ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল ‘অনাহার সৃষ্টির মাধ্যমে জাতিগত নিধন’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন খ্যাতনামা দুর্ভিক্ষ–বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালেক্স ডি ওয়াল। উপত্যকাটিতে অবরোধের মাধ্যমে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর ২১ মাসের বেশি সময়ে গাজায় অন্তত ১২২ ফিলিস্তিনি অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন, তাঁদের অধিকাংশই শিশু। এ ছাড়া গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের বিতর্কিত একটি সংস্থার ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

গাজায় জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে টানা ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর গত ২৬ মে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। শুরু থেকেই সংস্থাটির কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। জিএইচএফের দেওয়া খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

গত মঙ্গলবার মিডল ইস্ট আইয়ের এক অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল বলেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার মতো অবস্থায় নেই জাতিসংঘ। কারণ, ইসরায়েলের বাধার কারণে ত্রাণকর্মী ও অনুসন্ধানকারীরা সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন না। এর ফলে ক্ষুধার ভয়াবহতা যাচাই করে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না।

ডি ওয়াল বলেন, ‘আপনি যদি কোথাও পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে চান, তাহলে তুলনামূলকভাবে সহজ কাজটা হলো, আপনি প্রথমে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করে দেবেন। তারপর বলবেন, দেখুন, কেউ তো দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেনি।’ তিনি আরও বলেন, দুর্ভিক্ষ গোপন করাও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার একটি কৌশল। গাজায় ঠিক যেভাবে অনুমান করা হয়েছিল, সেভাবেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিচ্ছে।

অ্যালেক্স ডি ওয়াল ওয়ার্ল্ড পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে সংযুক্ত। তিনি ‘মাস স্টারভেশন: দ্য হিস্টরি অ্যান্ড ফিউচার অব ফ্যামিন’ বইয়ের লেখক।

বাবার কোলে অপুষ্টিতে ভোগা ১৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশু। গাজার বুরেইজ শরণার্থীশিবিরে। ১২ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ