তিস্তায় তীব্র ভাঙন, ঝুঁকিতে শতাধিক বসতবাড়ি
Published: 12th, July 2025 GMT
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে গত সাত দিনের ব্যবধানে ৭৫টি পরিবারের বসতবাড়ি ও শতাধিক একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকির মুখে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।
এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার কাপাসিয়া, হরিপুর, শ্রীপুর ও চণ্ডীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মুখে নদীতীরবর্তী বাসিন্দা অনেকে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া এক চর হতে অন্য চরে যাওয়া-আসা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চণ্ডীপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতিবছর তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় নদীভাঙন। চলতে থাকে বছরব্যাপী। প্রতিবছর গড়ে পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি ও বিপুল ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া গ্রামের মামুন মিয়া জানান, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর বসতবাড়িসহ এক বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ভাঙনের মুখে শতাধিক বিঘা ফসলি জমি।
হরিপুর লখিয়ারপাড়া গ্রামের সোলেমান মিয়া বলেন, প্রতিবছর নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি, আবাদি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। চর এলাকার বাসিন্দাদের বারবার ঘরবাড়ি সরাতে হচ্ছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.
হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নদীখনন ও স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে বহুবার আবেদন করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকানো না হলে চরবাসীর দুঃখ কোনোদিনও দূর হবে না।
সুন্দরগঞ্জ ইউএনও রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, আপাতত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার
নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল।
আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’
আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’
নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঢাকা/মাসুম/বকুল