ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম
Published: 24th, June 2025 GMT
ইসলামী ব্যাংক ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির (আইবিটিআরএ) উদ্যোগে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ইন আইবিবিপিএলসি : স্পেশাল ফোকাস অন ম্যানেজারিয়াল লিডারশিপ শীর্ষক এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সম্প্রতি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ড.
ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মিজানুর রহমান মিজির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এনএসএম রেজাউর রহমান। রিসার্চ পেপার উপস্থাপন করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমা বেগম। অনুষ্ঠানে ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মাহমুদুর রহমান ও মো. মাকসুদুর রহমানসহ প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, জোন ও শাখাপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসল ম ব য ক র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
পানির নিচে চলবে, এমন রোবট তৈরি করছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা, অংশ নেবেন যুক্তরাষ্ট্রের রোবোসাব প্রতিযোগিতায়
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে বঙ্গোপসাগর। সাগরের গভীরেই লুকিয়ে রয়েছে ভবিষ্যতের সম্পদ, গ্যাস আর নানা খনিজ, সেই সমুদ্রজয়ের জন্য বাংলাদেশি একদল শিক্ষার্থী তৈরি করছেন বিশেষ একটি রোবট। ‘হাঙর’ নামের একটি রোবট তৈরি করে সমুদ্রজয়ের চেষ্টা করছেন টেক অটোক্র্যাটস–বেঙ্গল সাব নামের একদল শিক্ষার্থী। এই হাঙর সাঁতারের জন্য নামবে বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আন্ডারওয়াটার রোবোটিকস প্রতিযোগিতা ‘রোবোসাব ২০২৫’ আয়োজনে।
রোবোসাব প্রতিযোগিতা প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এ বছরের আয়োজন হবে ক্যালিফোর্নিয়ার উলেট অ্যাকুয়াটিকস সেন্টারে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্কুল–কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অটোনমাস আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল (এইউভি) নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমুদ্রবিজ্ঞান, রোবোটিকস আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাস্তবসম্মত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করা।
বাংলাদেশের রোবট দল২০২৫ সালের রোবোসাব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিচ্ছে ‘টেক অটোক্র্যাটস–বেঙ্গল সাব’। দলের সদস্যসংখ্যা ১৫। এই দলে রয়েছেন অষ্টম শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের সদস্যরা। দলনেতা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজ তাসলিম জানান, ‘এই দল গঠিত হয়েছে হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে। আমরা আমাদের নিজ নিজ দক্ষতা ব্যবহার করে রোবটটি তৈরি করেছি। আমরা বেশ কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের রোবটটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু পরীক্ষার ধাপ পার করেছে। দলের সদস্যদের বিভিন্ন দক্ষতাকে আমরা কাজে লাগিয়ে রোবটটি তৈরি করছি। গত বছরের অক্টোবরে আমরা কাজ শুরু করি। প্রায় এক বছর ধরে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের দলের সদস্যরা এককভাবে বিভিন্ন রোবট–সংশ্লিষ্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত আছেন আমাদের দলে। এই রোবট আমরা সুইমিংপুলের মধ্যে আটকে রাখতে চাই না। আগামী মাসে আমরা রোবটটি সেন্ট মার্টিন নিয়ে পরীক্ষা করব।’ প্রকল্প ব্যবস্থাপক আন নাফিউ বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য একটি পূর্ণাঙ্গ স্বয়ংক্রিয় আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল (এইউভি) তৈরি করা, যেটি পানির নিচে নিজে নিজেই চলাফেরা ও নানা কাজ করতে পারবে।’
রোবটের নাম হাঙরটেক অটোক্র্যাটস দলের নির্মিত রোবটটির নাম ‘হাঙর’। রোবটটি তৈরি করা হয়েছে রোবোসাব প্রতিযোগিতার ছয়টি ধাপ পূরণের উপযোগী করে। দলের সদস্য রুবাইয়াত এইচ রহমান বলেন, ‘আমাদের রোবটটি পানির নিচে নানা বাধা অতিক্রম করতে পারে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেই গন্তব্য নির্ধারণ করে চলতে পারে। প্রতিযোগিতায় রোবটকে বিভিন্ন লক্ষ্যে গিয়ে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হবে, যেমন লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত, বস্তু পরিবহন ও নির্ধারিত ফ্রেমের ভেতর দিয়ে সাঁতরে যাওয়া। রোবটটি বর্তমানে বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষাধীন। আগামী মাসে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি ফিল্ড টেস্ট করব আমরা। রোবটটি যেন কেবল সুইমিংপুলে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি আমরা।’
দলের এক কনিষ্ঠ সদস্য এ কে এম ফাইয়াজ ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে বলে, ‘এই রোবট আমরা শুধু প্রতিযোগিতার জন্য বানাচ্ছি না। ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশের নদী ও সমুদ্র গবেষণায় কাজে লাগানো যাবে। সমুদ্রের খনিজ খোঁজা, পানির নিচে দুর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযান, নদীতে দূষণ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করব। আমরা এমন একটি রোবট বানাতে চাই, যা পানির নিচে ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। দূষিত এলাকা শনাক্ত করে সেগুলো ম্যাপ আকারে আমাদের সামনে তুলে ধরবে।’
দলের উপদেষ্টা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘এই প্রকল্প শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও দলগত সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়িয়েছে। কেউ কাজ করছে ইলেকট্রনিকসে, কেউ কোডিং নিয়ে, আবার কেউ মেকানিক্যাল ডিজাইনে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা একে অন্যের দক্ষতাকে সম্মান করতে শিখছে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে নিজেদের তৈরি করতে পারবে।’ দলের সবচেয়ে ছোট সদস্য আহনাফ সাফওয়ান ইসলাম পড়ছে অষ্টম শ্রেণিতে। সে জানায়, ‘আমি মেকানিক্যাল ডিজাইন, ডকুমেন্টেশন ও থ্রিডি মডেলিংয়ের ওপর কাজ করছি। আমাদের রোবটের জন্য গবেষণাপত্রের পাশাপাশি আমি টেস্টিংয়ের সময় উপস্থিত থাকি এবং সমস্যা শনাক্ত করার চেষ্টা করি।’
দলটি এখন শেষ ধাপের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। বিভিন্ন ধরনের সেন্সর, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যেমন পাইথন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়েছে এই রোবট তৈরিতে। রোবোসাব প্রতিযোগিতা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ছাড়া আন্তর্জাতিক পরিবেশে নিজেকে উপস্থাপনের সুযোগ থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় এ প্রতিযোগিতায় প্রতিবছরই অংশ নেয় এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বসেরা সব প্রতিষ্ঠান। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সুদীপ্ত মন্ডল (রুয়েট), মো. মাসরুল খান (কুয়েট), গাজী ফয়সাল জুবায়ের (কুয়েট), খন্দকার রেদওয়ানুর রহমান (রুয়েট), নাফিস হাবিব (মাস্টরমাইন্ড), আরিয়ান সিদ্দিক (আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের হাসিন ইসরাক চৌধুরী, শামীম আহনাফ তাহমিদ, সানজিদ রহমান, তানভীর রহমান, এ কে এম ফাইয়াজ, জারার মাহবির, মাহদী ইসলাম ও মুয়াজ ইবনে বাশার।
বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন গ্র্যান্ট থেকে এই দলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিমানের টিকিট ও ভ্রমণ ব্যয়ের আংশিক অর্থায়ন করা হয়েছে। এটি ভবিষ্যতের উদ্ভাবকদের জন্য বড় একটি প্রেরণা। দলের সঙ্গে পরামর্শদাতা হিসেবে যুক্ত আছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কাদের।