থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া তৃতীয় দিনের মতো পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। সংঘাত ছড়িয়েছে আরও বেশি এলাকায়। তিন দিন ধরে চলমান এই সংঘাতে দুই দেশে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। এরই মধ্যে সংঘাত থামাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কম্বোডিয়া। তবে এ বিষয়ে জোরালো সাড়া মেলেনি ব্যাংকক থেকে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাত শুরু হয়েছে শত বছরের বেশি পুরোনো সীমান্ত বিরোধ থেকে। আজ শনিবার সংঘাতের তৃতীয় দিনে নতুন করে থাইল্যান্ডের উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাত এবং কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে সংঘাত শুরু হয়েছে। সংঘাতের অন্যান্য কেন্দ্র থেকে এই দুই অঞ্চলের দূরত্ব শতাধিক কিলোমিটার। দুই দেশের মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে।

নতুন এলাকায় সংঘাত শুরুর আগে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দেশটির সুরিন, উবন রাতচাথানি ও শ্রিসাকেত প্রদেশে সংঘাত চলছে। আটটি জেলায় সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা আজ জানিয়েছেন, তিন দিনের সংঘাতে দেশটিতে ১৩ বেসামরিক মানুষ ও ৬ সেনা নিহত হয়েছেন। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে।

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সংঘাত শুরু হয় বৃহস্পতিবার। প্রথম দুই দিন নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি কম্বোডিয়া। তবে আজ দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন দিনে থাইল্যান্ডের হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন বেসামরিক মানুষ এবং ৩ জন সেনাসদস্য। সংঘাতের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ।

তিন দিন ধরে চলমান সংঘাতে একে অপরের ওপর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের বেসামরিক এলাকাগুলোয় কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী কামানের গোলা ও রকেট ছুড়ছে বলে অভিযোগ এনেছে ব্যাংকক। অপর দিকে নমপেনের অভিযোগ, বিতর্কিত ক্লাস্টার (গুচ্ছ) বোমা ব্যবহার করছে থাই বাহিনী। তবে এমন অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি থাইল্যান্ড।

‘স্বামীর খোঁজখবর পাচ্ছি না’

১৯০৭ সালে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমানা নির্ধারণ করে দেয় ফরাসি ঔপনিবেশিক সরকার। তবে ওই মানচিত্র নিয়ে আপত্তি ছিল ব্যাংককের। আপত্তির বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গড়িয়েছে। তবে বরাবরই আদালতের রায় গেছে কম্বোডিয়ার পক্ষে। তারপরও কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে শত বছরের বেশি সময় ধরে সংঘাতে জড়িয়েছে থাইল্যান্ড।

এসব সংঘাতে বড় ভুক্তভোগী দুই দেশের সাধারণ মানুষ। এবারও ব্যতিক্রম নয়। আজ রয়টার্সের প্রতিবেদনে সংঘাতের কারণে থাইল্যান্ডের শ্রিসাকেত প্রদেশে মানুষের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রদেশটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণকে অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে পরিণত করা হয়েছে। এক স্বেচ্ছাসেবক জানিয়েছেন, সেখানে ৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ৫১ বছর বয়সী নারী সামরং খামদুয়াং। নিজের খেতখামার ছেড়ে ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসেছেন তিনি। গৃহপালিত পশুপাখির দেখভালের জন্য রেখে এসেছেন স্বামীকে। এই নারী বলেন, ‘গোলার শব্দে ভয় পেয়েছিলাম। এখন স্বামীর কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না। ফোনকলও করতে পারছি না। জানি না সেখানে কী ঘটছে।’

দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয় গত মে মাসে। সে সময় সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হন। এরই মধ্যে সম্প্রতি সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হন থাইল্যান্ডের এক সেনা। ওই ঘটনার জেরে বুধবার কম্বোডিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নেয় থাইল্যান্ড। কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও ব্যাংকক থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন থেকেই শুরু হয় সংঘাত।

যু্দ্ধবিরতির আহ্বান কম্বোডিয়ার

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সংঘাত নিয়ে শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেখানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চেয়া কেও। তাঁর বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, শর্তহীন যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি সীমান্ত নিয়ে ব্যাংকক ও নমপেনের দীর্ঘদিনের বিরোধের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় কম্বোডিয়া।

তবে কম্বোডিয়ার এই আহ্বানে জোরালো সাড়া দেয়নি থাইল্যান্ড। গতকাল থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়ামপোংসা বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা এগিয়ে নিতে কম্বোডিয়ার উচিত সংঘাত অবসানের জন্য প্রকৃত অর্থ আন্তরিকতা দেখানো। এর আগে শুক্রবার সতর্ক করে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেছিলেন, সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

থাইল্যান্ডের ‘আগ্রাসনের’ নিন্দা জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নমপেন। যদিও সংঘাতের প্রথম দুই দিন—বৃহস্পতি ও শুক্রবারেই এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও চীন। আজ নতুন করে একই আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তবে সংঘাত বন্ধে তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা চায় না থাইল্যান্ড।

আরও পড়ুনথাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সংঘাতে নিহত বেড়ে ৩২, আহত ১৩০১০ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনথাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া কেন সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়েছে, সমাধান কোন পথে ৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন য় ছ কম ব ড য় র স র আহ ব ন

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ নেতাদের খোঁজ নিলেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক সজল

অসুস্থ বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় অসুস্থ প্রবীণ বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন আহম্মেদ কালু, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমল ও মহানগর যুবদলের ১ম সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদের বাসায় গিয়ে তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন তিনি।

এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন  নারায়ণগঞ্জ মহানগর ১১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন রিপন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহাদুল্লাহ মুকুল, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ, যুবদল নেতা নাসের হক ইমন, পলাশ বেপারী, আঃ রহমান, সজিব আহমেদসহ মহানগর যুবদলের নেতৃবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অসুস্থ নেতাদের খোঁজ নিলেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক সজল