আগের দিন জয়ের পর ‘দেশ, দেশ, দেশ…সাবাস বাংলাদেশ গানটি বেজেছিল।’ আজ তুমুল উত্তেজনা, চরম রোমাঞ্চ, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের পর আবার বাংলাদেশ জিতল। আজকের জয়ের সঙ্গীতটা হতে পারত আরো তেজদীপ্ত। 

কিন্তু শোকের আবহে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হওয়াতে স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের জয়ের পর কেবল দর্শকদের প্রতিধ্বনি শোনা গেল। মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোকে কাতর পুরো দেশ। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়াতে মাঠে নামতেই হতো লিটনদের। মিরপুরে তারা নামলেন। পরাজয়ের শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে তারা জয়সূর্যর দেখা পেয়েছেন। 

৮ রানের জয়ে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছে সিরিজ। এই অর্জনকে তাদেরকেই উৎসর্গ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। অধিনায়ক লিটন পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বলেছেন, ‘‘এই সিরিজ জয় সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্তদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি উৎসর্গীকৃত। আমরা জানি যে, আমরা প্রাণ হারানো জীবনের শূন্যতা পূরণ করতে পারব না, কিন্তু অন্তত আমাদের পক্ষ থেকে, এই সিরিজটি তাদের প্রতি উৎসর্গীকৃত।’’ 

আরো পড়ুন:

এক মিনিট নিরাবতা পালন করে শুরু বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম‌্যাচ

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে সিরিজ বাংলাদেশের

ম্যাচের আগে দুই দল নীরবতা পালন করেছেন। ম্যাচ অফিসিয়াল ও খেলোয়াড়রা কালো ব্যাজ পড়েছিলেন। শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে লড়াই করে। পেন্ডুলামে দুলছিল ম্যাচ। কখনো পাকিস্তানের পক্ষে ম্যাচ চলে যায়। কখনো বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। শেষমেশ দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতার পর জয়ের হাসি হেসেছে বাংলাদেশ। 

টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৩ রান করে বাংলাদেশ। ওই রান তাড়া কতে নেমে ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়েও পাকিস্তান লড়াই চালিয়ে যায়। ফাহিম আশরাফ দুর্দান্ত ফিফটি তুলে বাংলাদেশ শিবিরে ভয় ধরিয়ে দেয়। কিন্তু তাকে ঊনিশতম ওভারে থামিয়ে বাংলাদেশ জয় নিশ্চিত করে ফেলে। শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার থাকলে পাকিস্তান শেষ উইকেটে ৪ রানের বেশি জমা করতে পারেনি। ১২৫ রানে আটকে ৮ রানে ম্যাচ হেরে যায়। 

উইকেট আগের দিনের তুলনায় একটু ভালো হলেও বোলাররা সুবিধা পেয়েছেন বেশি। বাংলাদেশের ব্যাটিংও ভালো হয়নি। ২৮ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে জাকের আলী ও মাহেদী হাসান জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নেন। মাহেদী ৩৩ রান করে ফিরলেও জাকের ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে ৫৫ রান করেন ১ চার ও ৫ ছক্কায়। দুর্দান্ত এই লড়াইয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।   

একাদশে ফেরা নাঈমের ব্যাটিং ভালো হয়নি। ৭ বলে ৩ রান করে ফেরেন। লিটনের ব্যাট থেকে আসে কেবল ৮ রান। তাওহীদ খুলতে পারেননি রানের খাতা। ১৩ রানে থেমে যান পারভেজ। শামীম করেন কেবল ১। 

পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট নেন সালমান মির্জা, আহমেদ দানিয়েল ও আব্বাস আফ্রিদি। 

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের শুরু ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ দুেই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি। ম্যাচের এপিটাফ মনে হচ্ছিল লিখা হয়েছে সেখানেই। কিন্তু না…ফাহিমের ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৩২ বলে ৫১ রানের ইনিংসে হিসেব পাল্টে দেয়। সঙ্গে আব্বাস আফ্রিদির ১৯ ও দানিয়েলের ১৭ রানে জয়ের আশায় ছিল পাকিস্তান। 

কিন্তু শেষ দিকে বোলারদের ফিরে আসায় বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায় ৪ বল আগে। 

১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শরীফুল ছিলেন বাংলাদেশের সেরা। ২টি করে উইকেট নেন মাহেদী ও তানজিম হাসান। 

সিরিজ জয়ের মিশনে সফল বাংলাদেশ। একদিন পরই তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারবে তো বাংলাদেশ?

 

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর র জয় র উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ