শহীদ মিনার পার হয়ে কলা অনুষদের ঝুপড়ির দিকে একটু এগোলেই বাঁদিকে চোখে পড়ে লাল ইটের পুরোনো এক ভবন; এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারজুড়ে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, কেউ পড়ছেন একমনে, কেউ খুঁজছেন প্রয়োজনীয় বইটি। আবার কেউবা পড়ার ফাঁকে চুমুক দিচ্ছেন কফিতে। বইয়ের গন্ধ মাখা ভবনের ভেতরে কম্পিউটারের আলো, ডিজিটাল স্ক্যানার, রিমোট এক্সেসের জগৎ। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-গবেষকরা যে কোনো স্থান থেকে রিমোট এক্সেসে ব্যবহার করতে পারেন ই-জার্নাল, ই-বুক, কনফারেন্স প্রসিডিংস ও সফটওয়্যারের সাবস্ক্রিপশন। 

৫ বছর আগেও যেখানে প্রতিদিন গ্রন্থাগারে আসতেন ২০০-২৫০ শিক্ষার্থী,  এখন সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বসার স্থান বেড়েছে, বেড়েছে পড়ার পরিসর, বদলে গেছে জ্ঞানের জগৎ। লাইব্রেরির উপ-গ্রন্থাগারিক দিল রুকসানা বসুনীয়া বলেন, ‘গ্রন্থাগারে আগে বসার ব্যবস্থা ছিল ৪০০ জনের। এখন তা বেড়ে ৫৫০ হয়েছে। সামনে নতুন চেয়ার-টেবিল কেনা হবে, ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার বাজেটও পাস হয়েছে।’ শুধু ভেতরে নয়, ভবনের সামনের খোলা জায়গাকেও পাঠ-উপযোগী করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

গ্রন্থাগারের এ উন্নতির পেছনে রয়েছে নিয়মিত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ও লোকবল বৃদ্ধি। আগে যেখানে শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকত, এখন বিশেষ সরকারি ছুটি ছাড়া লাইব্রেরি খোলা থাকে বছরের প্রতিদিন। তিনতলা ভবনে এখন দায়িত্ব পালন করেন ১৪ জন কর্মকর্তা ও ৫০ জন কর্মচারী।

কারা আসেন গ্রন্থাগারে: একাডেমিক পরীক্ষা বা থিসিস জমার সময় হলে শিক্ষার্থীদের ভিড় পড়ে যায় গ্রন্থাগারে। তবে সবচেয়ে বেশি আসেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। কলা অনুষদ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৭০ জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে ১৫০ জন, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ মিলিয়ে প্রায় ২০০ জন আর ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ থেকে আসেন প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী।

সংস্কৃত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘এখন আর গ্রন্থাগার মানে শুধু বই না। এখানে ফ্যান-লাইট থেকে শুরু করে কফি মেশিন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক কাজ করে। পরিবেশটাই পড়ার মতো।’ সমাজতত্ত্ব বিভাগের জারিন আকতার বলেন, ‘ডিজিটাল সুবিধাগুলো খুব কাজে লাগে। বিদেশি আর্টিকেল খুঁজে পাওয়া এখন অনেক সহজ। আবার শুনছি বারকোড সিস্টেম চালু হবে, তখন তো আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে বই পেয়ে যাব।’

তবে সবার অভিজ্ঞতা এক রকম নয়। নৃবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মুজাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাইরের বই লাইব্রেরিতে আনতে না পারা একটা সমস্যা। বিসিএস কিংবা ব্যাংক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই নিয়ম কিছুটা শিথিল হওয়া দরকার।’

ডিজিটাল লাইব্রেরিতে রূপান্তর : গ্রন্থাগারিক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড.

মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা পুরো ইস্যু শাখাকে ডিজিটাল করেছি। কোন বই কার কাছে আছে, সেটা অনলাইনেই জানা যাচ্ছে। সামনে বারকোড স্ক্যানার চালু হলে বই খোঁজাও হবে সহজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এখন ইউজিসি ডিজিটাল লাইব্রেরি ও লাইব্রেরি কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশের সদস্য। প্রতিবছর ৩৫-৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ই-জার্নাল, ই-বুক, কনফারেন্স প্রসিডিংস ও সফটওয়্যারের সাবস্ক্রিপশন নবায়ন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-গবেষকরা যেকোনো স্থান থেকে রিমোট এক্সেসে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা : ১৯৬৬ সালে মাত্র ৩০০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই গ্রন্থাগার। এখন বইয়ের সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ৫৬৫টি প্রাচীন পুঁথি, ৩৫০০ দুর্লভ সাময়িকী, ১৮৭২ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ। এইসব সংরক্ষণের জন্য বসানো হয়েছে বিশেষ স্ক্যানার। তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক ডিজিটাল আর্কাইভ। প্রতিটি তলায় রেফারেন্স, গবেষণা, কম্পিউটার ল্যাবসহ ২৪টি গবেষণা কক্ষ ও বিষয়ভিত্তিক পাঠকক্ষ চালু রয়েছে।

গ্রন্থাগারের কর্মচারী আবু সাদাত বলেন, ‘আগে দিনে ৫০ জন এলেই মনে হতো অনেক ভিড়। এখন প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী আসেন। কাজের চাপ বেড়েছে, কিন্তু পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো।’ উপ-রেজিস্ট্রার এস.এম. নোমান বলেন, ‘এখন লাইব্রেরি আর শুধু বই রাখার জায়গা নয়। এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও পাঠচর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই, জাতীয়ভাবে এটি রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাক।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ রন থ গ র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ