তেলের দাম কমেছে, যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সময় নেওয়ার ফল
Published: 21st, June 2025 GMT
ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা শুরু করায় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। সংঘাত যত গভীর হয়েছে, ততই বেড়েছে তেলের দর। তবে সংঘাতের এক সপ্তাহ পেরোতেই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র—অপরিশোধিত তেলের দামে কিছুটা স্বস্তি।
গতকাল শুক্রবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে ২ শতাংশের বেশি। ফলে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম হয়েছে ৭৭ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার। গতকাল দাম কমলেও গত এক সপ্তাহে সামগ্রিকভাবে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। আজ শনিবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আরও কিছুটা কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৭ দশমিক শূন্য ১ ডলার হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাম কমার প্রবণতা খুব স্থায়ী না–ও হতে পারে। ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের কারণে তেলের বাজার অত্যন্ত অস্থির। এই অস্থিরতা চলমান থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার তেলের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়, কিন্তু শুক্রবার সকালে তা আবার হঠাৎ কমে আসে। শনিবারও সেই ধারা অব্যাহত আছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সংবাদে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান যতটা সম্ভব দ্রুত তেল বাজারজাত করতে চাইছে।
ডিএনবি মার্কেটসের বিশ্লেষক হেল্গে আন্দ্রে মার্টিনসেন বলেন, ইরান আরও বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত তেল রপ্তানি কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব বাজারে তেল ছাড়া যায়, সেই লক্ষ্যে।
এদিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপট থেকে মুক্তি মিলছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু অশুল্ক বিষয়ে সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছালেও উভয় পক্ষের ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জানিয়েছেন, কেবল শুল্কসংক্রান্ত মূল্যবৃদ্ধির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণে বাধা দেওয়া উচিত নয়; বরং জুলাই মাসেই সুদের হার কমানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীনে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া শীর্ষ সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারকদের দেওয়া বিশেষ ছাড়পত্র বাতিল করতে চায় তারা। বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্যনীতির জটিলতায় বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে।
তেলের দামে এই ওঠানামার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও বড় চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষমেশ দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সময় নেওয়ার কারণেই শুক্রবার তেলের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে পরবর্তী সময়ে বাজারের চোখ থাকবে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার দিকেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র অপর শ ধ ত ইসর য় ল দ ম কম
এছাড়াও পড়ুন:
এইচ-ওয়ান বি ভিসা ফি ১৫০০ থেকে এক লাখ ডলার করল ট্রাম্প প্রশাসন
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করতে এইচ-ওয়ান বি ভিসার বার্ষিক ফি ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলারে উন্নীত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আরো পড়ুন:
বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্সের যৌথ অনুশীলন সমাপ্ত
ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে যুক্তরাজ্যে
প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচ-ওয়ান বি একটি বিশেষ ভিসা কর্মসূচি, যার আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলো অস্থায়ীভাবে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি বা প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ৮৫ হাজার বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
মূলত বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল বিদ্যা এবং ব্যাবসায় প্রশাসনে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয় এ ভিসার আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল, গুগল প্রভৃতি বড় কোম্পানিগুলো এই ভিসা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। শত শত বিদেশি কর্মী এই কোম্পানিগুলোতে কাজ করেন। এতদিন কোম্পানিগুলোকে বছরে ১ হাজার ৫০০ ডলার ফি দিতে হতো। এখন তা বেড়ে ১ লাখ ডলার করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকর্মীদের স্টেম ওয়ার্কার বলা হয়। মার্কিন পরিসংখ্যান দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশটিতে বিদেশি স্টেম ওয়ার্কার সংখ্যা যত ছিল, এইচ-ওয়ান বি ভিসা কর্মসূচির চালু হওয়ার পর সেখানে আরো ২৫ লাখ বিদেশি স্টেম ওয়ার্কার যোগ হয়েছেন। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই কর্মীদের হার বেড়েছে ৪৪.৫ শতাংশ, যার অধিকাংশই ভারত ও চীন থেকে আসা।
শুক্রবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “বড় বড় কোম্পানিগুলো প্রতি বছর লাখ লাখ বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে আনছে। এই ভিসা ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা তাদের এই বার্তা দিতে চাই যে, যদি আপনারা দক্ষ কর্মী চান- তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়োগ করুন, অথবা মার্কিনিদের প্রশিক্ষিত করুন। বাইরের লোকজনদের আমাদের চাকরি কেড়ে নিতে দেবেন না।”
রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাত বড়সড় ধাক্কা খেতে চলেছে। বেশিরভাগ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই দক্ষ বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভর করে থাকে। বেশিরভাগ কর্মী যান ভারত এবং চীন থেকে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিয়মে আলাদা করে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যেকোনো দেশের দক্ষ কর্মচারীর ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তবে প্রধানত ভারত ও চিনের কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি পাওয়া এর পর কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে এইচ–ওয়ান বি ভিসা থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন ভারতীয় কর্মীরা। ভারত থেকে ৭১ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই আছে চীন। সেখান থেকে ১১.৭ শতাংশ ভিসার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
এইচ–ওয়ান বি ভিসার জন্য ফি এক ধাক্কায় এতটা বেড়ে যাওয়ায়, ভারত–সহ বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মী নিয়োগে কোম্পানিগুলো কতটা উৎসাহী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নিয়ে অ্যামাজন, অ্যাপেল, গুগল এবং মেটার মতো সংস্থা এখনও মুখ খোলেনি।
ঢাকা/ফিরোজ