বাংলার প্রত্নতত্ত্ব ঐতিহ্যের মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অন্যতম। বাড়িটি হয়ে উঠেছে রাজশাহীর অনন্য পর্যটনকেন্দ্র। কেবল রাজশাহী নয়, দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও প্রতিদিন ছুটে আসছেন বাড়িটির চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের টানে। শুধু সৌন্দর্য নয়, এ অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় অনেকেই স্থানটিকে বেছে নেন ভ্রমণ ও গবেষণার ক্যানভাস হিসেবে। এক সময় স্থানটি মহারানী হেমন্ত কুমারীর বাসভবন বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত ছিল। ঢাকা থেকে দূরত্ব প্রায় ২২০ কিলোমিটার। রাজবাড়ির চত্বরটি বিস্তৃত ৪ দশমিক ৩১ একর আয়তনের জমির ওপর। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর সরকারিভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ রাজবাড়িটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তাই পুঠিয়া রাজবাড়িটি এখন জনপ্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি একটি অনন্য জাদুঘরও। এর আশপাশে ছয় একর আয়তনের ছয়টি ঐতিহাসিক দিঘি রয়েছে। রাজাদের স্মৃতিবিজড়িত বড় গোবিন্দ মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, বড় শিবমন্দির, ছোট শিবমন্দির, ছোট আহ্নিকমন্দির, জগদ্ধাত্রীমন্দির, দোলমন্দির, রথমন্দির, গোপালমন্দির, সালামের মঠ, খিতিশচন্দ্রের মঠ, কেষ্ট খেপার মঠ, হাওয়া খানাসহ ১৫টি প্রাচীন স্থাপনার দেখা মিলবে এই রাজবাড়ির চারপাশে। কথিত আছে, সতেরো শতকের শুরুর দিকে জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভের পর পুঠিয়া রাজবাড়ি রূপে পরিচিতি লাভ করে।
রাজবাড়িতে ঘুরতে আসা স্থানীয় তরুণ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এখানে আমাদের পদচারণা। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুঠিয়ার এই রাজবাড়ি। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই মানুষ এখানে আসেন। এটি আমাদের গর্বের, যা পুঠিয়াকে সমৃদ্ধ করেছে।’
সময়ের আবর্তে জমিদারি বিলুপ্ত হলেও প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা এখনও টিকে রয়েছে। অপরূপ এ প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে নির্মাণ করেছিলেন। অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ, রানীর স্নানঘাট, অন্দর মহলসহ রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ অলংকরণ, চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণশৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ির সমতল ছাদে লোহার বিম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে।
নিরাপত্তার জন্য বাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল। বর্তমানে পর্যটকরা ২০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করছে। রাজবাড়িটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। v
সুহৃদ, পুঠিয়া (রাজশাহী)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস