নভেম্বর ১৯৯৬। দৈনিক সংবাদ পত্রিকার স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ডা. নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর ভাইয়ের আমন্ত্রণে পত্রিকাটির তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাতার সম্পাদক ফরহাদ মাহমুদ, পক্ষীবিদ শরীফ খান, আলোকচিত্রী শিহাব উদ্দিনকে নিয়ে রাতের ট্রেনে শ্রীমঙ্গল রওনা হলাম। ভোর চারটায় শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে পৌঁছে দেখি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গাড়ি অপেক্ষা করছে। নুরুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক। শীত শীত ভোরে রেস্টহাউসে উঠেই যার যার বিছানায় কম্বলের নিচে ঢুকে পড়লাম।
সকালে জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সঙ্গে নাশতা সেরে ইনস্টিটিউট ও আশপাশের চা-বাগানে পাখি-প্রাণীর ছবি তুলে কাটালাম। পরদিন সকালে শীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা দেখে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গেলাম। শেষ দিন অর্থাৎ ১১ নভেম্বর গেলাম হাইল হাওরে পরিযায়ী হাঁসের খোঁজে। দুটি কোষা নৌকায় দুজন করে চারজন। সারাটা দিন বাইক্কা বিলসহ হাওরের বিভিন্ন বিলে ঘুরলাম হাঁস-রাজহাঁসের খোঁজে। যদিও সে সময় আমার কাছে ছিল না কোনো ডিজিটাল বা মিররলেস ক্যামেরা। ২০০ মিমি টেলিলেন্সসহ জেনিট ফিল্ম ক্যামেরাই ভরসা। কাজেই ক্যামেরায় যত না ছবি তুলেছি, তার চেয়ে মনের মধ্যে ছবি এঁকেছি বেশি। যাহোক, বেশ দূর থেকে দুর্লভ ধূসর রাজহাঁসের পানির ওপর দিয়ে দৌড়ে আকাশে ওড়ার কয়েকটি ছবি তুললাম।
শাপল-শালুক-পদ্মপাতা ও জলজ লতাগুল্ম কেটে নৌকা এগিয়ে চলেছে। হঠাৎ দেখি আমার ঠিক সামনে একটি কানিবক (পন্ড হিরন) পদ্মপাতার ওপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নৌকা ওর বেশ কাছে চলে এসেছে। কিন্তু সে নিশ্চল। দ্রুত দুটি ক্লিক করলাম। নৌকা বকটির একদম কাছে চলে এলেও যখন সে নড়ল না, তখন বুঝতে পারলাম ও নিশ্চয় ফাঁদে আটকেছে।
গাজীপুরের বেলাই বিলে টাকি মাছসহ উদ্ধার করা বক ধরার ফাঁদ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’