পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট! ইতিহাস গড়লেন আয়ারল্যান্ডের ক্যাম্ফার
Published: 11th, July 2025 GMT
ক্রিকেট ইতিহাসে এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখা যায়নি। টানা পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট! আর এই অবিশ্বাস্য কীর্তির জন্ম দিলেন আয়ারল্যান্ডের পেসার কার্টিস ক্যাম্ফার।
ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ইন্টার-প্রভিন্সিয়াল টি-টোয়েন্টি ট্রফির ম্যাচে নর্থ-ওয়েস্ট ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে মানস্টার রেডসের হয়ে খেলতে নেমে ক্যাম্ফার গড়লেন পুরুষ পেশাদার ক্রিকেটে এক অনন্য রেকর্ড। ম্যাচের ১২তম ওভারে প্রথম চার বলে কিছুটা খরুচে ছিলেন তিনি। দিয়েছিলেন ৯ রান। কিন্তু পরের দুটি বলে টানা দুটি উইকেট তুলে নেন ক্যাম্ফার।
এরপর ১৪তম ওভারে আবার বল হাতে ফিরে প্রথম বলেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। পরের দুটি বলেও তুলে নেন আরও দুটি উইকেট। ফলাফল, পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট। তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ২.
আরো পড়ুন:
রুটের ব্যাটে ইতিহাস, ভাঙলেন দ্রাবিড়-স্মিথের রেকর্ড
লারার প্রতি শ্রদ্ধায় ৩৬৭ রানে থেমে গেলেন মুল্ডার
ম্যাচ শেষে ক্যাম্ফার বলেন, “ওভার পরিবর্তনের কারণে কী হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেবল নিজের কাজটা করে গেছি, ভাগ্যটা সহায় ছিল।” তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আরেক ব্যাটার থাকলে কি ছয় বলে ছয় উইকেট সম্ভব হতো? হেসে জবাব দেন, “না, আমার মনে হয় না।”
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও তার রয়েছে চার বলে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি। ২০২১ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেই দুর্লভ রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। সেই তালিকায় ছিলেন রশিদ খান, লাসিথ মালিঙ্গা, জেসন হোল্ডারদের মতো তারকারা।
তবে পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট এর আগে পেশাদার পুরুষ ক্রিকেটে কেউ করেননি। নারী ক্রিকেটে অবশ্য এমন কীর্তি দেখা গেছে—২০২৩ সালে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন কেনিস এনদোলোভু।
আসলে ক্রিকেট পরিসংখ্যানে যুক্ত হলো আরেকটি বিস্ময়কর অধ্যায়। আর তাতে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো জায়গা করে নিলেন আয়ারল্যান্ডের ক্যাম্ফার।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক র ক ট র কর ড চ উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ
প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো।
তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।
এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না।
এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’
সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি।
প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়।
শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন।
এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।