আতঙ্ক ভর করেছে ইসরায়েলিদের দৈনন্দিন জীবনে
Published: 20th, June 2025 GMT
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হচ্ছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষয়ক্ষতি প্রত্যক্ষ করে হতবাক ইসরায়েলের নাগরিকরা। মনোবল হারিয়ে তাদের দৈনন্দিন জীবনে আতঙ্ক ভর করছে। অনেকে এ অবস্থার জন্য সরকারের ইরানে হামলার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। গত বুধবার থেকে স্বল্প পরিসরে কিছু অফিসের কার্যক্রম শুরু হলেও দেশটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্যান-ইউরোপীয় টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক ইউরোনিউজ ইসরায়েলের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে জীবনযাপন করার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
তেল আবিবের দক্ষিণের শহর হলনে বিমান হামলার সাইরেন বাজলে ছোটাছুটি শুরু হয় প্যারামেডিক স্বেচ্ছাসেবক জিমির। জরুরি কর্মীদের সঙ্গে তাকে ঘটনাস্থলে ছুটতে হয়। ৩৬ বছর বয়সী আরব-ইসরায়েলি জিমি বলেন, বৃহস্পতিবার জরুরি কর্মীদের সঙ্গে গাড়িতে উঠে যখন ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে যাই, তখন বুঝতে পারি এটি তো আমারই ভবন। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় চিনতেও কষ্ট হচ্ছিল।
ইসরায়েল ও ইরানের প্রকাশ্য সংঘাতের ষষ্ঠ দিন বুধবার থেকে দেশটিতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। কিছু অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং সড়কগুলো জনমানবশূন্য রয়েছে। ইসরায়েলের অনেকের জন্য এই পরিস্থিতিতে সন্তান লালনপালন করা কঠিন।
৩০ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক এমা তার আরব-ইসরায়েলি স্বামী ও ১০ মাস বয়সী ছেলের সঙ্গে দক্ষিণ তেল আবিবের জাফায় থাকেন। তিনি বলেন, আমাদের ভবনে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র নেই। এ জন্য প্রতিদিন রাতে আমরা শাশুড়ির বাড়িতে ঘুমাতে যাই।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমার মনোবল বেশির ভাগ ইসরায়েলিদের চেয়ে ভালো। এর কারণ হলো, আমি বিশ্বাস করি না যে সরকার যা করছে তা সঠিক। তাই, আমি বুঝতে পারছি কেন আমরা এই অবস্থার মধ্যে আছি।’
৩৪ বছর বয়সী নিতজান একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। ইরান ও ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সংঘাতের মধ্যে তিনি তেল আবিব থেকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের হাইফায় স্থানান্তরিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আমরা যে শব্দ শুনতে পাচ্ছি, তা হামাস বা হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের শব্দের চেয়ে অনেক আলাদা। মনে হচ্ছে, যেন একটি ট্রাক আপনার মাথার ওপর দিয়ে একটি সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
ইসরায়েলের অনেকেই দোকানে যাওয়া বা বাড়ির বাইরে প্রয়োজনীয় কাজ করার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের কবলে পড়ার ভয়ে থাকেন। হামলার আগে সাইরেন বাজলেও দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের আস্থা কমেছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, সংঘাতের প্রথম সপ্তাহে ইরানের হামলায় প্রায় ২৪ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। সেখানে ২ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানি অধিকার গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইরানে কমপক্ষে ৬৫৭ জন নিহত হয়েছেন।
তেল আবিবে বসবাসকারী একজন শিক্ষিকা ওরিয়েলা ইউরোনিউজকে বলেছেন, তিনি ক্লান্ত বোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘কোনো রাত নেই, দিন নেই। আপনার মাথা উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভরা। কারণ, আপনি মানসিকভাবে ক্লান্ত, আমরা বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধে আছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধ পছন্দ করি না, আমি কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাস করি। আমার মনে হয়, ইরানের সঙ্গে আমাদের এটা করার চেষ্টা করা উচিত। মানুষ এত কষ্ট ভোগ করছে এবং কেন? বারবার যুদ্ধ, বারবার, আবার’ বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ওরিয়েলা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
‘৭০ ভাগ জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে’
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। এরপর ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। সেই জনগণের ৭০ ভাগ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে রয়েছে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে খুলনা নগরের ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বরে জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘একটি দলের কেউ কেউ বলছেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা বলতে পারেন না। তাই পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে নাকি বিপক্ষে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায়, তাহলে আমরা মেনে নেব। কিন্তু তারা তো গণভোটকে ভয় পাচ্ছে। পিআরের মধ্য দিয়ে সবার অংশীদারির ভিত্তিতে যদি পেশিশক্তি ও কালোটাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট হয়, সরকার গঠন হয়, তাহলে কোনো দলের পক্ষে ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। তাই তারা পিআর ঠেকাতে চায়।’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরের আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ শাহ আলম ও শেখ জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক আবদুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলার আমির মাওলানা এমরান হুসাইন প্রমুখ।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আর্টিকেল ৭-এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। এখন যদি দুই-তিন মাস আলোচনার পর একটি দল বলে যে এটা পরে হবে, তাহলে কেন এত পরিশ্রম করালেন? সে জন্যই বলছি আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। আমাদের রাজনীতি জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য। আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তির জন্য আশাবাদী। আমরা নিরাশ নই।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আপনারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মেনটেইন করতে পারছেন না। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কীভাবে? তাই আমাদের দাবি—আপনারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন। সাংবিধানিক অর্ডার জারি করুন। গণভোট দিন। ফ্যাসিবাদের কার্যক্রম স্থগিত করুন। আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার করবেন। আমাদেরও দাবি নির্বাচনের আগেই তা দৃশ্যমান করতে হবে।’
মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, ‘এই সংস্কার যদি এখন না হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য যদি ঠিক করা না হয়, আর তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেবে না।’
পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শুরু হয়ে ফেরিঘাট মোড়, পাওয়ার হাউস মোড় ও সংগীতার সামনে দিয়ে শিববাড়ী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।