ইসরায়েল গত সপ্তাহে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা শুরু করায় বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। সংঘাত যত গভীর হয়েছে, ততই বেড়েছে তেলের দর। তবে সংঘাতের এক সপ্তাহ পেরোতেই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র—অপরিশোধিত তেলের দামে কিছুটা স্বস্তি।

গতকাল শুক্রবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে ২ শতাংশের বেশি। ফলে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম হয়েছে ৭৭ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার। গতকাল দাম কমলেও গত এক সপ্তাহে সামগ্রিকভাবে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। আজ শনিবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আরও কিছুটা কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৭ দশমিক শূন্য ১ ডলার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাম কমার প্রবণতা খুব স্থায়ী না–ও হতে পারে। ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাতের কারণে তেলের বাজার অত্যন্ত অস্থির। এই অস্থিরতা চলমান থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার তেলের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়, কিন্তু শুক্রবার সকালে তা আবার হঠাৎ কমে আসে। শনিবারও সেই ধারা অব্যাহত আছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সংবাদে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইরান বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরান যতটা সম্ভব দ্রুত তেল বাজারজাত করতে চাইছে।

ডিএনবি মার্কেটসের বিশ্লেষক হেল্গে আন্দ্রে মার্টিনসেন বলেন, ইরান আরও বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত তেল রপ্তানি কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব বাজারে তেল ছাড়া যায়, সেই লক্ষ্যে।

এদিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপট থেকে মুক্তি মিলছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু অশুল্ক বিষয়ে সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছালেও উভয় পক্ষের ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার জানিয়েছেন, কেবল শুল্কসংক্রান্ত মূল্যবৃদ্ধির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণে বাধা দেওয়া উচিত নয়; বরং জুলাই মাসেই সুদের হার কমানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীনে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া শীর্ষ সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারকদের দেওয়া বিশেষ ছাড়পত্র বাতিল করতে চায় তারা। বিশ্লেষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্যনীতির জটিলতায় বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়তে পারে।

তেলের দামে এই ওঠানামার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও বড় চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষমেশ দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সময় নেওয়ার কারণেই শুক্রবার তেলের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে পরবর্তী সময়ে বাজারের চোখ থাকবে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার দিকেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র অপর শ ধ ত ইসর য় ল দ ম কম

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি ঢাকা-২০ আসনে, অপেক্ষায় ৪ নেতা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে, তালিকায় রাজধানীর প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, নাম ঘোষণা না করা আসনগুলো মিত্র দলগুলোর জন্য রাখা হতে পারে। যদিও এখনো আশা ছাড়েননি এই আসনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী চার নেতা-নেত্রী। তারা বলছেন, দল যাকেই প্রার্থী করবে, তার পক্ষেই কাজ করবেন।

আরো পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিজ্ঞদের ওপর আস্থা রাখল বিএনপি

দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল 

সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তমিজ উদ্দিন ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে তারা নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) দিনভর বৈঠকের পর সন্ধ্যায় ২৩৭টি আসনের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে দলের পক্ষ থেকে তালিকা প্রকাশ করা হয়। ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও ঢাকা-২০ সহ সাতটি আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

এ বিষয়ে তমিজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা আমি জানি না। এটা আসলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় জানবেন আর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জানবেন। আমি জানি যে আমারটা হয়ে আছে। এখন ঘোষণার সময় শুনলাম আপাতত স্থগিত। দল করি, ফলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু ভাবা যাবে না, করাও যাবে না। দেখি, অপেক্ষা করি। আমি এ নিয়ে চিন্তিত নই।” 

তিনি বলেন, “গুলশানে সাক্ষাৎকারে একটাই মূল কথা ছিল, যাকেই দেওয়া হোক, সবাই মিলেমিশে কাজ করবে। দল করি, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাই করতে হবে। আমি এখনও আশাবাদী। মনোনয়নের কর্তৃপক্ষ আছেন, তারা হয়তো খুঁটিনাটি দেখছেন। দল যখন করি, দলের বাইরে যাওয়া যাবে না।”

তমিজ উদ্দিনের সহযোগী ও ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, “এটা দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। হয়তো কোনো কারণে বাদ পড়েছেন তিনি। সিদ্ধান্ত তো হবেই। আমরা আশাবাদী। মাঠ তমিজ উদ্দিনের পক্ষে। বিএনপির সবাই মূল দলের। আর আমরাই মূল দল। তারপরও নেতারা আছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা শতভাগ আশাবাদী।”

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতানা আহমেদ বলেন, “আমি বর্তমানে দেশে নেই, ওমরাহ করতে এসেছি। ওখানে থাকলে হয়তো আরও ভালো বলতে পারতাম। সিদ্ধান্তটি হয়তো আরও গভীরভাবে যাবে, সেজন্যই এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আমি মনোনয়ন আশা করি, আমি আশাবাদী।”

মনোনয়নের আশায় আছেন তরুণ দুই নেতাও। তারা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, “দলের নিজস্ব চিন্তা চেতনা পরিকল্পনা রয়েছে। সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। আমি শতভাগ আশাবাদী। দল যখন ঘোষণা করবে, সবাই জানবে। আমি দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল, সেটি ধরে রেখে রাজনীতি করেছি। ভবিষ্যতেও সেটি অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি বলেন, “দল তারুণ্যের পক্ষে। আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। সেজন্য কাজ করছি। আশা করছি, দল ঢাকা-২০ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে আমাকে মনোনীত করবে।”

এদিকে, বিএনপির চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও অন্যান্য দলগুলো তুলনামূলকভাবে নির্ভার। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আব্দুর রউফ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আসাদুল ইসলাম মুকুল, গণঅধিকার পরিষদের রুবেল এবং এবি পার্টির অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।

ইতিহাস বলছে, প্রথম থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ধামরাই উপজেলা ছিল ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মোহাম্মদ ইদ্রিস, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির খান মোহাম্মদ ইসরাফিল এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার বিজয়ী হন বিএনপির ব্যারিস্টার মো. জিয়াউর রহমান খান।

২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর ধামরাই হয় ঢাকা-২০ আসন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বেনজীর আহমদ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয় পান এম এ মালেক। এরপর ২০১৯ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারো জয়ী হন বেনজীর আহমদ।

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ