ইরানে পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প, বিপ্লবী গার্ডের ‘পরীক্ষা চালানোর’ গুঞ্জন
Published: 21st, June 2025 GMT
ইসরায়েলের একের পর এক বিমান হামলার মধ্যেই ইরানের উত্তরাঞ্চলে ৫ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
ভূমিকম্পটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরে এবং ইরানের সেমনান শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার (২৩ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে সংঘটিত হয় বলে ইউএসজিএস জানায়। তবে ইরানের তাসনিম বার্তা সংস্থা ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ২ বলে জানিয়েছে।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, ইরানের কোম প্রদেশে অবস্থিত ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার কাছাকাছি ভূমিকম্প আঘাত হানে।
ভূমিকম্পের প্রভাব রাজধানী তেহরান পর্যন্ত পৌঁছায়। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল সেমনান শহর। এটি তেহরান থেকে প্রায় ১৪৫ মাইল পূর্বে। কম্পনের তীব্রতা হালকা ছিল এবং এ পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ছড়িয়েছে পরীক্ষার গুঞ্জন
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ভূমিকম্প ঘিরে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। একজন ইরানি ব্লগারের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) হয়তো কোনো কিছু ‘পরীক্ষা’ করছিল। তবে এ দাবি এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম মিরর ইউএস।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-জার্মানির অস্ত্র নিয়ে ১৪ কার্গো বিমান ইসরায়েলে ৫ ঘণ্টা আগেইরানের প্রধান গণমাধ্যমগুলো ভূমিকম্পের খবর দিলেও ‘পরীক্ষা’ নিয়ে কিছু জানায়নি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কেউ ৫ দশমিক ২ মাত্রা, কেউবা ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।
ভূমিকম্পের প্রভাব রাজধানী তেহরান পর্যন্ত পৌঁছায়। ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র ছিল সেমনান শহর। এটি তেহরান থেকে প্রায় ১৪৫ মাইল পূর্বে। কম্পনের তীব্রতা হালকা ছিল এবং এ পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।তেহরানে কম্পন অনুভূত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থানের কারণে ইরানে এমন কম্পন নতুন কিছু নয়।
একই সময় ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমগুলো। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেটনিউজ ডটকম বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমের বেহমাই প্রদেশে ‘মাগার’ নামের একটি ইরানি বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুননতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি ইরান, দেশটির হামলার প্রধান বৈশিষ্ট্য কী১৬ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইরানের সমর্থনে ইরাক, তুরস্ক, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ৯ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র ৫ দশম ক ইসর য় ল পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকারীদের প্রত্যাখ্যানের আহ্
নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়রত দলগুলোকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন’ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আয়না ঘরের কারিগর, গুম-খুন, হত্যার দোসর খুনি হাসিনা ২৪-এর এই দিনে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। দেশের টাকা যারা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের উৎখাতে ছাত্র-জনতা যখন দেশের সব অলিগলিতে আওয়াজ তুলেছিল, আবু সাঈদ দু’হাত উঠিয়ে বুক পেতে দিয়েছিল। এমনকি মা-বোনেরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমেছিল, তখন মুগ্ধের ‘পানি লাগবে’ সেই আওয়াজ এখনো কানে ভাসে।”
তিনি বলেন, “এত ত্যাগ, এত রক্ত, এত জীবন দেওয়ার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল আর কোনো স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, টাকা পাচারকারী, আয়না ঘর তৈরির কারিগরের জন্ম যেন না হয়। আমরা ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই সেসব ক্ষমতা লোভীদের, যারা চাঁদাবাজির মাধ্যমে, স্ট্যান্ড দখল, জায়গা দখল করে নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়রত। তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।”
“তারা কী শিশুদের আত্মচিৎকার শুনতে পায়নি? হাজার হাজার মায়ের কোল খালি হয়েছে, হাজারো মেধাবী ছাত্ররা শহীদ হয়েছে, পূর্বের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য? যারা বিগত দিনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের দেশবাসী পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায় না,” যুক্ত করেন আমির।
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, “এদেশ আমার, এদেশকে সুন্দর করার দায়িত্বও আমার। আসুন সবাই মিলে সন্ত্রাস, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজদের উৎপাত করি। বিদেশি তাবেদারদের চিরতরে কবর রচনা করতে করি। সবাই একাকার হয়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাই।”
দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।
এছাড়া বক্তব্য দেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল মজুমদার, ছাত্রনেতা মুনতাসির আহমদ, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মুফতী মাছউদুর রহমান, যুবনেতা হাম্মাদ বিন মোশাররফ, শ্রমিকনেতা হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানিয়া।
মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ ও ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, আলহাজ্ব মনির হোসেন, আমিরুল হক, হাফেজ মাওলানা ইউনুছ ঢালী প্রমুখ।
অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ সেখ বলেন, “১ বছর পূর্বে শত শত মানুষ শহীদ হয়েছিল, মানুষের চোখের পানি ঝড়েছিল, স্বপ্ন ছিল একটি সুন্দর, স্বাধীন বাংলাদেশের। আমরাও আশাবাদী ছিলাম, যারা শাহাদাত বরণ করেছে, তাদের ক্ষমতার লোভ ছিল না, পদের লোভ ছিল না। তাদের চাওয়া ছিলো দেশের মানুষ যেন ভাল থাকে। আসুন সবাই মিলে দেশটাকে ভালভাবে গড়ি। কিছু মানুষ চাচ্ছে দ্রুত চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বৈধতা। ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মাদের মধ্যে পিআর-এর কোনো অনুভুতি জাগ্রত হয় না। সংস্কার ও গণহত্যার বিচার তারা চায় না।” তিনি পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল দেশকে নতুনভাবে গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জনআকাঙ্ক্ষার সঞ্চার হয়েছে। পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বে রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত হবে। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে।”
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুতপ্ত হওয়া উচিত। সব রাজনৈতিক দল মিলেও ফ্যাসিবাদী ও খুনি হাসিনাকে পদচ্যুত করা যায়নি। কিন্তু ছোট ছোট ছাত্ররা তাদের জীবনের বিনিময়ে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। সব কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার। আজ যারা ছাত্রদের আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে, তাদের উদ্দেশ্য কেবলই ক্ষমতা।”
প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, “জুলাই আন্দোলনের আমাদের মিছিলে সরাসরি গুলি করে আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনা। আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশগড়ার আন্দোলন গড়ে তুলেছি পুনরায় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য নয়।” তিনি ছাত্র-জনতার চাওয়া পাওয়া বৈষম্যহীন কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, “ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য এবং খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার মৌলিক অধিকারের জন্য জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। যারা দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ান হয়েছে, তারা পরীক্ষিত শোষক ও জালেম। তাদের আমলেও মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। এরশাদ, হাসিনা ও খালেদা সবাইকেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করতে হয়েছে।”
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিল মুফতি রেজাউল করীরে নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব কদম ফোয়ারা হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
দুপুর আড়াইটা থেকে জুলাই বিপ্লবের ডকুমেন্টরি প্রদর্শন এবং জাতীয় সাংষ্কৃতিক সংগঠন কলরব, মানযিল, সুরের তরীর বরেণ্য শিল্পীদের কণ্ঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবশেষে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জুলাই যোদ্ধাদের স্মরণে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম আলোচনা করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী