ক্ষুধায় কঙ্কালসার গাজার মানুষ ঢলে পড়ছে রাস্তায়
Published: 26th, July 2025 GMT
আকরাম বশিরের সন্তানরা ক্ষুধায় সারাক্ষণ কাঁদে। তিনি কেবল তাদের বুকে জড়িয়ে ধরে বলার চেষ্টা করেন, “একদিন, যখন ইসরায়েলি অবরোধ শেষ হবে, তখন তোমরা যা খুশি খেতে পারবে।”
কিন্তু এই তিন সন্তানের ফিলিস্তিনি বাবা জানেন, তিনি এমন একটি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যা তিনি রাখতে পারবেন না।
বশির বলেন, “আমি কিছুই করতে পারি না। আমি শুধু মানসিকভাবে তাদের সাহস জোগাই। বলি, ‘ইনশাআল্লাহ, পরিস্থিতি ভালো হবে, খাবার পাওয়া যাবে।’ এর বাইরে আর কিছু করার নেই।”
আরো পড়ুন:
গাজায় কেন ‘দুর্ভিক্ষ’ ঘোষণা করছে না জাতিসংঘ?
‘আজ তুমি কিছু খেয়েছো?’ গাজায় অনাহার আর টিকে থাকার গল্প
গাজার কেন্দ্রীয় এলাকার দেইর আল-বালাহতে বসবাসরত ৩৯ বছর বয়সি বশির প্রতিদিনই খাবারের খোঁজে ছোটেন;শুধু যেন তার সন্তানদের এবং অসুস্থ ও বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বাবা-মাকে একটু খাবার দিতে পারেন, যাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা দিন দিন শুধু খারাপই হচ্ছে।
গাজার আনুমানিক ২১ লাখ মানুষের মতোই বশির ও তার পরিবার মার্চ মাস থেকে আরোপিত ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে চরম ক্ষুধায় দিন কাটাচ্ছে। হাড্ডিচর্মসার এই ফিলিস্তিনিদের অনেকে এখন রাস্তায় ও আশ্রয়শিবিরে ঢলে পড়ছে।
মাঝে মাঝে বশিরের পরিবার এক বেলার খাবার সংগ্রহ করতে পারে। অনেক সময় তাও পায় না।
“ক্ষুধার কারণে আমার সন্তানদের মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে,” বলেন বশির।
“তারা ওজন হারাচ্ছে, অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছে, মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না। সারা দিন তারা কেবল খাবারের কথাই ভাবে, বিশেষ করে মিষ্টিজাতীয় কিছু। তারা বারবার বলে, তারা ক্ষুধার্ত।”
বশির যদি তাদের জন্য কিছু খাবার জোগাড় করে আনতে পারেন, তাতে পুষ্টি থাকে পর্যাপ্ত। ফলে ক্ষুধা থেকেই যায়।
“তারা কখনোই পরিপূর্ণভাবে খেতে পারে না। খাবারে পুষ্টিগুণ নেই, সেটা তাদের তৃপ্ত করে না,” বলেন বশির।
তিনি যোগ করেন, “প্রাপ্তবয়স্করাও তেমন ভালো নেই। আমরা সবাই ওজন হারিয়েছি। সামান্য পরিশ্রমেই পুরোপুরি ক্লান্ত হয়ে পড়ি।”
তবুও বশির বিশ্বাস করেন, যতটুকু খাবারই পান না কেন, তা দিয়েই অন্তত সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা তার বাবা-মাকে নিয়ে। তারা বৃদ্ধ ও অসুস্থ। তার বাবা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
“তিনি একাধিকবার মাথা ঘোরা ও দুর্বলতার কারণে অচেতন হয়ে পড়েছেন,” বলেন বশির।
“আমাদের সবসময় তাকে নজরে রাখতে হয়। সম্প্রতি তিনি পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছেন। আর দুধ নেই, ডিম নেই, কোনো পুষ্টিকর খাবার নেই; ফলে তার হাড় ভালো হচ্ছেই না।”
মাসব্যাপী অবরোধে দুর্ভিক্ষ
২ মার্চ গাজার সীমান্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। ফলে গাজায় প্রায় সব ধরনের সহায়তা ও পণ্য সরবরাহ- যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার, শিশুখাদ্য ও পানীয় জল বন্ধ হয়ে যায়।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইপিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাস পর্যন্ত গাজার প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছিল। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে গেছে, যার ফলে গাজার পুরো ২১ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের মুখে।
“সংকট শুরু হয়েছিল যখন দখলদার বাহিনী রমজানের শুরুতে ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেয় কিন্তু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয় দেড় মাস আগে, যখন আমাদের জমিয়ে রাখা খাদ্যও ফুরিয়ে যায়,” বলেন বশির।
“শেষ পর্যন্ত তো তা চিরদিনের জন্য চলতে পারে না। আমরা একটি পুরো পরিবার, যেখানে শিশুদের নিয়মিত খাবার প্রয়োজন। আর যত দীর্ঘসময় যাচ্ছে, ততই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে।”
জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সি বাসেম মুনির আল-হিন্নাওয়ি। তার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের তীব্র সংকট শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। গত এক মাসে তিনি ও তার পরিবার গড়ে প্রতি চার-পাঁচ দিন পরপর একবার রুটি খেতে পেরেছেন।
যুদ্ধের শুরুতেই বাবাকে হারানোর পর এখন তিনি দুই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি বলছিলেন, “এখন আমি আমার মা, বোনেরা, দুই ভাই, স্ত্রী এবং এক বছরের সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্বে।”
আল-হিন্নাওয়ি বলেন, “যেদিন রুটি পাই না, সেদিন আমি মাঝে মাঝে বাচ্চাদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য অল্প একটু শর্টব্রেড বিস্কুট কিনে দিই। আর যদি ডাল পাওয়া যায়, তখন আমরা ডালের স্যুপ রান্না করি।”
মানুষ ক্ষুধায় ভেঙে পড়ছে, ঢলে পড়ছে
হিন্নাওয়ি বলেন, অবরোধের শুরুর মাসগুলোতেই টানা ক্ষুধা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অপুষ্টিজনিত শারীরিক ধকল এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, তা আর সহ্য করার মতো নয়। তারা দুর্বল হয়ে পড়ছেন, মাথা ঘুরছে, স্বাভাবিক কাজকর্মও করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
“সাম্প্রতিক সময়ে আমি চরম ক্লান্তিতে ভুগছি, সহজে চলাফেরা করতে পারি না। আমার সবসময় মাথা ঘোরে এবং আমি ভীষণরকম কৃশকায় হয়ে গেছি। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমি ৩৯ কেজি ওজন হারিয়েছি। আমার ভাইবোনদের প্রত্যেকের ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজন কমে গেছে,” যোগ করেন তিনি।
“প্রতি কয়েকদিন পরপরই আমাদের আমার বোনকে হাসপাতালে নিতে হয়, কারণ অপুষ্টির কারণে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আর আমার স্ত্রী, যিনি এখনো স্তন্যদান করছেন, তিনি আরো চরম ক্লান্তি, মাথা ঘোরা ও দুর্বলতায় ভুগছেন। তিনি গৃহের সাধারণ কাজও আর সামাল দিতে পারেন না।”
যখন আল-হিন্নাওয়ি কোনোভাবে সামান্য খাবার জোগাড় করতে পারেন, তা শুধুই শিশুদের জন্য তুলে রাখেন। প্রাপ্তবয়স্করা কেবল পানি আর লবণ খেয়ে বেঁচে থাকেন।
“আমি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে পাঁচবার গিয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই খাবার না পেয়ে ফিরে এসেছি। সেখানে আমি চরম বিপদের মধ্যে পড়েছি, ট্যাংক আর কোয়াডকপ্টারের গুলির মুখোমুখিও হয়েছি,” স্মরণ করে বলেন তিনি।
আল-হিন্নাওয়ি বলেন, “প্রতিবারই আমি খালি হাতে ফিরে এসেছি। আল্লাহর কসম, এমন দিন গেছে যখন আমরা প্রাপ্তবয়স্করা টানা চার দিন কিছু না খেয়ে শুধু লবণগোলা পানি খেয়েই কাটিয়েছি,” যোগ করেন।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন আল-হিন্নাওয়ির মা। তিনি ২০ মিটার হাঁটতেও পারেন না; হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করলেই পড়ে যান।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধ ও অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ১২৭ জন শুধু অনাহারে ভুগে মারা গেছেন, যার মধ্যে অন্তত ৮৫ জন শিশু।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা অপুষ্টির ২৮ হাজারটিরও বেশি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি।
“আমরা প্রাপ্তবয়স্করা কখনো কখনো এই ক্ষুধা সহ্য করে নিতে পারি। কিন্তু একটা ছোট শিশু কীভাবে বুঝবে যে, আমাদের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখা হচ্ছে?” যোগ করেন হিন্নাওয়ি।
“তারা কীভাবে বুঝবে যে, তারা খাবার পাচ্ছে না; কারণ তাদের বাবা-মা চাচ্ছে না, যা সত্যও না।”
যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বাজার থেকে পুরোপুরি উধাও এবং পরিবারগুলো দিনের পর দিন খাদ্যের অভাবে কাটাচ্ছে, তখন গাজার রাস্তায় ক্ষুধা ও চরম ক্লান্তিতে মানুষের ঢলে পড়ার দৃশ্য দিন দিন আরো সাধারণ হয়ে উঠেছে।
“এই তো গতকাল, আমি শেখ রাদওয়ানে হাঁটছিলাম; যেখানে আমি এখন আশ্রয় নিয়েছি। একজন প্রায় ৪০-এর কোঠার নারী রাস্তার মাঝখানে ক্ষুধায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন,” বলছিলেন হিন্নাওয়ি।
দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার দেখা ঘটনার কথা স্মরণ করে হিন্নাওয়ি বলেন, “লোকেরা তাকে তুলে রাস্তার পাশে বসিয়ে রাখে। এরপর কোনো একজন তার বাড়ি থেকে সামান্য একটু চিনি নিয়ে আসে, যা এখন ভীষণভাবে দুর্লভ। চিনিটকু তাকে খাওয়ায়। ধীরে ধীরে তিনি জ্ঞান ফিরে পান ও উঠে দাঁড়ান। “মনুষ আসলেই বিধ্বস্ত। আর এভাবে চলতে পারে না।”
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণহত য ইসর য় ল য গ কর ন আল হ ন ন আম দ র পর ব র র জন য অবর ধ চরম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ