেন কামিন্দু মেন্ডিস ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। কামিন্দু ৩৭ ও ডি সিলভা ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। চতুর্থ দিন সকালে লঙ্কান অধিনায়ককে তুলে নেন নাঈম হাসান। তিনি ২ রান যোগ করতে পারেন। পরেই হাসান মাহমুদ কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন। তিনি ৫ রান করেন।
নিশাঙ্কার ডাবলের স্বপ্ন ভঙ্গ: লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন ভেঙেছেন বাংলাদেশের পেসার হাসান মাহমুদ। সাজঘরে ফেরার আগে নিশাঙ্কা দাপুটে ব্যাটিং করেছেন। তিনি ২৫৬ বলে ১৮৭ রান করে বোল্ড হন। ২৩ চার ও এক ছক্কায় ইনিংস সাজান। ৭৩.
মুমিনুলের শিকার ম্যাথুস: ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলছেন অ্যাঞ্জেল ম্যাথুস। বিশ্বকাপে তাকে টাইমড আউট করেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাথুসকে গার্ড অব অনার দেয় টাইগাররা। ক্রিজে এসে ৬৯ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৯ রান করে মুমিনুলের বলে আউট হয়েছেন তিনি।
চান্দিমালকে ফেরালেন নাঈম: নিশাঙ্কা ও চান্দিমাল ১৫৭ রানের জুটি গড়েন। ওই জুটি ভাঙেন নাঈম হাসান। ১১৯ বলে চারটি চারের শটে ৫৪ রান করেন লঙ্কান এই ব্যাটার। দলের হয়ে প্রথম উইকেটটি নেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনি ওপেনার লাহিরু উদারাকে ২৯ রানে আউট করেন।
পাঁচশ’ হলো না বাংলাদেশের: গল টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৯ উইকেটে ৪৮৯ রান নিয়ে শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন সকালেই ইনিংস ঘোষণার সম্ভাবনা ছিল। তবে ব্যাটিংয়ে নামেন পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। তারা মাত্র ৩.৪ ওভার টিকতে পারেন, যোগ করেন ৬ রান। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ৪৯৫ রানে বড় অবদান মুশফিকুর রহিম, নাজমুল শান্ত ও লিটন দাসের। এর মধ্যে মুশফিক ৩৫০ বল খেলে ১৬৩ রান করেন। শান্ত ১৪৮ রান করে ফিরে যান। সেঞ্চুরির আক্ষেপে পুড়তে হয় লিটন দাসকে (৯০)। প্রথম ইনিংসে লঙ্কান পেসার আসিথা ফার্নান্দো ৪টি এবং মিলান রত্নায়েকে ৩ উইকেট নেন। স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েনে নেন ৩ উইকেট।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গল ট স ট র ন কর প রথম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
শুক্রবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, “একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘর পানিতে পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।”
আরো পড়ুন:
হঠাৎ বন্যা, পানির নিচে চলনবিলের ১১৩ হেক্টর জমির ধান
দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে
বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, “গতকাল সকাল থেকেই নদীতে পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।”
বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, “প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।”
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, “উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। আজ দুপুরে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এ মূহূর্তে বিপৎসীমার ৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।”
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।”
২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
ঢাকা/সাহাব/মাসুদ