রাজস্ব খাত নিয়ে অধ্যাদেশে চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে: জ্বালানি উপদেষ্টা
Published: 13th, July 2025 GMT
রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ করার সময় চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এই অধ্যাদেশ যাঁরা প্রণয়ন করেছেন, তাঁরা এ চতুরতার আশ্রয় নেন।
আজ রোববার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, এই অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হবে। এই দুই বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের যেমন আধিপত্য থাকবে না, তেমনি শুল্ক ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আধিপত্য থাকবে না।
রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদ ও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আলাদা একটি নীতিমালার পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সচিব পদে ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
গত ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগে পৃথক করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এ নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা আন্দোলন করেছেন।
রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বাড়ানোসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির অগ্রগতি জানাতেই আজকের সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
ফাওজুল কবির খান বলেন, এই অধ্যাদেশ নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের দ্বন্দ্বের কারণে। অধ্যাদেশটি হঠাৎ পরিবর্তন করা হলো।
এই অধ্যাদেশে মৌলিক ত্রুটি রয়েছে বলে জানিয়ে জ্বালানি উপেদষ্টা বলেন, একটি জায়গায় বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত ব্যক্তিকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব করা হবে। এই উপযুক্ত ব্যক্তি কে? আবুল বারকাত? এই অধ্যাদেশে কতগুলো সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা কমিটির পক্ষ থেকে এসব সমস্যা সমাধানের কথা অর্থ উপদেষ্টাকে জানাব।’
ফাওজুল কবির বলেন, ‘এনবিআর থাকবে না। প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে মানুষ অট্টহাসি দেয়। কেন দেয়, সেটা আপনারা সবাই জানেন। এই নাম না থাকলেই ভালো। রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারি যেমন থাকবে না, তেমনি শুল্ক ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের খবরদারিও থাকবে না।
উপদেষ্টা পরিষদে কীভাবে এই অধ্যাদেশ পাস হলো—এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি না। আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ জন্যই সরকার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সবার ভুল হয়। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা সেটা সংশোধন করছি।’
এনবিআরের আন্দোলন ঠেকাতে দুদককে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির বলেন, দুদককে মোটেই ব্যবহার করা হয়নি। এ প্রক্রিয়া আগেই নেওয়া হয়েছিল। এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এনবিআর কর্মকর্তাদের আচরণ এ প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। তারা যদি নির্দোষ হন, দুদক তাদের দায়মুক্তি দেবে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে—এ বিষয়ে জানতে চাই ফাওজুল কবির খান বলেন, কর্মকর্তারা সরকারের আস্থা হারিয়েছেন। তাঁদের আচরণের মাধ্যমে এ আস্থা হারিয়েছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাঁদের রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে হবে।
আপনারা তাঁদের অভয় দিচ্ছেন কি না—প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘তারা কেউ শিশু নয়। আন্দোলনের শুরুর দিকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তারা দুই মাস আন্দোলন করেছে। এটা খাতুনগঞ্জের আড়ত নাকি? সবাই কাজকর্ম ফেলে আন্দোলনে নেমেছে। ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এখন তাদের উচিত হবে, সরকারের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফেরাতে। এটা তো ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়।’
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, তাঁরা (এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারী) রাজস্ব আদায়ে বাধা দিয়েছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করতে আন্দোলনের নামে তাঁরা সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। সরকার অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন দ্রুত অর্থ উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন স্থগিত করলেও দেখা যাচ্ছে, রাজস্ব আহরণের গতি কম। এসব দেখতে আমরা মাঠপর্যায় পরিদর্শনে যাব। আগে কী সেবা দিয়েছিলেন, এখন কী সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং রাজস্ব আহরণের গতি কেমন, তা দেখতে যাব।’
পাল্টা শুল্ক: ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে থাকার সুযোগ নেইমার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কহার নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা অন্ধকারে রয়েছেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে থাকার কোনো সুযোগ নেই। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা বাণিজ্য আলোচনার চেয়েও ব্যাপক। শুধু শুল্ক নয়, সেখানে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য দেশের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পর্ক রাখছেন, সেটাও তারা দেখছে। এই নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক করা হচ্ছে। সেটাও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। শুধু শুল্ক নয়, অশুল্ক বাধা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর মকর ত দ র ব যবস য় দ র উপদ ষ ট হয় ছ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কী, সমাধান কোথায়: শুনুন তামিমের মুখে
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? কোন বিষয়টি সবার আগে সমাধান করা উচিত?
দুটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক কথাই বলবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারও বিষয়টি ভালো জানার কথা। যেমন তামিম ইকবাল। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র তামিমের সামনে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। তামিমের উত্তর, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ফ্যাসিলিটিজ (অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা) নাই।’
প্রথম আলোর কার্যালয়ে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আড্ডার মেজাজে তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—এসব নিয়েও বেশ খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই ওপেনার।
আলাপচারিতার একপর্যায়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ মুহূর্তের সমস্যার প্রসঙ্গ উঠেছিল। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাবকে সামনে টেনে এনে তামিম বলেছেন, ‘একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি (ক্রিকেট), যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, তার আশপাশেও নেই। পৃথিবীর তৃতীয়, চতুর্থ ধনী বোর্ডের যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, আমরা এর আশপাশেও নেই।’
তামিম বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্রিকেট দলের প্রতি ভক্তদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণের জন্য যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার, আমরা তার আশপাশেও নেই। আপনি মাঝারি মানের ক্রিকেটার হতে পারেন কিংবা মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান হতে পারেন, সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি মাঝারি মান থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠতে পারবেন।’
মুশফিকুর রহিম