যন্ত্রণাগ্রস্ত শিল্পী এবং যন্ত্রণার উৎস
Published: 27th, July 2025 GMT
‘যন্ত্রণাগ্রস্ত শিল্পী’ বা ‘বিষণ্ন শিল্পী’—এ রকম কিছু তথাকথিত গতানুগতিক ধারণা আমাদের সবার মধ্যেই কমবেশি বাস করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভীষণ রোমান্টিক একটা ধারণা হয়ে আত্মপ্রকাশ করে যা প্রতিনিধিত্ব করে শিল্পের উৎস হিসেবে শিল্পীর মানসিক যন্ত্রণা, বিষণ্নতা বা বিষাদকে যা আত্মহত্যা প্রবণতা ও মৃত্যুচিন্তার অন্যতম প্রভাবক। এই গতানুগতিক ধারণা বা স্টেরিওটাইপ আমাদের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয় যে সত্যিই কি শিল্প ও যন্ত্রণা ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিংবা যন্ত্রণাই শিল্পের অন্যতম প্রধান উৎস?
এ সম্পর্ক অনুধাবনে কিছু কাজ আমরা বিবেচনায় আনতে পারি যার মধ্যে কে রেডফিল্ড জ্যামিসনের ‘টাচড উইথ ফায়ার: ম্যানিক ডিপ্রেসিভ ইলনেস অ্যান্ড দ্য আর্টিস্টিক টেমপারমেন্ট’ এবং উইলিয়াম টড শাল্টজ জ্যামিসনের ‘দ্য মাইন্ড অব দ্য আর্টিস্ট’ উল্লেখযোগ্য। রেডফিল্ডের বইয়ে তিনি মনোরোগবিদ্যাকেন্দ্রিক গবেষণা ও ব্যক্তিগত জীবনের ধরনের ওপর নির্ভর করে বাইপোলার ডিজঅর্ডার ও শিল্পসত্তার সংযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। আর শাল্টজের বইটি মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে কীভাবে ব্যক্তিসত্তা ও অমীমাংসিত মানসিক আঘাত শিল্পীদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা, মৃত্যুচিন্তাকে তীব্র করে, সেসব নিয়ে।
‘টাচড উইথ ফায়ার’ বইটিতে রেডফিল্ড দেখান, বাইপোলার ডিজঅর্ডার অনেক শিল্পীর মধ্যেই অস্বাভাবিক হারে দেখা যায়, বিশেষ করে কবি, চিত্রশিল্পী ও সুরকারদের মধ্যে। লর্ড বায়রন, ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ, সিলভিয়া প্লাথ প্রমুখের জীবন ও কর্ম বিশ্লেষণ করে তিনি তুলে ধরেন কীভাবে হাইপোম্যানিয়ার সময়কার উচ্ছ্বসিত ভাবনা, ঘুমের প্রয়োজন হ্রাস এবং উদ্ভাবনী শক্তি শিল্পকে তীব্রভাবে জাগিয়ে তোলে।
তবে এই পরিস্থিতি বা মানসিক অবস্থাকে রেডফিল্ড কখনোই গৌরবের বা প্রেরণার উৎস হিসেবে রোমান্টিক করে তোলেননি। বরং তিনি সতর্ক করে বলেন, চিকিৎসাহীন মানসিক রোগ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে যেমন একাকিত্ব, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, এমনকি আত্মহত্যাও। যেমনটি প্লাথের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাঁর উন্মাদনার মুহূর্তগুলোয় অসাধারণ সব কবিতা রচিত হয়েছে, কিন্তু বিষণ্নতা যখন চরমে পৌঁছেছে, তা আত্মঘাতী পরিণতির দিকেও ঠেলে দিয়েছে তাঁকে। রেডফিল্ড এই দ্বৈত অবস্থার মধ্যে একটি ভারসাম্য খোঁজেন যেখানে সৃষ্টিশীলতা অক্ষুণ্ন রাখা যায়, কিন্তু মানসিক যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অন্যদিকে, শাল্টজের ‘আর্ট অ্যান্ড সুইসাইড’ অধ্যায় মূলত ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য ও মানসিক আঘাতের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে। তিনি দেখান, উচ্চমাত্রার অভিজ্ঞতা গ্রহণের খোলামেলা মানসিকতা (openness), অনুভূতির ওঠানামা (neuroticism), এবং ট্রমার প্রতীকী পুনরাবৃত্তি—এই তিনটি বৈশিষ্ট্য অনেক আত্মহত্যাপ্রবণ শিল্পীর ভেতর সাধারণভাবে দেখা যায়। শাল্টজের মতে, অনেক শিল্পীর কাছে শিল্পচর্চা মানে তাঁদের অতীতের আঘাতগুলোকে প্রতীকীভাবে পুনরাবৃত্তি করা যার মাধ্যমে একদিকে তাঁরা তাঁদের ব্যথা ও যন্ত্রণা প্রকাশ করেন, আবার অন্যদিকে সেই যন্ত্রণার মধ্যেই আটকে পড়েন। যদি সেই মানসিক আঘাত কখনো সত্যিকারের নিরাময় না পায়, তবে শিল্পের মধ্য দিয়ে সেই যন্ত্রণা ফিরে ফিরে আসতে পারে এবং শেষমেশ আত্মধ্বংস বা আত্মহননের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
রেডফিল্ডের মতো শাল্টজও বিশ্বাস করেন না যে মানসিক যন্ত্রণা ছাড়া মহান শিল্প সম্ভব নয়। বরং তিনি মনে করেন, আত্মহত্যা একটি জৈবিক বা শিল্পগত অনিবার্যতা নয়, বরং জীবনের সংকট ও সহায়তার অভাবে ঘটে যাওয়া প্রতিক্রিয়া।
আরও পড়ুনদৃশ্যগত শিল্পসত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা১৮ মে ২০২৫সৃষ্টিশীলতা ও মানসিক যন্ত্রণা একে অপরের সঙ্গে জড়িত হলেও তা অপরিহার্য নয়। মানসিক বৈচিত্র্য ও শিল্পচর্চার মধ্যে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আত্মহত্যা কখনোই ‘শিল্পীর নিয়তি’ নয়। বরং এটি একধরনের সমাজিক ও মানসিক ব্যর্থতা যা প্রতিরোধযোগ্য।কে এস পবিত্র, সি আর চন্দ্রশেখর ও পার্থ চৌধুরী পরিচালিত গবেষণা ‘ক্রিয়েটিভিটি অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ: আ প্রোফাইল অব রাইটার্স অ্যান্ড মিউজিশিয়ান’-এ দেখা যায়, সৃষ্টিশীলতা ও মানসিক স্বাস্থ্য শুধু গল্প-কথার বিষয় নয় বরং এটি একটি জটিল আন্তসংযোগের প্রতিফলন। এই পর্যালোচনামূলক গবেষণায় ৪০ জন লেখক, ৪০ জন সংগীতশিল্পী আর ৪০ জন অসৃষ্টিশীল মানুষকে জিএইচকিউ ২৮, স্ক্যান (সাইকিয়াট্রিক মরবিডিটি), পারসিভড স্ট্রেস স্কেল, কপিং চেকলিস্ট ও এনইও এফএফআই পারসোনালিটি ইনভেনটরির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়েছিল যাতে দেখা যায়:
মানসিক রোগ ও স্ট্রেস প্রোফাইল: সৃষ্টিশীল (লেখক ও সংগীতশিল্পী) এবং ‘অসৃষ্টিশীল’ গোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক রোগের হার বা স্ট্রেস ব্যবস্থাপনার পার্থক্য নেই। যে কারণে আমরা বলতেই পারি যে সৃষ্টিশীলতা মানসিক রোগ নয় বা শিল্পী মানেই মানসিক রোগী নন।
কোপিং স্কিলস: লেখকদের মধ্যে ‘ধর্ম ও বিশ্বাস’নির্ভর সহায়তা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়, যা অন্য দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে তুলনামূলক ভিন্ন।
ব্যক্তিত্বমূলক বৈশিষ্ট্য: লেখক ও সংগীতশিল্পীরা একে অপরের তুলনায় প্রায় সমপরিমাণ উচ্চ সামঞ্জস্য (agreeableness), উচ্চ নিউরোটিসিজম (neuroticism) ও openness to experience স্কোর করেছেন, যা ‘অসৃষ্টিশীল’ ব্যক্তিদের তুলনায় ভিন্ন।
রেডফিল্ড, শাল্টজ এবং পবিত্র ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণাকে কেন্দ্র করে উপসংহার টেনে আমরা বলতেই পারি যে সৃষ্টিশীলতা ও মানসিক যন্ত্রণা একে অপরের সঙ্গে জড়িত হলেও তা অপরিহার্য নয়। তাঁদের মতে, মানসিক বৈচিত্র্য ও শিল্পচর্চার মধ্যে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আত্মহত্যা কখনোই ‘শিল্পীর নিয়তি’ নয়। বরং এটি একধরনের সমাজিক ও মানসিক ব্যর্থতা যা প্রতিরোধযোগ্য।
রেডফিল্ড যেমন চিকিৎসা, লিথিয়াম, থেরাপি ও সচেতনতাকে উৎসাহ দেন, তেমনি শাল্টজ অর্থ খোঁজার ক্ষমতা, সহনশীলতা ও মানসিক নিয়ন্ত্রণকে আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে দেখেন। উভয়ের লেখাতেই একটি আশাবাদী বার্তা আমরা দেখতে পাই। শিল্পী বেঁচে থাকলে শিল্প বাঁচে এবং শিল্পীর সৃষ্টিশীলতাও অক্ষুণ্ন থাকে, যদি আমরা তাঁকে বুঝি এবং সাহায্য করি।
শিল্প ও মানসিক অসুস্থতার সংযোগ ভীষণ জটিল ও গবেষণার উদ্বেগ ঘটায়। খুব স্পষ্টভাবেই বলা যায় সৃষ্টিশীল গোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক রোগ থাকবেই এই ধারণা ভুল, কারণ মানসিক রোগের হারে অন্যদের সঙ্গে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তথাপি, ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমেই সম্ভাব্য ঝুঁকি বোঝা যায়। একই সঙ্গে, স্নায়ুবৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক নান্দনিক বিশ্লেষণ আমাদের জানায় যে আবেগ, কল্পনা ও মানসিক প্রক্রিয়া একজোড়ে কাজ করে সৃষ্টিশীলতাকে এবং কখনো কখনো মানসিক অসুস্থতাকে প্রণোদিত করে।
এই সব দৃষ্টিভঙ্গিকে একত্র করলে বোঝা যায় যে সৃষ্টিশীলতার চর্চা যতটা জীবনীমূলক ও মানসিক উৎসাহের, ঠিক ততটাই সতর্কতার দাবি রাখে। এ জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল সম্প্রদায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা, সমর্থন ব্যবস্থা এবং কোপিং স্ট্র্যাটেজি মূল্যায়ন, যাতে শিল্পী শুধু প্রতিভাবানই না থেকে সংকট-স্বাস্থ্যের প্রতিরোধ শক্তিশালী মানুষ হিসেবেও বিকশিত হতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎস হ
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের ‘৯৯৬’ ছড়িয়ে পড়ছে সিলিকন ভ্যালিতে, আপনি কী করবেন
‘৯টা থেকে ৫টা’ পর্যন্ত কাজ করাকে সাধারণ জীবিকা উপার্জনের উপায় বলা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে এখন প্রতিযোগিতামূলক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হলে ‘৯৯৬’ কাজ করতে হয়। অন্তত আশপাশের মানুষকে দেখাতে হয় যে আপনি কাজটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
‘৯৯৬’ মানে হচ্ছে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করা। এ ধারার যাত্রা শুরু হয় চীনের কঠিন পরিশ্রমী টেক ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ২০২১ সালে চীনের একটি উচ্চ আদালত কোম্পানিগুলোকে ৭২ ঘণ্টার কাজের সপ্তাহ চাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তবু ক্যালিফোর্নিয়ার টেক কর্মীরা এই ধারণাটিকে আঁকড়ে ধরে আছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এক্স আর লিংকডইনে এটি নিয়ে অবিরত পোস্ট করে যাছে।
আরও পড়ুনএআই বাড়াচ্ছে কাজের চাপ, চীনের ‘৯৯৬’ সংস্কৃতি কি ফিরছে১২ অক্টোবর ২০২৫এখনো এর প্রমাণ মূলত গল্প-গুজব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সীমিত। তবে কিছু কোম্পানি চাকরির বিজ্ঞাপনে কর্মী ৭০ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন সপ্তাহে—এই প্রত্যাশা স্পষ্ট করা থাকছে। শোনা যাচ্ছে, নির্বাহীরা চাকরিপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসা করছেন, তাঁরা কি এ ধরনের সময়সূচি মানতে রাজি। আর ‘র্যাম্প’ নামের একটি ফাইনান্সিয়াল অপারেশন স্টার্টআপ এক ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে, এ বছরের প্রথমভাগে সান ফ্রান্সিসকোতে শনিবারের দিনে করপোরেট ক্রেডিট কার্ড লেনদেন বেড়েছে, যেটি তারা ধরে নিয়েছে, মানুষ বেশি উইকেন্ডেও কাজ করছেন।
যদিও সিলিকন ভ্যালির জন্য শব্দটি নতুন, ৯৯৬ আসলে বহুদিনের চর্চার এক তীব্র সংস্করণ। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ মার্গারেট ও’মারা, যিনি ‘দ্য কোড: সিলিকন ভ্যালি অ্যান্ড দ্য রিমার্কিং অব আমেরিকা’ বইয়ের লেখক, বলছেন, ১৯৬০ সাল থেকেই যখন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো তীব্র প্রতিযোগিতায় ছিল, তখন থেকেই অনেক টেক কোম্পানির কঠোর, দীর্ঘ সময় কাজ করার সংস্কৃতি ছিল। বাইরে থেকে তারা ছিল ‘ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাজুয়াল’ কিন্তু ভেতরে ‘পুরোনো দিনের কর্মপাগল’।
বার্কলের সমাজবিজ্ঞানী ক্যারোলিন চেন। তিনি ‘ওয়ার্ক প্রে কোড’ বইয়ের লেখক। তিনি বলেন, টেক কর্মীদের একধরনের তীব্র, প্রায় ধর্মীয় ভক্তিভরে কাজ করার মানসিকতা সিলিকন ভ্যালির সংস্কৃতির অংশ। তিনি আরও বলেন, টেকে একধরনের ‘নায়কোচিত পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ আছে, যা সবার কাছেই সব সময় কাজ করার প্রত্যাশা তৈরি করে।
মার্গারেট ও’মারা মনে করেন, এই হ্যাস্টল কালচার যাদের পরিবার বা অন্য দায়িত্ব আছে, তাদের নাগালের বাইরে এবং এটি এমনিতেই একরঙা (কম বৈচিত্র্যময়) শিল্প খাতকে আরও সংকীর্ণ করে তুলতে পারে। তবে যারা বড় কোনো আইডিয়ায় প্রথমেই ঢুকে পড়তে পেরেছে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে রাজি ও সক্ষম, তাদের জন্য পুরস্কার বিশাল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এখন যেভাবে বিপুল বিনিয়োগ আসছে, তা ভবিষ্যতের সম্পদকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। একই সময়ে টেক কর্মীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি অনিরাপদ বোধ করছেন।
কয়েক বছরের ছাঁটাই, উচ্চ সুদের হার আর অনিশ্চিত মুনাফার পরে টেক ইন্ডাস্ট্রি—যা একসময় দারুণ বেনিফিটের জন্য পরিচিত ছিল—এখন কড়াকড়ি চালু করেছে। ইলন মাস্কের নিজেকে ঘোষিত ‘অত্যন্ত কঠোর’ কাজের ধরন এখন আর পুরো ইন্ডাস্ট্রি থেকে আলাদা নয়। সিলিকন ভ্যালিতে এখন ‘হার্ড টেক’ যুগ চলছে, আর পাগলের মতো কাজ করা (অথবা অন্তত এমনভাবে কাজের কথা বলা) হয়ে উঠেছে নতুন নিয়ম।
ও’মারা বলেন, ২০২০ সালের সিলিকন ভ্যালি আর ২০২৫ সালের সিলিকন ভ্যালির অগ্রাধিকার ভিন্ন।
অতিরিক্ত কাজে মানবিক ক্ষতি
অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার মানবিক ক্ষতি প্রমাণিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করলে ৩৫ শতাংশ বেশি স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয় এবং ১৭ শতাংশ বেশি হৃদ্রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত কাজের ফলে কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং সৃজনশীলতা হ্রাস পায়।
ব্যবসার জন্যও ক্ষতিকর ‘৯৯৬’
কোম্পানিগুলো মনে করতে পারে, ৭০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, কিন্তু গবেষণা বলছে, উল্টো কথা। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জন পেনক্যাভেল দেখিয়েছেন, সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার পর উৎপাদনশীলতা দ্রুত কমতে থাকে। সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের উৎপাদন প্রায় ৫৫ ঘণ্টা কাজ করা কর্মীদের সমান, অর্থাৎ বাড়তি পরিশ্রম কোনো ফল দেয় না।
কর্মীদের করণীয়: সচেতনতা ও আত্মরক্ষা
এই সংস্কৃতি অর্থাৎ সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টার কর্মসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ার আগেই কর্মীদের সচেতন হওয়া জরুরি।
১. সতর্ক থাকুন
চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে যদি ‘২৪/৭ উপস্থিতি’ বা ‘অসীম প্রাপ্যতা’র উল্লেখ থাকে, সাবধান হোন। সাক্ষাৎকারে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন সাপ্তাহিক গড় কাজের সময় ও ওভারটাইম নিয়ে।
২. আইনি অধিকার সম্পর্কে জানুন
আপনি আওয়ারলি (ঘণ্টা অনুযায়ী) নাকি এক্সেম্পট (ওভারটাইম ছাড়া স্থায়ী বেতনভুক্ত), তা বুঝুন।
৩. সীমানা নির্ধারণ করুন
নিজের কাজের সময় নথিবদ্ধ করুন, ছুটি (পিপিও) অবশ্যই ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত কাজের সময়ের বাইরে প্রাপ্যতার বিষয়ে স্পষ্ট যোগাযোগ রাখুন।
দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থাকার কৌশল: বেশি নয়, স্মার্ট কাজ
চীনের ৯৯৬ অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, অতিরিক্ত কাজ স্বল্প মেয়াদে ফল দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ভালো ফল আনে না। কর্মীর চাকরি ছেড়ে দেওয়া, উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
স্মার্ট কোম্পানিগুলো এখন এআইকে ব্যবহার করছে মানুষের কাজের চাপ কমাতে, যাতে কর্মীরা সৃজনশীল ও কৌশলগত কাজে মনোযোগ দিতে পারেন সীমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ সময়ের মধ্যে। যেসব প্রতিষ্ঠান ফ্লেক্সিবল কাজের সুযোগ, সত্যিকারের ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স এবং টেকসই ক্যারিয়ার তৈরি করছে, তারা এখন প্রতিভাবান কর্মী নিয়োগে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ফোর্বস