ক্যানসারের প্রতিষেধক তৈরি হবে বিচ্ছুর বিষ থেকে
Published: 26th, June 2025 GMT
আমাজন বনে থাকা বিচ্ছুর বিষে বিশেষ ধরনের পেপটাইড অণুর সন্ধান পেয়েছেন ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, বিচ্ছুর বিষে থাকা পেপটাইড অণু কার্যকরভাবে স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী কোষকে ধ্বংস করতে পারে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, এই অণু কেমোথেরাপির ওষুধ প্যাক্লিট্যাক্সেলের মতো কোষের মৃত্যু ঘটায়। একই সঙ্গে সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি কম করে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বিচ্ছুর বিষ স্বাভাবিক কোষের ক্ষতি কম করলেও সরাসরি ক্যানসার কোষকে আক্রমণ করে ধ্বংস করতে পারে। গবেষণায় বিচ্ছুর বিষ থেকে বিএএমএজেডএসসিপিএলপি১ নামের একটি অণু ব্রোথিয়াস অ্যামাজোনিকাস বিচ্ছু থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা গেছে, বিচ্ছুর বিষে থাকা পেপটাইড অণু স্তন ক্যানসারের কোষকে মেরে ফেলতে পারে। প্যাক্লিট্যাক্সেল নামের বহুল ব্যবহৃত কেমোথেরাপির ওষুধের গুণাগুণ আছে এই অণুতে।
পেপাটাইড অণু মূলত নেক্রোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষের মৃত্যু ঘটায়। এই প্রক্রিয়ায় কোষকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভেঙে ফেলা হয়। তবে নেক্রোসিস প্রক্রিয়ায় প্রায়ই সুস্থ কোষের ক্ষতি হয়। পেপাটাইড অণুর প্রতিক্রিয়া প্যাক্লিট্যাক্সেল ওষুধের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তুলনীয়। পেপটাইড মূলত নেক্রোসিসের মাধ্যমে কোষের মৃত্যু ঘটায়। আর তাই বিজ্ঞানীরা বিচ্ছু থেকে সরাসরি বিষ সংগ্রহের পরিবর্তে হেটেরোলগাস এক্সপ্রেশন নামক একটি জৈব প্রকৌশল পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। প্রোটিনের জন্য কোডিং করা জিনটি একটি হোস্ট জীবের মধ্যে প্রবেশ করার পর ইস্ট বা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তৈরি করে।
নতুন এ গবেষণার বিষয়ে বিজ্ঞানী এলিয়ান ক্যান্ডিয়ানি আরান্তেস বলেন, ‘বায়োপ্রোস্পেক্টিংয়ের মাধ্যমে আমাজনের বিচ্ছুর বিষে থাকা অণু স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে। অণুটি সেরিন প্রোটেসের পরিবারের অন্তর্গত। এই এনজাইম প্রোটিন ভেঙে ফেলা ও সম্ভাব্যভাবে ক্যানসার কোষের জীবনচক্র ব্যাহত করার ক্ষমতা রাখে। আমরা হেটেরোলগাস এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে এই অণু সংগ্রহ করতে চাই। পেপটাইড উৎপাদনের জন্য পিচিয়া পাস্টোরিস নামের একটি ইস্টকে ব্যবহার করা হতে পারে ভবিষ্যতে।’
২০২৪ সালের নেচার মেডিসিনের একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২০ জন নারীর মধ্যে ১ জন তাঁদের জীবদ্দশায় স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা প্রায় ৩২ লাখ হতে পারে। তখন বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হবে এই ক্যানসারে। আর তাই বিচ্ছুর বিষ স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
দেশে এমনিতেই বনভূমি কমছে, তার ওপর নতুন করে বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে বনের ভেতর অবৈধভাবে স্থাপন করা হাজার হাজার বিদ্যুতের খুঁটি। এসব অবৈধ বিদ্যুৎ–সংযোগ বনভূমি দখলের প্রক্রিয়াকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে বন্য হাতি হত্যা করা হচ্ছে। যেভাবেই হোক, এসব খুঁটি সরাতেই হবে।
বন অধিদপ্তরের এক জরিপে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও দিনাজপুর অঞ্চলের বনাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি অবৈধ বিদ্যুতের খুঁটির সন্ধান পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে—৫ হাজার ৭১৭টি। বন বিভাগ বারবার সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানালেও তার ফল মিলেছে সামান্যই। উল্টো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিবির পক্ষ থেকে আসছে পরস্পরবিরোধী ও দায়সারা বক্তব্য।
জনগণের বিদ্যুৎ প্রাপ্তির অধিকার আছে, কিন্তু তার জন্য বনভূমি দখল করে পরিবেশ ও বন্য প্রাণীর জীবন বিপন্ন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এক সদস্যের ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই একজন বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে পারেন, কিন্তু বন বিভাগের আপত্তির বিষয়ে তাঁদের তেমন কোনো ধারণা নেই। অথচ বন বিভাগ নিয়মিত চিঠি এবং আইনশৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এই সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা পুরো বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনের ভেতর অবৈধ বসতিতে বিদ্যুৎ–সংযোগে বনের ভেতর অবৈধ দখল রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তা ছাড়া মহাবিপন্ন প্রাণীর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। গত আট বছরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ২৬টি হাতি হত্যা করা হয়েছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টার উচিত অবিলম্বে এ বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে অবৈধ খুঁটি ও সংযোগগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। দ্বিতীয়ত, বন বিভাগ, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে একটি কার্যকর সমন্বয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, বনের ভেতর যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বা বিদ্যুৎ–সংযোগের ক্ষেত্রে বন বিভাগের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিগত এক–দেড় দশকে বনের ভেতরে সড়ক ও অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগের কারণে টাঙ্গাইল, সিলেটসহ অনেক জায়গায় বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে। দেরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এখনই কঠোর, কার্যকর ও সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করতে হবে।