গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে রাজনীতির আকাশে আবার মেঘ আসছে বলে মনে হচ্ছে, যা নির্বাচন হওয়া নিয়ে একধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। বুধবার বিকেলে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে হবে। এটা একসঙ্গে চলে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটাবে। এটা এখন বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় স্বার্থ। কাজেই যেকোনো ধরনের তৎপরতা যদি বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধেই যায়। কাজেই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আগামী ৫ আগস্ট অথবা এর পরবর্তী দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা দরকার বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী। তিনি বলেন, সরকারের উচিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরি করা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যথাসম্ভব ন্যায্য আচরণ করার মধ্য দিয়ে সরকারকে নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে হবে।

এ সময় জোনায়েদ সাকি জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছেন, জনগণ ভরসা করতে পারে, সেভাবে যেন হতাহতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং ওই ঘটনায় গাফিলতি থেকে থাকলে তাঁর স্বচ্ছ তদন্ত করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

‘দেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন’

এর আগে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৮তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সাংবিধানিক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবেন। রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছে। আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এর আগে আমরা ঐকমত্য কমিশনে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেগুলো ঐতিহাসিক ছিল। তবে আজকের সিদ্ধান্তটি আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া বলেই আমি মনে করি। অনেক দিন ধরে আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি, বিশেষ করে ২০১৪ সালের তথাকথিত নির্বাচনের পর থেকে, যখন থেকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।’

নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘নিয়োগ যদি শুধু প্রধানমন্ত্রীর বা এক্সিকিউটিভের (নির্বাহী বিভাগের) হাতে থাকে, তবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বরং সেগুলো দলীয় সরকারের প্রতি অনুগত হয়ে পড়ে। এটাই আমরা বারবার বলেছি।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আন্দোলন ও চাপ। তিনি বলেন, ‘এই লড়াই আমরা অনেক দিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছি, রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য। এই লড়াইয়ে আমাদের দল গণসংহতি আন্দোলন ছাড়াও অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল ধাপে ধাপে যুক্ত হয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে এই কাঠামো আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে এবং সংসদের মাধ্যমে তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই রকম মৌলিক সংস্কারগুলো যুক্ত হতে থাকলে একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সফল হতে পারব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি

জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে বিতর্ক বা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতেও কোনো স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান হলে তখন তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি উঠতে পারে।

গতকাল সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা এ অভিমত জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫–এর খসড়া এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে এ সভা হয়। রাত ৮টা থেকে সভা শুরু হয়ে পৌনে ১২টা পর্যন্ত সভা চলে। সভায় জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, খসড়ার সঙ্গে তাঁরা মোটামুটি একমত। অঙ্গীকারের বিষয়ে বিএনপি একমত। সেখানে শব্দ, বাক্য গঠনসংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি তাদের পর্যবেক্ষণ কমিশনকে জানাবে।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতেই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ার কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে দলীয় মতামত কমিশনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো জুলাই সনদের খসড়ায় ৭ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব। ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, এই সনদ গৃহীত হওয়ার পর এতে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন, ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো সরকার গঠনের দুই বছর মেয়াদকালের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত আছে। এ ছাড়া জুলাই সনদের খসড়ার বাকি ছয় দফা অঙ্গীকারনামার সঙ্গে তাঁরা একমত। জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির অভিমত হচ্ছে, এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হলে অতীতের আরও ঘটনা যেমন নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান এবং ভবিষ্যতেও গণ-অভ্যুত্থান হলে তারও সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্ন আসবে। এতে করে জটিলতা বাড়তে পারে। তা ছাড়া একাত্তরের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহাত্তরে প্রণীত সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত ছিল না ২০১১ সাল পর্যন্ত। ওই বছর সপ্তম তফসিলে তা যুক্ত করা হয়, যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে।

এমতাবস্থায় জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয় মনে করে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা এটিকে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে রাষ্ট্রের আর্কাইভে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, একটা বিপ্লবকে সংবিধানে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাই জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতেই থাকতে চায় বিএনপি।

বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করতে চায় তারা। পুরো ঘোষণাপত্র নয়, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদে ঘোষণাপত্রের উল্লেখ থাকবে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দলটি সেখানে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করাসহ কিছু শব্দ ও ভাষাগত পরিবর্তন এনেছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপির) পক্ষ থেকে মতামত জানানো শেষ। যা দেওয়ার দিয়ে দিয়েছি, আমরা আর কোনো মতামত দেব না।’

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপি আর আলোচনা করতে চায় না। তবে জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। কারণ, সংস্কারের ব্যাপারে তারা আন্তরিক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’
  • দুদক ও পিএসসির বিষয়ে বিএনপিকে অবস্থান পরিবর্তনের আহ্বান এনসিপির
  • রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে: আলী রীয়াজ
  • এনসিপির ব্যানার ব্যবহার করে অনেকে চাঁদাবাজিতে যুক্ত হচ্ছেন: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • জুলাই সনদ হওয়ার পর নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা: নাহিদ