শুদ্ধাচার চর্চা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১২ সালে সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করে। তবে নানা কারণে সময়ের সঙ্গে সেই শুদ্ধাচার উন্নয়ন প্রকল্পেই যেন শুরু হয়েছে অশুদ্ধাচার। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজন। 

জানা গেছে, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের লক্ষ্য অর্জনে গত সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহায়তায় ‘ন্যাশনাল ইন্টেগ্রিটি সাপোর্ট প্রজেক্ট দ্বিতীয় পর্যায়’ নামে একটি প্রকল্প নেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকা এ প্রকল্প খুব বড় নয়, মাত্র ১৯৩ কোটি টাকার। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১৬৭ কোটি টাকারও বেশি। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনপ্রশাসন, নির্বাহী বিভাগের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো। এ জন্য উন্নত পরিকল্পনা, কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন এবং সক্ষমতা উন্নয়নে অবকাঠামো প্রস্তুত করা। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, সংস্থার পাশাপাশি ৮টি পাইলট উপজেলা এবং সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রকল্পটি পরিচালিত হয়। উপজেলাগুলো হচ্ছে– গোপালগঞ্জ সদর, গাজীপুরের ভালুকা, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, রাজশাহীর পবা, বরিশালের বাকেরগঞ্জ, গৌরনদী, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ও সিলেটের দক্ষিণ সুরমা। ২০১৯ সালে নেওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এর এক বছর পর ২০২৩ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।  
সম্প্রতি প্রকল্পটির সরেজমিন প্রভাব মূল্যায়ন করা হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ আইএমইডির পক্ষ থেকে। এতে দেখা যায়, প্রকল্প বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। ১৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৫১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু পরামর্শক নিয়োগেই ব্যয় হয়েছে ১০১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা এ খাতের বরাদ্দের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। অথচ অনুমোদনের সময় এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে শুধু পরামর্শকের পেছনে। আবার কম্পিউটার সফটওয়্যারের জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। 

অথচ এ বরাদ্দও ছাড়িয়ে ব্যয় করা হয় ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যা এ খাতে অনুমোদিত বরাদ্দের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। ফলে শুদ্ধাচার উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্পেই কতটুকু শুদ্ধাচার ছিল– উঠছে প্রশ্ন। 
ব্যয়ে এ রকম বাড়াবাড়ি সত্ত্বেও লক্ষ্য অনুযায়ী কাজের কাজ কিছু হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার পর লক্ষ্য অনুযায়ী জনজীবনে কি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়েও একটি মূল্যায়ন তুলে ধরা হয় আইএমইডির প্রতিবেদনে। দেখা যায়, সেবা নিয়ে স্থানীয় গ্রহীতাদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। ২৫ শতাংশ সেবা গ্রহীতা অভিযোগ করেছেন, সার-বীজ সংগ্রহ, টিকা নেওয়া, খাজনা পরিশোধ এমনকি প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সব ধরনের সেবা পেতে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে। ৮৮ শতাংশ স্থানীয় উপকারভোগীর অভিযোগ, সেবা পেতে হয়রানির অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউএনওরা বলেছেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের ফলে সরকারি কাজের গুণগত মান এবং গতিতে পরিবর্তন এসেছে। তবে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য প্রশাসনের সর্বস্তরে সুশাসন-স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বলতা এবং ঝুঁকি প্রসঙ্গে বলা হয়, পরিচালনা কমিটি (পিএসসি) এবং বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়নি। এ কারণে লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ হয়নি প্রকল্পের। এ ছাড়া সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে যথাযথ নজরদারি প্রয়োজন ছিল। আগামীতে এ ধরনের প্রকল্প

করতে হলে এসব দুর্বলতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। 
বিশ্লেষকরা মনে করেন, উন্নয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘বিগত দিনে উন্নয়নের নামে যা চলেছে তাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। প্রকল্প নেওয়ার সময় বরাদ্দে স্ফীতি এবং বাস্তবায়নে বিচ্যুতি ছিল সাধারণ ঘটনা। কারণ দায়ী ব্যক্তি বা চক্রকে কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। তাই বলে শুদ্ধাচার উন্নয়নের নামে এ রকম অশুদ্ধাচার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আইএমইডি এ ধরনের প্রতিবেদন বিগত দিনেও কিছু দিয়েছিল, কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা, তারা অন্তত দায়ীদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে। বিদেশি ঋণের মাথাপিছু বোঝা বাড়িয়ে উন্নয়নের নামে অনাচার বন্ধে উদ্যাগ নেবে। আগামীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কী ধরনের দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চায় এ সরকার– তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র এ ধরন র মন ত র বর দ দ লক ষ য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ