ট্রাম্পের মধ্যস্থতার পরও কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সংঘাত অব্যাহত
Published: 27th, July 2025 GMT
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার পরও গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার স্কটল্যান্ডে ব্যক্তিগত সফরের ফাঁকে ট্রাম্প দাবি করেন, দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে তিনি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও শান্তির জন্য চাপ দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, দুই দেশ দ্রুত বৈঠক করে যুদ্ধবিরতি ও চূড়ান্ত শান্তির পথে এগিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া ট্রাম্পের উদ্বেগ ও যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। কম্বোডিয়া ট্রাম্পের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জানান, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ বহু সেনা ও বেসামরিক মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন:
জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল একটি সাবানের সমান
যুক্তরাষ্ট্রে টেকঅফের ঠিক আগে বিমানের চাকায় আগুন
অন্যদিকে থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাইও ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে যুদ্ধবিরতির নীতিগত সমর্থন দিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, কম্বোডিয়ার আন্তরিকতা দেখতে হবে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান আসতে হবে।
তবে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বানে দুই দেশের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পরও শনিবার রাতভর সীমান্তে গোলাগুলি হয়েছে। কম্বোডিয়া অবশ্য আরো আগেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে; তাদের সামরিক বাহিনী থাইল্যান্ডের তুলনায় দুর্বল এবং থাই আর্টিলারি বোমাবর্ষণ ও বিমান হামলায় তারা যুদ্ধসরঞ্জাম হারাচ্ছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বেডিয়ায় ২৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৩৩ জন সেনা নিহত এবং হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। দেশ দুটি আগামী ১ আগস্টের মধ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে না পৌঁছালে আমেরিকার বাজারে ৩৬ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়বে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাণিজ্য আলোচনার সুযোগ নেই।
ট্রাম্প কীভাবে এই পরিস্থিতিতে জড়িত হয়েছেন তা স্পষ্ট নয়, কারণ মাত্র একদিন আগে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাংগিয়াম্পোংসা বলেছিলেন, “আমি মনে করি না আমাদের এখনও তৃতীয় কোনো দেশের মধ্যস্থতার প্রয়োজন।”
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এর আগে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে আলোচনা সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ দুটির মধ্যে মুয়েন থম মন্দির ও এর সংলগ্ন অঞ্চল ঘিরে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিবাদ হঠাৎ সংঘর্ষের চেহারা নেয় গত বৃহস্পতিবার। যুদ্ধবিমান, কামান, ট্যাংক নামিয়ে দুই দেশের স্থল বাহিনী মুখোমুখি যুদ্ধে নেমে পড়ে। উভয় দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রথমে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছে।
থাইল্যান্ডের দাবি, বৃহস্পতিবার সংঘর্ষ শুরু হয় কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্তে থাই বাহিনীর ওপর ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানোয়। তবে কম্বোডিয়ার অভিযোগ, থাই সেনারা পূর্বের এক চুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্তবর্তী একটি খেমার-হিন্দু মন্দির এলাকায় অগ্রসর হওয়ায় সংঘর্ষ শুরু হয়।
মূলত মে মাসের শেষদিকে এক কম্বোডিয় সেনার মৃত্যু ঘিরে সীমান্তে উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর থেকেই দুই দেশ সীমান্তে সেনা সংখ্যা ও অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াতে থাকে। তবে, দুই দেশের মধ্যে বিরোধ ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে চলে আসছে, যখন ফরাসিরা কম্বোডিয়া দখলের পর দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র কম ব ড য কম ব ড য়
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ