ফেনীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৯টি গ্রাম প্লাবিত
Published: 20th, June 2025 GMT
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর দুটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। এতে ফুলগাজী উপজেলার অন্তত ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বণিক পাড়া গ্রামের সহদেব বৈদ্যের বাড়ি-সংলগ্ন মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ এবং গোসাইপুর এলাকা অংশে সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে উপজেলার উত্তর বড়ইয়া, দক্ষিণ বড়ইয়া, বিজয়পুর, বণিকপাড়া, বসন্তপুর, জগৎপুর, গোসাইপুর, করইয়া ও নীলক্ষী গ্রাম প্লাবিত হয়।
এর আগে সন্ধ্যায় ফুলগাজী বাজারের গার্ডওয়াল উপচে মুহুরী নদীর পানি বাজারে প্রবেশ করে। রাতভর ফুলগাজী বাজার হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত থাকলেও আজ শুক্রবার ভোর থেকে বাজারের পানি কমতে শুরু করে। সকালের মধ্যে পুরো বাজার থেকে পানি নেমে যায়।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো.
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, মুহুরী নদীর বণিকপাড়া বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পুকুর ও মৎস্য খামার ভেসে গেছে। জমিতে এখন ফসল না থাকলেও কিছু জমিতে আগাম জাতের বীজ ধান রোপণ করা হয়েছিল, সেগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী ফুলগাজী বাজারও হাঁটুসমান পানিতে ডুবে গেছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ীদের। এ কথা জানিয়ে ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, দোকানে পানি ঢুকলে বেশির ভাগ মুদি মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। তাঁর মতো ছোট-বড় শতাধিক দোকানের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
মধ্যরাতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, নদীর পানি ১০ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেই মাটির বাঁধগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়া আশঙ্কা থাকে বলে পাউবো তাঁকে অবগত করেছে। নতুন করে বাঁধের আর কোনো অংশ যেন না ভাঙে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, পাউবোর কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। মুহুরী বাঁধের যে অংশটি ভেঙেছে, সেটি আরসিসি ঢালাই করা। মাটির বাঁধের ওপর করা আরসিসি ঢালাইও ধসে পড়েছে। পানি না কমলে তাৎক্ষণিকভাবে এটি মেরামত করা সম্ভব নয়। নদীতে পানি কমলে দ্রুত ভাঙন অংশ মেরামত করা হবে।’ আক্তার হোসেন আরও বলেন, ‘মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর ওপর ১২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করে নতুন বেড়িবাঁধ তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি তৈরি হলে এই অঞ্চলের মানুষের বন্যার স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
এদিকে আগামী কয়েক দিন ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে ফেনী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উচ্চমান সহকারী) মজিবুর রহমান বলেন, ফেনীতে আজ সকাল পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নদ র ব র ওপর ইসল ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৬ গ্রাম প্লাবিত
ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ১০টার দিকে মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া এলাকার বণিকপাড়া ও সিলোনিয়া নদীর গোসাইপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
শুক্রবার (২০ জুন) সকাল পর্যন্ত উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বসন্তপুর, জগতপুর, বাসুড়া ও বিজয়পুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুসমান পানি জমে। বাঁধ ভাঙার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বছরের পর বছর ধরে দায়সারা কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর বরইয়ার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, “একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘর পানিতে পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব বুঝতে পারছি না।”
আরো পড়ুন:
হঠাৎ বন্যা, পানির নিচে চলনবিলের ১১৩ হেক্টর জমির ধান
দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে
বরইয়া এলাকার বাসিন্দা রাকিব বলেন, “গতকাল সকাল থেকেই নদীতে পানি বাড়ছিল। স্থানীয়রা মিলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই আবারো সেই দুঃস্বপ্ন ফিরে এসেছে।”
বসন্তপুর বাজারের ব্যবসায়ী রাশেদ বলেন, “প্রতি বছর জুন-জুলাইয়ে এমন হয়। একটু বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। দোকানের পণ্য ভিজে যায়, বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ি। অভিযোগ করে লাভ নেই। এখন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি।”
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “গতকাল রাত ১০টার দিকে উত্তর বরইয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে অন্তত চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কম থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকায় অবস্থান করছেন। পানি নেমে গেলে সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, “উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে কাজ চলছে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির চাপেই বাঁধ দুটি ভেঙেছে। আজ দুপুরে পানি নামতে শুরু করেছে। নদীর পানি এ মূহূর্তে বিপৎসীমার ৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।”
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।”
২০২৪ সালের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জন প্রাণ হারান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ প্রায় সব খাত। পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
ঢাকা/সাহাব/মাসুদ