হাঙরের পুরো দেহে অক্সিজেন, তাপ ও পুষ্টি পৌঁছানো বেশ জটিল একটা কাজ। এ কাজ করার জন্য হাঙর বিশেষ একটি গাণিতিক নিয়ম অনুসরণ করে বলে জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্সে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন গবেষণায় দেখা যায়, হাঙররা শতাব্দী প্রাচীন একটি গাণিতিক নিয়ম অনুসরণ করে নিজেদের দেহকে সংরক্ষণ করছে। ‘টু থার্ড স্কেলিং ল’ বা দুই-তৃতীয়াংশ স্কেলিং আইন বেশ ভালোভাবেই অনুসরণ করছে হাঙররা। গাণিতিক ধারণার মূল বিষয়টি হচ্ছে, পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি হয় দৈর্ঘ্যের বর্গের সমানুপাতিক হারে। তখন আয়তন ঘনক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। যার অর্থ, আয়তনের চেয়ে পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। উভয়ের মধ্যে অনুপাত অনেক জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হাঙরের জন্য এই নিয়ম গুরুত্বপূর্ণ। অনেক জীবনপ্রক্রিয়া হাঙরের পৃষ্ঠে ঘটে। ফুসফুস বা ফুলকায় অক্সিজেন গ্রহণ বা কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন ঘটে। অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা হাঙরের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে জানিয়েছেন, ত্বকের মাধ্যমে তাপ হ্রাস করে হাঙর। এসব প্রক্রিয়া পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলের ওপর নির্ভর করে। শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করার গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য আয়তনের ওপর নির্ভর করে হাঙর। পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তনের অনুপাত প্রাণীদের কার্যকারিতা নির্ধারণ করে।
জীববিজ্ঞানে এ গাণিতিক হিসাবের বেশ প্রভাব দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা আগে এ নিয়ম কেবল কোষ, টিস্যু ও পোকামাকড়ের মতো ছোট জীবের ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করেছেন।
এই গাণিতিক তত্ত্ব হাঙরের মতো বৃহৎ গোষ্ঠীর ওপর পরীক্ষা করা বেশ বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। শুরুতে বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র বামন ল্যান্টার্ন হাঙর পর্যবেক্ষণ করেন। প্রায় ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এ হাঙর। এরপর বিজ্ঞানীরা তিমি হাঙর পর্যবেক্ষণ করেন। এই হাঙর ২০ মিটারেরও বেশি লম্বা হতে পারে। বিভিন্ন আকার অনুসারে হাঙরের বিভিন্ন জীবনধারা দেখা যায়। একেকটি হাঙরের পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বিভিন্ন অভিযোজন ক্ষমতা বিকশিত হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে হাঙরদের বেঁচে থাকার জন্য গণিতের মতো বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে।
বিজ্ঞানী জোডি এল রামার বলেন, ‘আমরা ৫৪ প্রজাতির হাঙরের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তন ডিজিটালভাবে পরিমাপ করার জন্য উচ্চ রেজল্যুশনের থ্রি–ডি মডেল ব্যবহার করেছি। এসব মডেল ওপেন সোর্স সিটিস্ক্যান ও ফটোগ্রামেট্রি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এই কৌশল ভিডিও গেম ডিজাইনাররা বেশ ব্যবহার করেন। আমরা ব্লেন্ডার নামের একটি শক্তিশালী থ্রি–ডি সফটওয়্যার টুল দিয়ে ছবি পরিমার্জিত করেছি। প্রতিটি প্রজাতির পৃষ্ঠ ও আয়তনের ডেটা বের করেছি। ফাইলোজেনেটিক রিগ্রেশন প্রয়োগ করে হাঙরের আকারের জন্য গণিতের প্রভাব বের করেছি। ফলাফলে দেখা যায়, হাঙররা প্রায় নিখুঁতভাবে দুই-তৃতীয়াংশ স্কেলিং নিয়ম অনুসরণ করে। হাঙরের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল শরীরের আয়তনের সমানপুাতিক হিসেবে দেখা যায়।
বিশাল আকার ও আবাসস্থল থাকা সত্ত্বেও পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ও আয়তনের ক্ষেত্রে সব হাঙর একই নিয়ম অনুসরণ করছে। বিজ্ঞানী জোডি এল রামার ও জোয়েল গেফোর্ড ব্যাখ্যায় বলেন, যেকোনো প্রাণীর বৃদ্ধির জন্য একটি নিয়ম অনুসরণ করতে দেখা যায়। প্রাথমিক জীবনে প্রাণী কীভাবে বৃদ্ধি পায় ও বিকশিত হয়, তা এই সীমাবদ্ধতার নিয়মকে অনুসরণ করে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
টেকনাফে দুই নৌকার সংঘর্ষে জেলে নিহত
কক্সবাজারের টেকনাফে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে মাছ ধরার দুই নৌকার সংঘর্ষে হেলাল উদ্দিন (২২) নামের এক জেলে নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে সদর ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন খোনকার পাড়া নারকেল বাগান নৌকা ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হেলাল উদ্দিন পশ্চিম খোনকার পাড়ার মো. সেলিমের ছেলে। টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোকন কান্তি রুদ্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিক উদ্দিন বলেন, ‘‘সাগরে মাছ ধরে ফিরছিল দুটি নৌকা। তীরে ভেড়ার সময় সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে দুই নৌকার সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন জেলে আহত হন। এর মধ্যে, গুরুতর আহত হেলাল উদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।’’
ঢাকা/তারেকুর/রাজীব