চাউলের বাজারে নূতন করিয়া উত্তাপ কেবল উদ্বেগজনক নহে, বিস্ময়করও বটে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবারও রাজধানীর খুচরা বাজারে সরু চাউল ৭৫ হইতে ৮৫ টাকা, মোটা চাউল ৫৫ হইতে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হইয়াছে। সরকারি বাণিজ্য ও বিপণন সংস্থা টিসিবি প্রতিবেদনও বলিতেছে, গত এক মাসে সরু চাউলের দর ৫ শতাংশ এবং মাঝারি ও মোটা চাউলের দর ৯ শতাংশের অধিক বৃদ্ধি পাইয়াছে। দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্যের এমন ঊর্ধগতি সাধারণ ভোক্তার জন্য ভোগান্তিকর। চাউলের দরে এই উল্লম্ফন এমন সময়ে ঘটিয়াছে যখন বিশেষত ক্ষুদ্র ও মধ্যম পর্যায়ের কৃষকের গোলায় ধান নাই। বরং তাহাদিগকেই চাউল ক্রয় করিতে হইতেছে। অর্থাৎ এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষক দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত– একদিকে স্ব-উৎপাদিত পণ্য অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বিক্রয় করিয়াছেন, অন্যদিকে অধিক দরে চাউল ক্রয় করিতেছেন।
আমরা জানি, দেশের ধান উৎপাদক সিংহভাগই ক্ষুদ্র ও মধ্যম পর্যায়ের কৃষক। এই প্রকারে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে থাকিলে তাহাদের সর্বস্বান্ত হইতে অধিক সময়ের প্রয়োজন কি? উহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে পারে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার উপর। ইহা পরিহাসজনক, ফলন উত্তম হইলে সাধারণত সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে বাজারে দর হ্রাস পায়। কিন্তু এইবার দেখা যাইতেছে বিপরীত প্রবণতা। দেশের মোট চাউলের প্রায় ৫৫ শতাংশ বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়, যাহা মাত্র কিছুদিন পূর্বে শেষ হইয়াছে এবং এই মৌসুমে রেকর্ড ২ কোটি ১৪ লক্ষ টন চাউল উৎপাদন হইয়াছে। বিশেষজ্ঞরা বলিয়া থাকেন, সরকারি পর্যায়ে খাদ্যের মজুত পর্যাপ্ত হইলে তাহার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলিতেছে, এখন দেশের বিভিন্ন গুদামে খাদ্য মজুত আছে সাড়ে ১৭ লক্ষ টনের অধিক। ধান ও চাউলের এই মজুত গত বৎসর অপেক্ষা অধিক। অথচ টিসিবির হিসাবমতে, চাউলের দর গত এক বৎসরের ব্যবধানে গড়ে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাইয়াছে। এই সকল অসংগতি সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি সম্যক অবহিত হইলেও সেইগুলি দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হইতেছে না। চাউলের বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে, সত্য। বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাউল আমদানিতে কর-শুল্ক হ্রাস করিয়াছে। কিন্তু চাউল এমন পণ্য, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাহার ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ায় বৃহৎ পুঁজির নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী ভিন্ন অন্যদের প্রবেশাধিকার সীমিত। অন্যদিকে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা খাদ্য বিভাগ চাউলের বাজারে কখনও কখনও অভিযান পরিচালনা করে বটে; তাহা কেবল খুচরা পর্যায়ে। চাউলকলের ফটক কিংবা বেসরকারি গুদামে নজরদারি দুর্বল। ফলে চাউলের বাজারের উত্তাপ হ্রাসে সরকারের সীমিত উদ্যোগ সামান্যই ফল বহিয়া আনিতে পারে।
চাউলের এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির দায় বরাবরের ন্যায় চাপিয়াছে চাউলকল মালিকগণের উপর; যদিও তাহাদের ভাষ্য– বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় মজুত করিবার সক্ষমতা তাহাদের নাই, যাহা আছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলির। বিশ্লেষকরাও বলিতেছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলি ঈদের পূর্বে কৃষকের নিকট হইতে কম মূল্যে ধান ক্রয় করিয়া মজুত করিয়াছে এবং এখন কৃত্রিম সংকট দেখাইয়া মূল্য বৃদ্ধি করিতেছে। চাউলকল কিংবা করপোরেট– দায়ী যাহারাই হউক, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি ও নজরদারির অভাবেই যে উহা ঘটমান, তাহাতে সন্দেহ নাই। ফলস্বরূপ বিপাকে পড়িতেছে যে প্রান্তিক ভোক্তা ও উৎপাদক, উহাও সমান সত্য। চাউলের বাজার লইয়া এই সকল বিশ্লেষণ ও আলোচনাও নেহাত কম হয় নাই। এখন কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ উল র ব জ র কর য় ছ পর য য় সরক র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’