তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে আবার জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ডুবে গেছে শহরের অনেক সড়ক। পানি জমেছে বাসাবাড়ির আঙিনায়ও। এতে নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা।

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় মাইজদীতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, উপকূলীয় এলাকায় মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আরও বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

আজ বিকেল চারটায় জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, আদালত সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক, জেলা শিল্পকলা একাডেমি সড়ক ও সরকারি মহিলা কলেজ সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। জেলা জজ আদালত ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হন।

সরু নালার কারণে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না বলে অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেন। লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার জোবায়ের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় যে কটি নালা রয়েছে, প্রতিটি সরু। নামমাত্র নালা করা হয়েছে। নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় না। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই নালার ময়লা পানি উপচে আশপাশের সড়কে ও বাসাবাড়ির আঙিনায় ঢুকে পড়ে। বর্ষা শুরুর পর থেকেই নালার পানি মাড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে।

এদিকে শহরের টাউন হল মোড়সংলগ্ন সরকারি আবাসিক এলাকায় চলাচলের সড়কটি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডুবে আছে। সড়কের দুই পাশের নালা উঁচু হওয়ায় সড়কটিতে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। এতে সড়কের দুই পাশের প্রায় ৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী, একটি জামে মসজিদের মুসল্লি প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সড়ক দিয়ে আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্য, শহরের কৃষ্ণরামপুর এলাকাসহ অন্যান্য এলাকার মানুষজন চলাচল করেন। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বছরের পর বছর সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকা খুবই দুঃখজনক। অল্প বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে থাকার কারণে দোকানে ক্রেতারাও আসতে পারেন না।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পানি নিষ্কাশনের নালাগুলোতে পানির প্রবাহ ঠিক নেই। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই নালাগুলো উপচে আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি করে। তবে জেলার জলাবদ্ধতা দূর করতে এক যোগে নয়টি উপজেলায় খাল পরিষ্কার এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অল প ব ষ ট ত এল ক য় ম ইজদ শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ