অস্থিরতার কারণে নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে: জোনায়েদ সাকি
Published: 23rd, July 2025 GMT
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে রাজনীতির আকাশে আবার মেঘ আসছে বলে মনে হচ্ছে, যা নির্বাচন হওয়া নিয়ে একধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। বুধবার বিকেলে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে হবে। এটা একসঙ্গে চলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটাবে। এটা এখন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। কাজেই যেকোনো ধরনের তৎপরতা যদি বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধেই যায়। কাজেই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আগামী ৫ আগস্ট অথবা এর পরবর্তী দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা দরকার বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী। তিনি বলেন, সরকারের উচিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরি করা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যথাসম্ভব ন্যায্য আচরণ করার মধ্য দিয়ে সরকারকে নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে হবে।
এ সময় জোনায়েদ সাকি জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছেন, জনগণ ভরসা করতে পারে, সেভাবে যেন হতাহতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং ওই ঘটনায় গাফিলতি থেকে থাকলে তাঁর স্বচ্ছ তদন্ত করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
‘দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন’এর আগে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৮তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সাংবিধানিক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবেন। রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছে। আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এর আগে আমরা ঐকমত্য কমিশনে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেগুলো ঐতিহাসিক ছিল। তবে আজকের সিদ্ধান্তটি আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া বলেই আমি মনে করি। অনেক দিন ধরে আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি, বিশেষ করে ২০১৪ সালের তথাকথিত নির্বাচনের পর থেকে, যখন থেকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।’
নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘নিয়োগ যদি শুধু প্রধানমন্ত্রীর বা এক্সিকিউটিভের (নির্বাহী বিভাগের) হাতে থাকে, তবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বরং সেগুলো দলীয় সরকারের প্রতি অনুগত হয়ে পড়ে। এটাই আমরা বারবার বলেছি।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আন্দোলন ও চাপ। তিনি বলেন, ‘এই লড়াই আমরা অনেক দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছি, রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য। এই লড়াইয়ে আমাদের দল গণসংহতি আন্দোলন ছাড়াও অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল ধাপে ধাপে যুক্ত হয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে এই কাঠামো আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে এবং সংসদের মাধ্যমে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই রকম মৌলিক সংস্কারগুলো যুক্ত হতে থাকলে একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সফল হতে পারব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তবে কারা, সেটা স্পষ্ট করেননি তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডে জাপা কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শামীম হায়দার পাটোয়ারী এ মন্তব্য করেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু দল ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে বা স্বাক্ষর করে একধরনের ফাঁদে পড়ে গেছে। কিছু রাজনৈতিক দল বলছে, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা করেছে। এখানে প্রতারক ও প্রতারণা শব্দটি উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো এ রকম সংস্কার চাইনি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ঐকমত্য তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে জাপা মহাসচিব বলেন, কমিশন ৫৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দলকে বাদ দিয়েছে। যে দলগুলো সেখানে গেছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ আছে। এক ভাগকে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ করেছে। অন্য আরেক ভাগ ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে পরে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করেছে।
বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বলে দাবি করেছেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। কারণ, নির্বাচিত সরকার সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করেছে ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। এই মুহূর্তে দেশে যে প্রশাসনিক কাঠামো আছে, তার ব্যাপারে তথ্য উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, তাঁরা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কথামতো প্রশাসন সাজিয়েছে, তার সঙ্গে এনসিপি আছে। এই তিন দলের বাইরে অন্য কোনো দল যদি ভোটে আসে, এই প্রশাসনিক কাঠামো সেই দলকে সুষ্ঠু ভোট হতে দেবে না।
গণভোটের দাবি নজিরবিহীন উল্লেখ করে শামামী হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে এই মুহূর্তে গণভোট কোনো প্রভিশনে নেই। বর্তমানে গণভোটের যে দাবি উঠেছে, সংসদে পাস হওয়ার আগে এই দাবি বাস্তবায়ন হলে ঐকমত্য কমিশনকে সংসদের মর্যাদা দেওয়া হবে। ঐকমত্য কমিশন সার্বভৌম নয়, নির্বাচিত নয় ও সংসদ নয়। সংসদকে এড়িয়ে গিয়ে কোনো আইন পাস করা হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে।
এ সময় জাপার কো–চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজমল হোসেন, সদস্যসচিব হাজী আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুজ্জামানসহ জাপা ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।