তাদের হাতে থাকার কথা ছিল গ্লাভস আর প্রতিযোগিতার পদক। থাকার কথা ছিল দেশের গর্ব হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে জ্বলে ওঠা। কিন্তু সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল যুদ্ধের এক নির্মম আঘাতে।

সাম্প্রতিক ইসরায়েলি ড্রোন ও বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের দুই প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ— কারাতে খেলোয়াড় হেলেনা গোলামি ও বক্সার রুহুল্লাহ সালেক। এই দুই নাম এখন ক্রীড়াজগতের ট্র্যাজেডির প্রতীক।

লোরেস্তান প্রদেশের হেলেনা ছিলেন একজন পেশাদার কারাতে খেলোয়াড়, যার প্রতিভায় ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখেছিল ইরান। তাকে হারিয়ে কারাতে ফেডারেশন শুধু শোক প্রকাশ করেনি বরং ‘শহীদ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে তাকে। এ এক বিরল স্বীকৃতি, যেখানে খেলাধুলার গণ্ডি ছুঁয়ে গেছে জাতীয় আত্মত্যাগের আবহ।

আরো পড়ুন:

তেহরান থেকে প্রথম ধাপে দেশে ফিরবেন ২৫ জন

‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণে’ ইরানের মার্কিন হামলার সম্ভাব্য জবাব

অন্যদিকে আলবোরজ প্রদেশের বক্সার রুহুল্লাহ সালেক ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ। যার ঘাম ঝরানো পরিশ্রম থেমে গেল হঠাৎই, এক নিষ্ঠুর আক্রমণে। গত কয়েক দিনের মধ্যে তিনি তৃতীয় বক্সার যিনি এই সহিংসতায় প্রাণ হারালেন। এর আগে নিহত হয়েছেন সেয়েদ আলী বাঘেরনিয়া ও রেজা বাহরামি। তাদের গল্পগুলোও একই রকম করুণ, একই রকম অসমাপ্ত।

ইরানের ক্রীড়া ফেডারেশন ও বক্সিং সংস্থাগুলো একযোগে প্রকাশ করেছে গভীর শোক ও প্রতিবাদ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এটা শুধু খেলোয়াড়ের মৃত্যু নয়, এটা দেশের প্রাণ হারানো।’’

ইরান সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ১৩ জুন শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২২৪ জন নিহত, যাদের মধ্যে ৭৪ জন নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা পেরিয়েছে ১ হাজার ৮০০। এদের মধ্যেই অন্তত ২৬ জন ছিলেন ক্রীড়াবিদ। যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠ থেকে উঠে এসেছিলেন স্বপ্নের চোখে।

এই মৃত্যুগুলো শুধু সংখ্যা নয়। এরা ছিল স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, যারা মাঠে যুদ্ধ করতেন শান্তির জন্য। আজ তাদের হারিয়ে মাঠ নীরব, গ্যালারি স্তব্ধ, আর ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে রয়ে গেছে এক অমোচনীয় শোকরেখা। 

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক

সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। 
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক। 
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী,  অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে। 
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও 
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া। 
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়। 
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ