সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় মামলা, আসামি ৬ জনই স্বেচ্ছাসেবক দলের
Published: 24th, June 2025 GMT
‘মব’ তৈরি করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে হেনস্তায় ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ ফরিদ হোসেন নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পুলিশ ফরিদসহ ছয়জনকে শনাক্ত করেছে। তাঁরা সবাই ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পুলিশ এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছে। মামলায় ফরিদসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার রাতে হানিফ মিয়া নামের একজনকে সেনাবাহিনী আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তিনি উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব। তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মামলায় এজাহারনামীয় অন্য আসামিদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের তুরাগ থানার সভাপতি দুলাল, উত্তরা পশ্চিম থানার আহ্বায়ক সেলিম, উত্তরা পূর্ব থানার যুগ্ম আহ্বায়ক কাইয়ুম এবং দলের কর্মী মুজাম্মেল হোসেন ঢালী। ভিডিওতে দেখা গেছে, নূরুল হুদাকে জুতা দিয়ে মারছিলেন মুজাম্মেল হোসেন ঢালী।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় কে এম নূরুল হুদাকে জুতা দিয়ে মারধর, তাঁর মানহানি এবং বাসায় অনধিকার প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া নূরুল হুদার বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে মব তৈরি করা হয়েছিল। মামলার এজাহারে এসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা সবাই ঘটনাস্থলে ছিলেন।
রাজধানীর উত্তরার বাসায় ঢুকে গত রোববার একদল লোক নূরুল হুদাকে বের করে আনেন, জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করে পুলিশে সোপর্দ করেন। দেখা গেছে, ঘটনার সময় সেখানে পুলিশও উপস্থিত ছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় প্রাইভেটকার ছিনতাই, জিপিএস ট্র্যাকিংয়ে যেভাবে টঙ্গি থেকে উদ্ধার
প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার বিকেলে আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানা থেকে তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রাইভেটকারে ঢাকায় ফিরছিলেন চালক মনিরুল ইসলাম। বেড়িবাঁধের পঞ্চবটিতে যানবাহনের চাপে ধীরে ধীরে চলছিল গাড়ি। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। হঠাৎ প্রিমিও ব্রান্ডের প্রাইভেটকারের চালকের আসনের পাশ দিয়ে বাইরে থেকে রড ঢুকিয়ে দেয় এক দুর্বৃত্ত। এর পর গাড়ি সামনের দরজা খুলে আরও দু’জন চালককে মারধর করে বের করে আনেন। গাড়িতে থাকা বাকি তিন আরোহীকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা করে তারা। এরপর গাড়িটি ছিনতাই করে তারা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার সময় একই সড়কে একই কোম্পানির আরেকটি প্রাইভেটকার অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে আসছিলেন। সেই গাড়ির চালক রফিকুল ইসলাম ছিনতাইয়ের ঘটনাটি দেখতে পান। তখন নিজের প্রাইভেটকার রেখে দৌড়ে তিনি ছিনতাই হওয়া গাড়ির সামনের বনেটের ওপর লাফিয়ে উঠেন। তখন ছিনতাইকারী জোরে গাড়ি চালানোর পর বনেট থেকে তিনি ছিটকে পড়েন। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শারমিন গ্রুপের প্রাইভেটকার ছিনতাইয়ের এমন ঘটনাটি ফোনে চালক ও হামলার শিকার অন্যরা জানান অফিসের অন্য কর্মকর্তাদের। এটি জানার পর কামরুজ্জামান ও সাজিদুল ইসলাম সম্রাট নামে দুই কর্মকর্তা গাড়ির জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেন। তাদের মধ্যে কামরুজ্জামান ছিলেন আশুলিয়ার কর্মস্থলে। আর সম্রাট উত্তরায় তার বাসার কাছাকাছি।
সম্রাট সমকালকে জানান, ট্র্যাকিং সিস্টেমে দেখা যায়–গাড়িটি বেরিবাঁধ উত্তরার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে গাজীপুরের দিকে যাচ্ছিল। এরপর সম্রাট মোটরসাইকেলে গাড়ির পিছু নেন। এক পর্যায়ে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ কল করেন। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোনের সহায়তায় ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির ইঞ্জিন। তখন প্রাইভেটকারটি ছিল টঙ্গী কলেজ গেটের কাছাকাছি। ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর বিপাকে পড়েন ছিনতাইকারীরা। তারা রাস্তায় পাশে গাড়িটি রেখে পালিয়ে যান। এরপর শারমিন গ্রুপের লোকজন ও পুলিশ গিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় গাড়িটি উদ্ধার করে।
শারমিন গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, কোম্পানির কয়েকজন একটি টিম হিসেবে কাজ করে। তারা গাড়ির গতিবিধির ওপর নজর রাখে, পরে তা উদ্ধার করা হয়েছে। গাজীপুরের পুলিশও সহযোগিতা করেছে। উদ্ধারের পর প্রাইভেটকারের মধ্যে চাপাতি, রডসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে। এর আগে প্রাইভেটকারে আমাদের প্রতিষ্ঠানের যে তিন কর্মকর্তা ছিলেন তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে তুরাগ থানায় জিডি করা হয়েছিল। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার সব ধরনের সহযোগিতা করেন।