কবুতর থেকে ল্যাবরেডর কুকুর, সবই আছে খুলনার যে হাটে
Published: 29th, June 2025 GMT
খাঁচা থেকে ধীরে ধীরে কবুতরটা তুলে নিলেন এক ক্রেতা। পালকের নিচে-ওপরে, গলা, পা—সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চোখ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘অরিজিনাল অ্যারাবিয়ান ককা তো?’
বিক্রেতা হেসে জবাব দিলেন, ‘ভাই, বাড়িতে মাস্টার পেয়ার আছে। এইটা খাঁটি ককা জাত। কক কক করে ডাকে। ফোন নম্বর রাখেন, ঠিকঠাক না হলে ফেরত দিতে পারবেন।’
মোবাইলে ছবি মিলিয়ে আবার ভালো করে দেখে নিলেন কবুতরটা। এরপর শুরু হলো দামাদামি। বিক্রেতা বললেন, জোড়া এক হাজার টাকার নিচে হবে না। কিন্তু ক্রেতা অনড়—‘আট শ টাকার বেশি দেব না ভাই।’
শুক্রবার সকাল থেকেই এমন দর-কষাকষিতে জমে ওঠে খুলনার নয়াবাটির কবুতরের হাট। খাঁচায় খাঁচায় কবুতর, আর চারপাশে উৎসুক চোখ, দরদাম আর হালকা উত্তেজনা। শুধু কেনাবেচা নয়, এখানে চলে জাত বিচারে অভিজ্ঞতার লড়াই। মোবাইল, মুখের কথা আর চোখের ত্রিমুখী যাচাই শেষে হয় ‘ডিল’। কেউ নতুন কবুতর নিয়ে ফিরে যান, কেউ অপেক্ষায় থাকেন পরের শুক্রবারের।
ক্রেতা-বিক্রেতার দাবি, ঢাকার মিরপুরের পর এটিই দেশের সবচেয়ে বড় পাখির হাট। শুধু খুলনা নয়; যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, এমনকি আরও দূরের জেলা থেকেও শৌখিন পালনকারী ও ব্যবসায়ীরা আসেন এখানে।
তবে শুধু কবুতরেই সীমাবদ্ধ নয় এই হাট। এখন এখানে পাওয়া যায় শখের পাখি, বিড়াল, কুকুর, খরগোশ, হাঁস-মুরগি, এমনকি অ্যাকুরিয়ামের মাছও। যেন এক প্রাণী উৎসব। পাশাপাশি রয়েছে খাদ্য, খাঁচা ও আনুষঙ্গিক জিনিসের দোকানও।
প্রতি শুক্রবার ভোরে শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত চলে এই হাট। সময় যত গড়ায়, তত জমে ওঠে কেনাবেচা। নয়াবাটির মোড় থেকে শুরু হয়ে বাংলার মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত এই হাট ছড়িয়ে আছে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আশপাশের গলিতেও পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেল, রাস্তার দুই পাশে সারি সারি খাঁচা। খাঁচায় খাঁচায় রঙিন কবুতর, শালিক, গাঙশালিক, কোয়েল, বাজরিগার, ককাটেলসহ নানা পাখি। সামনে ভিড় করা নানা বয়সী মানুষ। কারও উদ্দেশ্য কেনা, কারও শুধুই দেখা।
এই হাটে কবুতর, বিদেশি পাখি, বিদেশি বিড়াল-কুকুরসহ সব ধরনের পোষা পশুপাখি বেচাকেনা হতে দেখা যায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই হ ট
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি