ডুবে গেছে ফেনী-পরশুরাম সড়ক, বিকল্প পথে যাতায়াতে ভোগান্তি
Published: 9th, July 2025 GMT
টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে পরশুরামের সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ছাগলনাইয়া-খন্ডলহাই সড়ক ব্যবহার করছেন। তবে, ওই সড়কে যানবাহন কম এবং ভাড়া বেশি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সিএনজি অটোরিকশার চালক আবদুল ওয়াদুদ বলেছেন, “ফেনী থেকে মুন্সিরহাট পর্যন্ত যাওয়া গেলেও এর পর পুরো সড়ক পানির নিচে। তাই, খন্ডলহাই সড়ক ব্যবহার করছি।”
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শ্যামল রায় বলেছেন, “পরশুরাম যেতে দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হচ্ছে। যাতায়াত কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা রাজু বলেছেন, গতকাল রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ করে বাড়িতে পানি উঠে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরের ভেতর হাঁটুসমান পানি হয়। কোনোরকমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি।
এদিকে, ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেনী কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানিয়েছেন, মুহুরী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালের চেয়ে পানিপ্রবাহ কিছুটা কমলেও বাঁধ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজীর অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলার অন্তত সাতটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙেছে। এতে ১৪টি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরশুরাম ও ফুলগাজীতে ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে আগেভাগে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারও সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত পরশ র ম
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।