খুলনায় একটি মেলাকে কেন্দ্র করে বগুড়ার এক ইভেন্ট আয়োজকের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষার্থী বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের দাবি, অভিযুক্তরা নিজেদের খুলনা মহানগরের ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে চাঁদা দাবি করেন।

অভিযুক্তরা হলেন, খুলনা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা জহুরুল ইসলাম তানভীর ও সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ। তারা দুজনেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থী।

রবিবার (৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাঁদা দাবির একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে বগুড়ার মন্টু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্ণধার মন্টুর সঙ্গে কথোপকথনে চাঁদার বিষয়টি উঠে আসে।

আরো পড়ুন:

বাকৃবিতে ৪৪তম বিসিএসের ফলাফল পুনঃমূল্যায়নের দাবি

চাঁদপুরে যুবক নিখোঁজ, স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি

জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম তানভীর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের স্নাতক এবং সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তারা খুলনা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যথাক্রমে সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠকের দায়িত্ব পালন করছেন।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আন্দোলন ও কর্মসূচিতে তারা সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডে সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদকে আয়োজকের কাছে ‘১০ টাকা’ দাবি করতে শোনা যায়, যা নেটিজেনদের ব্যাখ্যায় ১০ লাখ টাকা বোঝানো হয়েছে। ওই কল রেকর্ডে মন্টুকে বলতে শোনা যায়, “আমার দ্বারা সবাইকে কী ঠাণ্ডা করা সম্ভব? আমার কাছে ‘দুই টাকা’ (দুই লাখ) রেডি আছে।” জবাবে আজাদ বলেন, “আমি পারব সবাইকে ঠাণ্ডা করতে। এ টু জেড কেউ তাকাবে না—যদি ১০ টাকা দেন। আর না দিলে আজ এক গ্রুপ যাবে, কাল আরেক গ্রুপ যাবে, তখন আপনি কয়জনকে ঠাণ্ডা করবেন?”

এসময় মন্টু তার অসহায়ত্বের কথা জানালে আজাদ তাকে বলেন, “আপনার পুলিশ কমিশনারও ঠাণ্ডা করতে পারবে না, বলে দিয়েন তারে।” আলোচনার একপর্যায়ে মন্টু জানান, কিছু তরুণ এসে ‘তানভীর ভাই’-এর কথা বলেছেন। জবাবে আজাদ বলেন, “মেলা ভাঙতে তো আমরা কাউকে পাঠাইনি, তাহলে ওদেরই দিয়ে দেন।” শেষদিকে মন্টু বলেন, “আমি দুই টাকা দিতে চাই, আজকেই আসছি ভাই। তবে প্রত্যেক গ্রুপকে তো দেওয়া সম্ভব না। আপনারা বড় ভাই হয়ে যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন.

..।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ততার এমন অভিযোগে ক্যাম্পাসে দেখা দিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

খুবির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরিয়াক কবির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে অরাজনৈতিক ঘোষণা দেওয়ার পরো কিছু ‘সমন্বয়ক’ নিজেদের পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। তারা দামী বাইকে চলাফেরা করছেন।”

তিনি আরো বলেন, “ছাত্রলীগের প্রচারক আজাদ এখন নিজেকে ‘জুলাই আন্দোলনের কান্ডারি’ দাবি করলেও তার কার্যকলাপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা অপরাধ ঢাকতে চাচ্ছেন। ‘জুলাই চেতনা’কে হাতিয়ার করে তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে। ভাইরাল হওয়া অডিওতে তাদের আসল রূপ উন্মোচিত হয়েছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আয়োজক মন্টু বলেন, “ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডে আমার কণ্ঠই শোনা যাচ্ছে। এটি আমার ও আজাদের মধ্যে হওয়া একটি কল রেকর্ড। সেখানে যা শোনা গেছে, সব সত্য। তারা চাঁদা দাবি করেছিল এবং আমার কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে।”

এ বিষয়ে সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অভিযুক্ত জহুরুল ইসলাম তানভীর বলেন, “এটা পুরনো একটি ঘটনা। আমাদের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি তদন্তাধীন। সম্প্রতি খুলনার পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামনে আনা হয়ে থাকতে পারে।”

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. ইনামুল হাসান বলেন, “নবপর্যায়ের নেতৃত্ব একটি আর্থিক স্বচ্ছতা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মকে কোনো অপরাধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং প্রশাসনকে আইনগত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত বলেন, “আমি বর্তমানে ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছি। ফিরেই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”

ঢাকা/হাসিবুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স জ জ দ ল ইসল ম আজ দ ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ