সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ আবারও সংশোধন করছে সরকার। তাতে আগের চেয়ে কিছু বিষয় নমনীয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আগের সংশোধনীতে অনেকটা নোটিশ দিয়েই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুযোগ ছিল। এ ছাড়া অপরাধের ধরনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গত ২৫ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। তাতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তাঁর কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে। তাতে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা ছিল। আর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তাঁকে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা ছিল। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে।

আরও পড়ুনএক মাসে গড়াল আন্দোলন, ‘ভালো খবরের আশায়’ সচিবালয়ের কর্মচারীরা২৩ জুন ২০২৫

এরপর অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের ভেতরে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। এরপর এই অধ্যাদেশ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে সরকার।

এখন অধ্যাদেশটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এখন ‘অনানুগত্যের শামিল’–সংক্রান্ত ধারাটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশোধনে ‘অনানুগত্যের শামিল’–সংক্রান্ত ধারাটির জায়গায় বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র ও নির্দেশ অমান্য করেন বা উহার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এসব কাজে অন্য সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন—এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয় অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত কর্মচারীর জ্যেষ্ঠ (কর্মে) হতে হবে এবং অভিযুক্ত কর্মচারী নারী হলে তদন্ত কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ছাড়া তদন্তের আদেশ পাওয়ার পরবর্তী ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে তদন্তকাজ শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এ রকম কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।

আরও পড়ুনসরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিটি০৪ জুন ২০২৫

জানতে চাইলে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা–কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো–মহাসচিব নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। এখন সরকার সেটি সংশোধন করায় সরকারকে ধন্যবাদ।

আরও সিদ্ধান্ত

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তবে তাতে বিস্তারিতভাবে বলা হয়নি।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পারমাণবিক জ্বালানি ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একটি কনভেনশনে স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ ছাড়া ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস’ ১৫ মার্চের পরিবর্তে ৩ ডিসেম্বর, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস’ ‘খ’ শ্রেণি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ও ২ এপ্রিল ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক ত কর উপদ ষ ট ব যবস থ স ত কর ত কর ন র কর ম তদন ত সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইয়াবা লুটের অভিযোগ: বিএনপির তিন নেতার পদ স্থগিত

কক্সবাজারের রামুতে ইয়াবা লুটের ঘটনায় বিএনপি, যুবদল ও শ্রমিক দলের তিন নেতার পদ স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক মো. নুরুল কবির, রাজারকুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দানু মিয়া ও রাজারকুল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক দলের সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইলের পদ স্থগিত করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রামু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার বাবু সমকালকে বলেন, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ব স্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনজনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। 

এদিকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।

পোস্টে সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। কারণ, সম্প্রতি ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক রোষানলের শিকার হয়ে আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা দিন দিন আমাকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে। তাই আমি এ সিদ্ধান্ত নিলাম। সুখে থাক প্রাণের সংগঠন ছাত্রদল, ভালো থাকুক সুবিধাবাদীরা।’

তবে তিনি ইয়াবা লুটে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেন, স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

জানা যায়, কক্সবাজারের রামুতে ৩০ হাজার ইয়াবা লুটের একটি ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি একাধিক অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রদল নেতা সানাউল্লাহ সেলিমের নেতৃত্বে ইয়াবার চালানটি লুট করা হয়। লুট করা ইয়াবা বিক্রির ২৮ লাখ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন স্থানীয় ছাত্রদল ও বিএনপির ২৩ নেতাকর্মী। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালানটি আনা হচ্ছিল। এটির গন্তব্য ছিল রামু উপজেলা সদরের মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা মনিরের বাড়ি। তবে রাস্তায় রাজারকুল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাঞ্জেগানা এলাকায় চালানটি লুট হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘চালানটি প্রথমে স্থানীয় কাট্টাইল্যা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩০ হাজার ইয়াবার বাজার মূল্য অনেক বেশি হলেও মাত্র ২৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে ২৩ জনের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে। ভাগে ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম একাই ১০ লাখ এবং অন্যান্য দলীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ৮-১০ হাজার থেকে ২-৩ লাখ টাকা করে পেয়েছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের তিন নেতার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর তাদের পদ স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, ইয়াবার চালান লুটের ঘটনাটি শুনেছি, খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ