তাওহিদ হলো ইসলামের মূল ভিত্তি, যা মুমিনের ইমানের কেন্দ্রবিন্দু। শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘একত্ব’ বা ‘এক করা’।
ইসলামের পরিভাষায়, তাওহিদ হলো আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করা এবং তাঁকে সব ইবাদতের একমাত্র হকদার হিসেবে মানা। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘বলো, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।’ (সুরা ইখলাস, আয়াত: ১)
বলো, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।সুরা ইখলাস, আয়াত: ১তাওহিদের অর্থ ও প্রকারতাওহিদ শব্দটি আরবি শব্দ ‘ওয়াহিদ’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘এক’। ইসলামি আকিদায় তাওহিদ হলো আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করা—তিনি একমাত্র স্রষ্টা, পালনকর্তা ও ইবাদতের যোগ্য।
ইমাম ইবনে কাসির বলেন, ‘তাওহিদ হলো আল্লাহর অস্তিত্ব, গুণাবলি ও ইবাদতের একত্বে বিশ্বাস করা।’ (ইবনে কাসির, ৪/৫৬২)
আরও পড়ুনকেন শিরক সবচেয়ে বড় পাপ১৮ জুন ২০২৫তাওহিদকে সাধারণত তিনটি প্রকারে ভাগ করা হয়:
তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ: আল্লাহর স্রষ্টা, পালনকর্তা ও বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হিসেবে একত্বে বিশ্বাস। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত: ২)
তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত: আল্লাহর নাম ও গুণাবলির একত্বে বিশ্বাস, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুর সাদৃশ্য নেই।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ১১)
তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ: ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস, অর্থাৎ শুধু তাঁরই ইবাদত করা। নবীজি (সা.
তাওহিদ ইমানের প্রথম স্তম্ভ, যা মুমিনের জীবনকে আল্লাহর নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত করে। তাওহিদ আমাদেরকে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার পথে রাখে।
কর্মক্ষেত্রে সততা, পারিবারিক জীবনে ধৈর্য এবং সমাজে দানশীলতা তাওহিদের শিক্ষার প্রকাশ। তাওহিদ ছাড়া ইবাদত কবুল হয় না; কারণ, এটি আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাসের ভিত্তি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমি, যাকে পাঠানো হয়েছে যে–কারণে, তা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ প্রচার করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮)
আরও পড়ুনসর্বশ্রেষ্ঠ জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক