পবিত্র আশুরা ঘিরে ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ও ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের উপস্থিতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন তিনি।

ডিএমপি ভারপ্রাপ্ত কমিশনার বলেন, আগামী ০৬ জুলাই (১০ মহররম) পবিত্র আশুরা। ২৭ জুন থেকে ০৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া ও অনেক সুন্নি সম্প্রদায়ও শোক পালন করছেন। ঢাকা মহানগরীর হোসেনি দালান ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ অন্যান্য স্থান যেখানে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র আশুরা পালিত হয় সেখানে ইতোমধ্যেই পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়া সমূহ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এছাড়াও যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটসমূহ প্রস্তুত থাকবে। 

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সর্ববৃহৎ তাজিয়া মিছিল আগামী ৬ জুলাই সকাল ১০টায় হোসেনি দালান ১নং গেইট হয়ে বকশি বাজার লেন, লালবাগ চৌরাস্তা মোড়, শহীদ মাজার রোড, এতিমখানা মোড়, আজিমপুর চৌরাস্তা, নীলক্ষেত মোড়, মিরপুর রোড, ঢাকা কলেজ, সাইন্সল্যাবরেটরি, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, বিজিবির ৪নং গেইট, সাত মসজিদ রোড হয়ে ধানমন্ডি লেক কারবালায় মিলিত হবে। এসময় তাজিয়া মিছিল চলাকালীন সময়ে যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) এস.

এন. মো নজরুল ইসলাম,  ১০ই মহররমের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং একই দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথ যাত্রার অনুষ্ঠানও রয়েছে বিধায় সংশ্লিষ্ট সকলকে পুলিশি নির্দেশনা অনুসরণ করতে অনুরোধ করেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এমপ ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মহররমে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

মহররম কেবল একটি মাস নয়, বরং ইসলামের ইতিহাসের একটি জীবন্ত অধ্যায়, যেখানে বিষাদ, সংগ্রাম ও আধ্যাত্মিকতার মিশ্রণ রয়েছে। কেবল ১০ মহররম নয়, এই মাসজুড়ে ঘটেছে ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ও ব্যথাতুর নানা ঘটনা। আমরা কয়েকটি উল্লেখ করছি।

মহররমের উল্লেখযোগ্য তারিখ ও ঘটনা

২ মহররম: কারবালায় হোসাইন (রা.)-এর প্রবেশ

৬৮০ সালে, হিজরি ৬১ সনে হোসাইন ইবন আলী (রা.) কারবালায় প্রবেশ করেন এবং তাঁর শিবির স্থাপন করেন। ইয়াজিদের সেনাবাহিনী তাঁদের ঘিরে ফেলে।

কুফার দিকে যাওয়ার পথে উমাইয়া সৈন্যরা তাঁদের থামান এবং কারবালার মরুভূমিতে শিবির স্থাপন করতে বাধ্য করেন, যেখানে পানি বা কোনো সুরক্ষা দেয়াল ছিল না। এই ঘটনা কারবালার ট্র্যাজেডির সূচনা করে (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৩৯১, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)।

৭ মহররম: পানি নিষিদ্ধকরণ

৬৮০ সালে, হিজরি ৬১ সনে ইয়াজিদের নির্দেশে হোসাইন (রা.)-এর শিবিরের জন্য পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে হোসাইন (রা.) ও তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে তীব্র তৃষ্ণা ও ক্ষুধার সৃষ্টি হয়। (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৪০১, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫৮ মহররম: জয়নুল আবেদীন (রা.)–এর মৃত্যু

৯৫ হিজরির এই দিনে ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) মৃত্যু। কোনো কোনো বর্ণনা মতে উমাইয়া খলিফ ওয়ালিদের নির্দেশে তাকে বিষপানে শহিদ করা হয়। তিনি ছিলেন হোসাইন ইবন আলী (রা.)-এর পুত্র এবং কারবালার ট্র্যাজেডির সাক্ষ্য হয়ে বেঁচে থাকা একমাত্র পুরুষ সদস্য।

৯ মহররম: আলোচনার ব্যর্থতা

৬৮০ সালের এই দিনে হোসাইন (রা.) ও উমাইয়া বাহিনীর মধ্যে আলোচনা ভেঙে পড়ে। উমাইয়া নেতা উমার ইবন সাদ বিকেলে নামাজের পর আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি করানো হয়। হোসাইন (রা.) ও তাঁর অনুসারীরা সেই রাত ইবাদতে কাটান। (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৪১১, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)

১০ মহররম: আশুরা ও কারবালার যুদ্ধ

এ দিন আশুরার দিন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘আশুরার দিনের রোজা পূর্ববর্তী এক বছরের পাপের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)

৬৮০ সালে এদিনেই কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হোসাইন ইবন আলী (রা.), তাঁর ভাই আব্বাস (রা.) এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ পুরুষ সদস্য উমাইয়া সৈন্যদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধের শেষে উমাইয়া সৈন্যরা হোসাইন (রা.)-এর শিবিরের নারী ও শিশুদের বন্দী করে দামেস্কে নিয়ে যায়। (আল-তাবারি, তারিখ আল-তাবারি, ৫/৪২৩, দারুল কুতুব, ১৯৬৭)

আরও পড়ুনআশুরা ও কারবালা করুণ ইতিহাসের স্মারক১৭ জুলাই ২০২৪১৬ মহররম: প্রথম কিবলা নির্ধারণ

১৬ মহররমে নবীজি (সা.) বাইতুল মুকাদ্দাসকে প্রথম কিবলা হিসেবে নির্ধারণ করেন। পরবর্তীকালে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে কিবলা কাবার দিকে পরিবর্তিত হয়, ‘আমরা তোমার মুখকে আকাশের দিকে বারবার ফিরতে দেখি, তাই আমরা তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দেব, যা তুমি পছন্দ কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪)

১৭ মহররম: হস্তির ঘটনা

৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মক্কায় ‘হাতিওয়ালাদের’ আগমন ঘটে, যা কোরআনের সুরা ফিলে উল্লেখিত হয়েছে, ‘তুমি কি দেখনি, তোমার রব হাতিওয়ালাদের সঙ্গে কী করেছেন?’

২০ মহররম: বেলাল (রা.)-এর ইন্তেকাল

১৭ বা ১৮ হিজরির এই দিন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল (রা.) ইন্তেকাল করেন। তাঁর আজানের আহ্বান ইসলামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। (ইবন সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ৩/২৩২, দার সাদির, ১৯৬০)

 সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফর্মেশন ডটকম

আরও পড়ুনপবিত্র আশুরা ৬ জুলাই২৬ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহররম মাসের ৫ ইবাদত
  • মহররমে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি