Prothomalo:
2025-07-03@18:37:35 GMT

মহররম মাসের ৫ ইবাদত

Published: 3rd, July 2025 GMT

মহররম মাসটি ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় মাস হিসেবে বিবেচিত। কোরআনে যেমন সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম বলা হয়েছে, তেমনি হাদিসে মাসটিকে আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দিয়ে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। মহররম মাসে ইসলামে রয়েছে বিশেষ কিছু ইবাদতের নির্দেশনা।

মহররম মাসের ইবাদত সম্পর্কে শরিয়াহ নির্দেশিত বিশেষ পাঁচটি ইবাদতের কথা আলোচনা করা হলো।

এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না।সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬১.

গুনাহ বর্জন করা

মহররম সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম। কোরআনে এই মাসগুলোতে নিজেদের ওপর জুলুম করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর নাফরমানি ও অবাধ্যতার চেয়ে বড় জুলুম আর কী হতে পারে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই চার মাসের মধ্যে তোমরা (গুনাহ করে) নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)

আরও পড়ুনতওবা-ইস্তিগফার: গুনাহ মাফের শ্রেষ্ঠ উপায়১২ মার্চ ২০২৫২. নফল রোজা রাখা

নফল রোজা রাখা এ মাসের অন্যতম আমল। নবীজি (সা.) এই মাসের নফল রোজাকে সর্বোত্তম ঘোষণা করেছেন। একটি হাদিসে আছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররমের রোজা। (মুসলিম, হাদিস: ২,৬৪৫)

৩. তওবা-ইস্তিগফার করা

নফল রোজার পাশাপাশি মহররমের বিশেষ আমল হলো তওবা–ইস্তিগফার করা। কেননা, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহররম আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা একটি সম্প্রদায়ের তওবা কবুল করেছেন। (আশা করা যায়) সেদিন অন্যান্য সম্প্রদায়ের তওবাও কবুল করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৭৪১)

তাই ক্ষমা পাওয়ার আশায় বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করা উচিত।

আরও পড়ুনযেভাবে ইস্তিগফার করা যায়০৬ মার্চ ২০২৫তবে আশুরার রোজা দুটি। ৯ ও ১০ তারিখ কিংবা ১০ ও ১১ তারিখ। কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর আমলের সুবিধার্থে ৯, ১০ ও ১১—এ তিন দিন রোজা রাখার কথাও বলেন। ৪. আশুরার রোজা রাখা

এ মাসের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে দশম দিন, তথা আশুরা। শরিয়তের দৃষ্টিতে আশুরার রোজা রাখা মুস্তাহাব আমল। আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনায় রাসুলের একটি হাদিসে আছে, ‘আশুরার এক দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে এই আশা করি যে তিনি এ রোজার অসিলায় বান্দার আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৬২)

তবে আশুরার রোজা দুটি। ৯ ও ১০ তারিখ কিংবা ১০ ও ১১ তারিখ। কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর আমলের সুবিধার্থে ৯, ১০ ও ১১—এ তিন দিন রোজা রাখার কথাও বলেন।

৫. বিধর্মীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করা

মহররমের দশম দিবসে ইহুদিরা রোজা রাখত। যেমন রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিন (মুহররমের দশম দিবস) রোজা রাখো এবং তাতে ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করো। আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২,১৫৪)।

এ ছাড়া এ মাসের শুরুর দিনটিকে তারা ঈদের মতো উদ্‌যাপন করত। রাসুল (সা.) তাদের সঙ্গ উদ্‌যাপন করতে নিষেধ করেছেন এবং মুসলিমদের দুটি ঈদ—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, কিয়ামতের দিন সে ওই জাতির দলভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৩১)

আরও পড়ুনআশুরার দিনে কী ঘটেছিল১৭ জুলাই ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মহররম ম স নফল র জ ১০ ও ১১ বল ছ ন আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

মহররমে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

মহররম কেবল একটি মাস নয়, বরং ইসলামের ইতিহাসের একটি জীবন্ত অধ্যায়, যেখানে বিষাদ, সংগ্রাম ও আধ্যাত্মিকতার মিশ্রণ রয়েছে। কেবল ১০ মহররম নয়, এই মাসজুড়ে ঘটেছে ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ও ব্যথাতুর নানা ঘটনা। আমরা কয়েকটি উল্লেখ করছি।

মহররমের উল্লেখযোগ্য তারিখ ও ঘটনা

২ মহররম: কারবালায় হোসাইন (রা.)-এর প্রবেশ

৬৮০ সালে, হিজরি ৬১ সনে হোসাইন ইবন আলী (রা.) কারবালায় প্রবেশ করেন এবং তাঁর শিবির স্থাপন করেন। ইয়াজিদের সেনাবাহিনী তাঁদের ঘিরে ফেলে।

কুফার দিকে যাওয়ার পথে উমাইয়া সৈন্যরা তাঁদের থামান এবং কারবালার মরুভূমিতে শিবির স্থাপন করতে বাধ্য করেন, যেখানে পানি বা কোনো সুরক্ষা দেয়াল ছিল না। এই ঘটনা কারবালার ট্র্যাজেডির সূচনা করে (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৩৯১, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)।

৭ মহররম: পানি নিষিদ্ধকরণ

৬৮০ সালে, হিজরি ৬১ সনে ইয়াজিদের নির্দেশে হোসাইন (রা.)-এর শিবিরের জন্য পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে হোসাইন (রা.) ও তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে তীব্র তৃষ্ণা ও ক্ষুধার সৃষ্টি হয়। (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৪০১, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫৮ মহররম: জয়নুল আবেদীন (রা.)–এর মৃত্যু

৯৫ হিজরির এই দিনে ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) মৃত্যু। কোনো কোনো বর্ণনা মতে উমাইয়া খলিফ ওয়ালিদের নির্দেশে তাকে বিষপানে শহিদ করা হয়। তিনি ছিলেন হোসাইন ইবন আলী (রা.)-এর পুত্র এবং কারবালার ট্র্যাজেডির সাক্ষ্য হয়ে বেঁচে থাকা একমাত্র পুরুষ সদস্য।

৯ মহররম: আলোচনার ব্যর্থতা

৬৮০ সালের এই দিনে হোসাইন (রা.) ও উমাইয়া বাহিনীর মধ্যে আলোচনা ভেঙে পড়ে। উমাইয়া নেতা উমার ইবন সাদ বিকেলে নামাজের পর আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি করানো হয়। হোসাইন (রা.) ও তাঁর অনুসারীরা সেই রাত ইবাদতে কাটান। (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৪১১, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)

১০ মহররম: আশুরা ও কারবালার যুদ্ধ

এ দিন আশুরার দিন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আশুরার দিনের রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের পাপের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)

৬৮০ সালে এদিনেই কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হোসাইন ইবন আলী (রা.), তাঁর ভাই আব্বাস (রা.) এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ পুরুষ সদস্য উমাইয়া সৈন্যদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধের শেষে উমাইয়া সৈন্যরা হোসাইন (রা.)-এর শিবিরের নারী ও শিশুদের বন্দী করে দামেস্কে নিয়ে যায়। (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৪২৩, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)

আরও পড়ুনআশুরা ও কারবালা করুণ ইতিহাসের স্মারক১৭ জুলাই ২০২৪১৬ মহররম: প্রথম কিবলা নির্ধারণ

১৬ মহররমে নবীজি (সা.) বাইতুল মুকাদ্দাসকে প্রথম কিবলা হিসেবে নির্ধারণ করেন। পরবর্তীকালে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে কিবলা কাবার দিকে পরিবর্তিত হয়, ‘আমরা তোমার মুখকে আকাশের দিকে বারবার ফিরতে দেখি, তাই আমরা তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪)

১৭ মহররম: হস্তির ঘটনা

৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মক্কায় ‘হাতিওয়ালাদের’ আগমন ঘটে, যা কোরআনের সুরা ফিলে উল্লেখিত হয়েছে, ‘তুমি কি দেখনি, তোমার রব হাতিওয়ালাদের সঙ্গে কী করেছেন?’

২০ মহররম: বেলাল (রা.)-এর ইন্তেকাল

১৭ বা ১৮ হিজরির এই দিন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল (রা.) ইন্তেকাল করেন। তাঁর আজানের আহ্বান ইসলামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। (ইবন সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ৩/২৩২, দার সাদির, ১৯৬০)

 সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফর্মেশন ডটকম

আরও পড়ুনপবিত্র আশুরা ৬ জুলাই২৬ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পবিত্র আশুরা ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: ডিএমপি
  • মহররমে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি